রবীন্দ্র সরোবরে নবান্ন মেলা


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১৯শে নভেম্বর ২০১৭, রবিবার  | দুপুর ০১:৫৬ দেশ

আফিফা মোহসিনা অরণি।। পিঠাপুলির বাংলাদেশে প্রতি বছর ফসল কাটার পরে কৃষকের ঘরে ঘরে লেগে যেত উৎসবের ধুম। সাধারণত আমন ধান ঘরে তোলার পর কৃষকেরা নবান্ন উৎসব পালন করতো। নতুন ধান বা নব অন্নের উৎসব বলেই একে নবান্ন বলা হয়। নবান্ন উৎসব বছরের বিভিন্ন সময় হতো। কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় নবান্ন উৎসবের প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশ হেমন্তকালে নবান্ন উৎসব পালন করা হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। যদিও এখন কমে গেছে এই উৎসবের আয়োজন। ঢেঁকিতে নতুন ধান ভেঙে পিঠা পায়েস রান্নায় ব্যস্ত থাকে ঘরের গৃহিণী। ছোট বড় সবাই মিলে দল বেঁধে ছুটে যায় নবান্ন মেলায়। বছরের এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি নাইয়র আসতো। নাইয়র মানে মেহমান বাড়িতে বেড়াতে আসা। কৃষকের ঘর ভরে উঠতো খুশিতে। এই উৎসবকে ধরে রাখা ও মনে রাখার জন্যই প্রাণ চিনিগুড়া চাল আয়োজন করছে ৩দিন ব্যাপী নবান্নের বিশেষ অনুষ্ঠানের। গত ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর এই তিনদিন ব্যপী ধানমন্ডীর রবীন্দ্র সরবোরে আয়োজিত হয়েছে নবান্ন মেলা।

নবান্নের খুশি শহরবাসীর মাঝে ছড়িয়ে দিতে “নবান্ন উৎসব ১৪২৪” নামের অনুষ্ঠানে সবার জন্য ছিলো বিভিন্ন রকমের আয়োজন। ছিলো বাহারী পিঠাপুলির স্টল। শুধু ঢাকাবাসী নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এসে তাঁদের ঐতহ্যবাহী পিঠা সাজিয়ে বসেছিলো স্টলে। যশোর, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, সোনারগাঁ আরোও অনেক স্থানের স্টল দেখা গিয়েছে মেলায়। আর প্রতিটি স্টলে ছিলো মানুষের ঢল। মজার মজার দৃষ্টিনন্দন ও লোভনীয় পিঠার স্বাদ নিতে ব্যস্ত ছিলো উপভোগকারীরা। ডিম চিতই, পাটিসাপটা, বধু বরন, ঝাল পিঠা, দুধপুলি, ভাপা পিঠা, খোলা চিতই, কুলি পিঠা, ছানার পুলি, পাকান পিঠা, গোলাপফুল পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, বিন্নি ধানের পায়েস, কলার পিঠা, ইলিশ পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, আমিত্তি, নকশী পিঠা,


তালের পিঠা, নারকেল নাড়ু, তিলের মোয়া, চিরার পোলাও, মুরালি, ছিট রুটি আরো নানান পিঠা দিয়ে ভরে ছিলো স্টলগুলো। উৎসবে যোগ দেয়া সাধারণ মানুষদের অবস্থা ছিলো কোনটা ছেড়ে কোনটা খাই- এরকম। অনেকেই আবার প্যাকেট ভরে বাড়ির জন্যেও নিয়ে নিচ্ছিলো পিঠা। নবান্ন উৎসব উপভোগ করতে আসা দর্শক সিহাব বলেন, “এখন পর্যন্ত ছয় রকম পিঠা খেয়েছি, বাসার জন্য পাটিসাপটা নিয়েছি। আরো দেখছি কোনটা কোনটা খাওয়া যায়”।

রবীন্দ্র সরবোরের মাঝামাঝি বায়োস্কোপ, সাপের খেলা, বানরের খেলা দেখতে ভিড় জমিয়েছিলো ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। বায়োস্কপ দেখে আসা ছোট্ট শিশু মুনতাহা বলেন, “খুব মজা লেগেছে। সাপের খেলা দেখেছি, বানরের খেলা দেখেছি। পিঠা খেয়েছি”। আর এক কোণায় নাগরদোলায় উঠার বিশাল লাইন চোখে পড়ার মতো। রঙিন চুরি-মালা ও খেলনা নিয়ে হকাররাও বসেছিলো মহা আনন্দে। যেন পুরোদস্তুর এক গ্রাম্য মেলা। অন্যদিকে মঞ্চে পরিবেশিত হচ্ছিলো নবান্নের গান, আবৃত্তি, নৃত্য। বাউকুমটা বাতাস, দে দে পাল তুলে দে, নবান্নতে রইলো বন্ধু তোমার নিমন্ত্রন আরো অনেক ঐতিহ্যবাহী আঞ্চলিক গানে মুখরিতো হয়ে ছিলো ধানমন্ডী লেকের রবীন্দ্র সরোবর। যেন কিছু সময়ের জন্য মানুষ ভূলে ছিলো ইট-কাঠ পাথরের যান্ত্রিক শহরকে। গোল করে দর্শকেরা বসে উপভোগ করছিলো সেই মনোরোম অনুষ্ঠান। পরিবারের সাথে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসা রওশন আরা বলেন, “বাচ্চাদের মেলা দেখাতে নিয়ে এসেছি। আমাদের ছোটবেলায় এরকম মেলা তো অনেক হতো কিন্তু এখন আর হয়না। তাই খুব ভালো লাগছে নবান্ন মেলায় এসে”। নবান্নের খুদে ছবি আঁকিয়েদের পুরষ্কৃত করা হয় অনুষ্ঠানের শেষ দিন।

বাংলাদেশের নবান্ন মেলা, বৈশাখী মেলা এগুলো যেন এদেশের প্রাণ। তাইতো এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে আমাদের সকলকে। কৃষকের নতুন ধান কাটার আনন্দ ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ এর আরও সংবাদ