ইতিহাস গড়া আন্দোলনেও পরিবর্তন হলো না রাজধানীর চিত্র!

ই-বার্তা।। আগের মতোই যত্রতত্র যাত্রী তোলা, রেষারেষি সবই চলছে । মালিকদের ঘোষণা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো । লক্কড়ঝক্কড় বাসের ফিটনেস সনদ থাকায় পুলিশ আটকাতে পারছে না । পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে মামলার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।

 

সেই আগের অবস্থা রাজধানীর সড়কে। আগে যাওয়া নিয়ে বাসের রেষারেষি, মাঝখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা, যত্রতত্র থামানো, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার- সবই চলছে। ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেও ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় বাস রাস্তায় দেখা গেছে। অপরদিকে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে পথচারী পারাপারের প্রবণতাও আছে আগের মতোই। উল্টোপথে বা ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙে গাড়ি চালানোর ঘটনাও থেমে নেই। অথচ ৫ দিন আগে শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে ছিল, তখন রাজধানীজুড়ে ছিল ভিন্ন চিত্র।

 

নিয়ম মানার প্রবণতা তৈরি করেছিল শিক্ষার্থীরা। তারা ক্লাসে ফিরে যাওয়ার পর সড়কে সেই আগের বিশৃঙ্খলাই ফিরে আসছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় হাইকোর্টের মোড়ে দেখা যায়, সিগন্যাল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারটি বাসের মধ্যে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআরটিসিরই দুটি বাসের মধ্যে আগে যাওয়া নিয়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। এ নিয়ে দুই বাসের চালকদের মধ্যে তর্কও হয়। এ সময় পেছনে থাকা অন্য বাসগুলো বিকট শব্দে হর্ন বাজাতে থাকে। শিক্ষা ভবনমুখী সড়কের আইল্যান্ডে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে একজন সার্জেন্ট দুটি বাসের রেষারেষির এ দৃশ্য দেখিয়ে বলেন, এভাবেই দুই বাসের প্রতিযোগিতা ও ঘষাঘষিতে প্রথমে হাত হারায় কলেজছাত্র রাজিব।

 

পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ফার্মগেট, পল্টন, কুড়িলসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা যায় আগের মতোই রেষারেষি করে বাস চলছে। বেশি যাত্রী পেতে একটি বাস আরেকটি বাসের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিও করছে। পুলিশের সামনেই ভাঙাচোরা বাসও চলাচল করছে। শুধু তা-ই নয়, সিটিং সার্ভিসের নামে যেসব গাড়ি চলে সেগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে। এসব দেখে হতাশার কথা জানান সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সড়ক নিরাপত্তাকর্মী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। তারা বলেন, শিশুদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সবার মনে ধাক্কা দিয়েছে।

 

আন্দোলন চলাকালে সবার চেতনায় শানিত ভাব লক্ষ করা যায়, কিন্তু কয়েক দিনেই যেন তা ভোঁতা হয়ে যেতে শুরু করেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একেবারেই হতাশ নন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। সমাজচিন্তক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুদের আন্দোলনে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লাভ হয়েছে। সবচেয়ে বড় লাভ হয়েছে, তারা যে জেগে আছে, সে বার্তা। এদেশ নিয়ে বড়দের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে দিয়েছে তারা। বাচ্চারা বড়দের কাজ করে ক্লাসে ফিরে গেছে। এখন বড়দের প্রত্যয় নিয়ে বাচ্চাদের চিন্তা ধার করে বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়কে দিন দিন আগের পরিস্থিতি ফিরছে- এমন মন্তব্য আমি করব না। কেননা চালকদের আগের চেয়ে সচেতন মনে হচ্ছে।

 

আগের মতো পাগলাটে প্রতিযোগিতা নেই। তবে যেটুকু বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে, সেটা বাড়তে না দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। পাশাপাশি মালিকরা অতিমুনাফার চিন্তা বাদ দিলে আর শ্রমিকরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে পরিবহন খাতে সমস্যা একসময় দূর হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিশুদের মুখে উঠে আসা দাবিগুলো এদেশের গণমানুষেরই দাবি। তারা শুধু দাবি তুলেই ক্ষান্ত হয়নি, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কী করে আইন বাস্তবায়ন করতে হয়। শিশুরা তাদের স্বপ্নের কথা জানিয়ে দিয়ে গেছে।

 

জাতি ও দেশের প্রতি তাদের আস্থা ও শ্রদ্ধা অটুট রাখতে এখন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কী করতে হবে, সেটা সরকার জানে। সড়কে আগের সেই চিত্র ফিরে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে হাইকোর্ট মোড়ে কর্মরত পুলিশের এসআই মেহেদী ও কুড়িলে কর্মরত এএসআই আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘ফিটনেস সনদ থাকলে এসব গাড়ি আমরা জব্দ করতে পারি না। তবে বিভিন্ন ত্র“টির কারণে মামলা দিচ্ছি। আসলে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে সকলের সচেতনতা দরকার।

 

 

ই-বার্তা/ডেস্ক রিপোর্ট