রহস্যময় রাক্ষুসে গুহা


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২২শে নভেম্বর ২০১৭, বুধবার  | বিকাল ০৫:০৬ আন্তর্জাতিক

ই-বার্তা ডেস্ক।। মানুষ খেকো প্রাণীদের স্বভাবতই মানুষেরা ভয় পেয়ে থাকে। তাইতো চিড়িয়াখানায় খাঁচার ভিতরে থাকলেও মানুষ কাছে যে ভয় পায় বাঘ, ভালুক বা সিংহের কাছে। আর গহীন জঙ্গলের কথা শুনলেই আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হওয়ার যোগার হয় আমাদের। তবে এমন যদি কখনো শোনেন যে একটি গুহা আস্ত মানুষ খেয়ে ফেলে তাহলে কেমন হবে আপনার অনুভূতি?

শুনেই হয়তো বিরক্তিতে আপনার ভুরু কুঁচকে যাবে। ভাবছেন গুহা কিভাবে মানুষ খায়? আসলেই তাই। খায় বলতে মানুষ চিবিয়ে খেতে তো কেউ কখন দেখেনি, তবে এমনই এক গুহার সন্ধান মিলেছে বর্তমান পশ্চিম তুর্কির পাযুক্কাল শহরে, যা পূর্বে প্রাচীন গ্রিক শহর হিয়ারাপোলিসে নামে পরিচিত ছিলো। সেখানে একবার কেউ প্রবেশ করলে আর ফিরে আসেনা। শুধু মানুষ কেন, অন্য কোনো প্রাণীও ফিরে আসেনি কখনো। প্রায় দুই হাজার বছর আগে অবাক করা এই তথ্য নিজের পুঁথিতে লিখে রেখেছেন একজন গ্রিক ভূগোলবিদ।

গ্রিক ভূগোলবিদের মতে হিয়ারাপোলিসে এপোলো দেবতার একটি মন্দিরের পাশে ছিল একটি গুহা। মন্দিরটি নানা কারণে রহস্যময় মন্দির হিসেবে পরিচিতি ছিলো। আর পাশের গুহাটির বৈশিষ্ট ছিলো এই যে, গুহার ভিতরে কোন জীবন্ত প্রাণী ছুড়ে মারলে তা আর ফেরত আসতো না। আবার কোনো সাধারণ মানুষ যদি গুহাটির অল্প কিছুদূর ভিতরে প্রবেশ করতো, তাহলে সেও আর ফিরে আসতো না। এক প্রকার উধাও হয়ে যেত। তবে শুধুমাত্র মন্দিরের পুরোহিতরা গুহায় ঢুকলে বেঁচে ফেরত আসতে পারতো। ফিরে আসলেও তাঁদের মুখ ও দেহ থাকতো রক্তাক্ত ও ফোলা। এলাকাবাসীর বিশ্বাস ছিলো ঐ গুহাটি আসলে পরপারে যাওয়ার একটি রাস্তা এবং অপদেবতারা সেই গুহায় বাস করে। তাই কেউ ভিতরে প্রবেশ করলেই অপদেবতারা তাঁদের মেরে ফেলে। কিন্তু শুধুমাত্র দেবতারাই ঐসমস্ত অপদেবতাদের সাথে লড়াই করে বেঁচে ফিরে আসতে পারে।পুরোহিতদের ঐশ্বরিক ক্ষমতা তাঁদের বাচিয়ে দিতো এমনই বিশ্বাস করতেন সেখানকার মানুষেরা।

এ তো গেলো দুই হাজার বছর আগেকার মানুষের বিশ্বাস। কিন্তু এখনকার এই বিজ্ঞানের যুকে কেউ কি এগুলো বিশ্বাস করবে? নিশ্চয়ই না। ঠিক তাই। এই রহস্যজনক তথ্য বিশ্বাস করেননি নিউইয়র্ক কলেজের অধ্যাপক শেলডেন। তিনি এই রহস্যের সমাধান করেছেন এবং যুক্তিযুক্ত তথ্য দিয়েছেন। তাঁর তথ্য অনুযায়ী, ওই গুহার ভিতরে নিজে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হতো। আর এই গ্যাসে নিশ্বাস নিলে যে কোনো প্রাণীর মৃত্যু অবধারিত। এজন্যই মারা যেত সব প্রাণী।

এরপরেও প্রশ্ন থেকে যায় যে ঐ গুহায় পুরোহিতেরা প্রবেশ করলে বেঁচে ফিরতো কিভাবে? এর উত্তরও দিয়েছেন শেলডেন। তিনি বলেন যে পুরোহিতেরা এই ব্যপারটা আগে থেকেই জানতেন এবং একারণে তাঁরা গুহায় ঢুকলেও নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকতেন। কিন্তু ভিতরের গ্যাসের চাপে ও দীর্ঘক্ষণ দম আটকে ঠাকার কারণে তাঁদের মুখ ফোলা ও রক্তাক্ত থাকতো। এভাবে তাঁরা সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তাঁদের ক্ষমতার প্রচার ও প্রসার করতেন।

বর্তমানে ঐ স্থানটিতে রয়েছে প্রচুর উষ্ণ প্রসবণ। তার মধ্যে আছে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে এ থেকে উৎপন্ন হয় প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড। এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাষ্পের সাথে মিলে দেয়ালের ফাটল দিয়ে গুহায় প্রবেশ করে ও জমা হতে থাকে। আর তাই স্থানটি হয়ে গেছে মৃত্যুপুরী। যে কোনো প্রাণী সেখানে শ্বাস নিলে বিষক্রিয়ায় মারা যাবে। সর্বশেষ সেই গুহায় প্রবেশ করেছিলো একদল অস্ট্রেলীয় তরুণ। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিলো গুহার রহস্য ভেদ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত হলেও তারাও গুহা থেকে ফিরে আসেনি। এই ঘটনার পর তুর্কি সরকার সেই রহস্যময় মৃত্যুফাঁদ গুহাটিতে কারোর প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। গুহাটির মুখে লোহার পাত বসানো হয়েছে যাতে ভুলক্রমেও কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে।

সর্বশেষ সংবাদ

আন্তর্জাতিক এর আরও সংবাদ