ভোট গ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে গণনা। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধে উত্তাপ ছড়ালেও দলীয় প্রতীকে প্রথম নির্বাচন নির্বিঘ্নেই শেষ হয়েছে।

নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে খুলনার চার লাখ ৯৩ হাজার ভোটার মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটাধিকার প্রদান করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাত মাস আগে এ নির্বাচনকে ঘিরে সব মহলের নজর এখন খুলনায়। এর আগে সোমবার নির্বাচনী মালামাল সব ভোট কেন্দ্রে পৌঁছায়। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

প্রার্থী, ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছেন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সোমবার রাতে বিভিন্ন কেন্দ্রে সরেজমিন ঘুরে খোঁজখবর নিয়েছেন ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা।

ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যেকোনো মূল্যে খুলনা সিটি নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের নির্দেশনা দেয় ইসি।

সোমবার সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ি সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষকরা বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক টিমের প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল বাতেন যুগান্তরকে বলেন, ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট ও ব্যালট বক্স পরীক্ষা করেছি। ভোটের দিন কোনো কেন্দ্রে সহিংসতা হলে তা বন্ধ করে দেয়া হবে।

এবার খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন, সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ডে ১৪৮ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৮ জন নারী কাউন্সিলরসহ ১৯১ জন প্রার্থী রয়েছেন। যদিও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের মাঝপথে তিন কাউন্সিলর প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

৪৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ নগরীতে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৮৯টি ও ভোটকক্ষ ১ হাজার ৫৬১টি। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন, যার মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন ও নারী ভোটার দুই লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন।

খুলনা সিটি নির্বাচনে সাড়ে নয় হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি সোনালী সেন। তিনি বলেন, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

জানা গেছে, ভোটের দিন সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পুলিশের তিন হাজার ৪৩৭ জন, ব্যাটালিয়ন আনসারের ৮১৯ জন, অঙ্গীভূত আনসার চার হাজার ৪৬ জন, এপিবিএন ৩০০ জন, বিজিবি ৫১২ জন ও র‌্যাবের ২৬৪ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ ২৩৪টি ভোট কেন্দ্রের পাহারায় ২৪ জন সদস্য ছিলেন। এছাড়া সাধারণ ভোট কেন্দ্রের পাহারায় ২২ জন রাখা হয়। প্রতি ৪-৫টি কেন্দ্রের জন্য একটি মোবাইল টিম মাঠে ছিল।

ভোট কেন্দ্রের আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ১২টি স্ট্যাটিক পয়েন্ট (পিকেট) চিহ্নিত করা হয়। ভোটারদের যাতায়াতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়। যেসব ভোট কেন্দ্রে গাড়ি যাতায়াতের পথ সুগম নয়, সেখানে মোটরসাইকেলে মোবাইল টিম ছিল।

ভোটার সচেতন এবং শিক্ষিত ও শহরকেন্দ্রিক ২৪ ও ২৭নং ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট নেয়া হয়েছে।আর ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিবেচনায় সিটির তিনটি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার সহায়তায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন, যার মধ্যে বিএল কলেজ কেন্দ্র, পিটিআই কেন্দ্র এবং পাইওনিয়র কলেজ কেন্দ্র।

ভোটারদের গতিবিধি ও ভোট গ্রহণ কার্যক্রম ওই ক্যামেরার সাহায্যে অবলোকন করে কমিশন। এসব প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য আইটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়।

এ নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার (ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চার হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ২৮৯ জন, প্রতিটি কক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ১৫৬১ জন এবং প্রতিটি কক্ষে দুইজন পোলিং অফিসার হিসেবে ৩১২২ জন। ভোটার শনাক্ত এবং ব্যালট দিয়ে ভোট কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এসব কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।