সৌদি যুবরাজের ইয়েমেনি মুসলিমদের উপর বর্বর এ হামলা বন্ধ হবে?

ই-বার্তা।। সারি সারি কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছোট ছোট কবর। ইয়েমেনের সাদায় স্কুলবাসে বিমান হামলায় নিহত নিষ্পাপ শিশুদের জন্য এই কবর। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই ছবি বিশ্বের হৃদয়বান মানুষের বুকে গিয়ে লেগেছে। 

 

গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা। হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত সাদা প্রদেশে একটি স্কুলবাসে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট বিমান হামলা চালায়। রেডক্রস বলছে, হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৯ জনই শিশু। এই শিশুদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। আহত হয়েছে ৪০ জন। তাদের মধ্যেও ৩০ জন শিশু। অন্যদিকে, হুতি বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ৫১। তার মধ্যে ৪০ জন শিশু। আর আহত ৭৯ জন। ঘটনার পরপরই হামলার পদক্ষেপকে ‘বৈধ ব্যবস্থা’ বলে বর্ণনা করে সৌদি জোট। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার মুখে সৌদি জোট আগের অবস্থান থেকে সরে আসে। তারা হামলার ঘটনাটি তদন্তের ঘোষণা দেয়।

 

আরব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেনে মৃত্যু মৃত্যু খেলা নতুন নয়। দেশটিতে বেশ কয়েক বছর ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে। আরব বসন্তের জেরে ২০১১ সালে ইয়েমেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ তাঁর ডেপুটি মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। দায়িত্ব নিয়ে মানসুর হাদি নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল আল-কায়েদার হামলা, দক্ষিণে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা, সালেহর প্রতি অনেক সেনা কর্মকর্তার আনুগত্য। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছিল দুর্নীতি, বেকারত্ব, খাদ্য-সংকটের মতো সমস্যা। ইয়েমেনে সৌদি জোটের সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

 

ইয়েমেনে সৌদি জোটের সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিম হুতিরা বহু আগে থেকেই বিদ্রোহী তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। নতুন প্রেসিডেন্টের দুর্বলতার সুযোগে তারা তাদের উত্তরাঞ্চলীয় শক্ত ঘাঁটি সাদা প্রদেশসহ আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। মোহভঙ্গ হওয়ায় ইয়েমেনের অনেক সাধারণ মানুষও হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়। তাদের মধ্যে সুন্নিরাও ছিল। ২০১৪ সালের শেষ ভাগ ও ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুতিরা রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নেয়। প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদি পালিয়ে দক্ষিণের বন্দর নগরী এডেনে যান।

 

হুতিদের সঙ্গে হাত মেলায় সালেহর অনুগত সেনারা। তারা পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপর হয়। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এডেনের পথে তারা অগ্রসর হতে থাকে। বাধ্য হয়ে ২০১৫ সালের মার্চে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদি। এ অবস্থায় সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে। হুতি বিদ্রোহী ও মানসুর হাদির সমর্থকদের মধ্যে চলা সংঘাতে নতুন মাত্রা যুক্ত করে সৌদি জোটের সামরিক হস্তক্ষেপ।

 

হুতিদের নির্মূলের মাধ্যমে ইয়েমেনে মানসুর হাদির বৈধ সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই সামরিক অভিযানের লক্ষ্য বলে দাবি সৌদি জোটের। এই লক্ষ্যে প্রায় তিন বছর ধরে ইয়েমেনে নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে তারা। ইয়েমেনে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সৌদি আরব মুখে যা-ই বলুক না কেন, তাদের আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন। আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের শত্রুতার বলি এখনকার ইয়েমেন। ইয়েমেনের শিয়াপন্থী হুতি বিদ্রোহীরা ইরান-সমর্থিত। হুতিদের ইরানের ঢাল হিসেবে দেখে আসছে সৌদি আরব। ইয়েমেনে হুতিদের বিজয় মানে ইরানেরই বিজয়—এই ধারণা থেকে তাড়াহুড়া করে সামরিক অভিযানে গেছে রিয়াদ। তারা যেকোনো মূল্যে ইয়েমেনে ইরানের প্রভাব নস্যাৎ করতে বদ্ধপরিকর।

 

 

ই-বার্তা/ডেস্ক রিপোর্ট