পিত্তথলি বা গলব্লাডারের কাজ ও যত্ন


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৩০শে নভেম্বর ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার  | দুপুর ০২:০৭ মেডিকেল

মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গে পাথরের সৃষ্টি হয়। ফলে দেখা যায় বিভিন্ন মারাত্বক পরিণতি। এ অঙ্গগুলোর মধ্যে পিত্তথলি অন্যতম। পিত্তথলিকে ইংরেজিতে বলে গলব্লাডার। পিত্তথলি আমাদের লিভারের নিচের ডানদিকে অবস্থিত। নাশপতি ফলের আকৃতির মতো এ থলিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ থেকে ১০ সেমি এবং প্রস্থ প্রায় ৩ সেমি। কালচে সবুজ এই থলিতে জলপাই সবুজ রঙের ঘন তরল পদার্থ থাকে। একে পিত্ত বা পিত্তরস বলে। প্রতিটি মানুষের দেহে একটি মাত্র পিত্তথলি থাকে। আর প্রতিটি পিত্তথলিতে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ মিলি পিত্ত থাকে। লিভারের মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট পিত্তনালী থাকে। এসব নালীকে ক্যানালিকুলি বলে। এসব নালী দিয়ে পিত্ত লিভারে যায়।

মানবদেহে পিত্তথলির কাজ
১. এই থলি দেহের জন্য পিত্ত জমা রাখে, যা স্নেহ জাতীয় খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।
২. স্নেহ জাতীয় খাদ্য পরিপাকের জন্য ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে ব্লাড প্রেসার কমায়।

চিকিৎসকদের মতে, পিত্তথলির যত্নে নিম্নোক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১. শুধু পিত্তথলিই নয়, দেহের প্রতিটি অঙ্গের যত্নের জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। যত বেশি পানি পান করা হবে রক্ত ততোধিক বেশি পরিমাণে দূষণমুক্ত হয়ে সারা দেহে প্রবাহিত হবে। ফলে রোগজীবাণু মূত্রের সাহায্যে দেহের বাইরে চলে যাবে। আর পিত্তথলিতে তৈরি হবে জীবাণুমুক্ত পিত্ত।
২. বছরের পর বছর ভেজাল খাবার, মাত্রাতিরিক্ত স্নেহ ও চর্বিজাতীয় খাবার, মাদকদ্রব্যের কারণে পিত্তে বহিরাগত দূষিত পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘ বছর ধরে বহিরাগত জীবাণু ও চর্বি জমতে জমতে পিত্তের তরল অংশ শক্ত পাথরে পরিণত হয়। তখন পিত্তনালী দিয়ে পিত্ত যেতে পারে না। স্নেহ জাতীয় খাবার হজম হয় না। আর হজম হলেও বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়। পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে পেটে ব্যথা হয়। কোনো কোনো রোগীর বুকেও ব্যথা থাকে। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৩. ধূমপান, মাদকদ্রব্য, মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড, অতি তেল, মসলাযুক্ত খাবার বর্জনীয়। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও মৌসুমি ফল খান।
৪. ব্লাড প্রেসার ও ওজন সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৫. পিত্তথলির পাথর অপসারণের অপারেশন বা ল্যাপারোস্কোপির পর খাদ্যাভ্যাসে যথেষ্ট সতর্ক হোন।
৬. দীর্ঘ বছর মেয়াদি গর্ভনিরোধক পিল বা ঘুমের ওষুধ লিভারকে দুর্বল করে দেয়। ফলে পিত্তথলিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে পিল বা ঘুমের ওষুধ খান।
৭. তারিখ অতিবাহিত হয়ে যাওয়া ওষুধ খাবেন না। যেকোনো ওষুধ লিভার ও কিডনিতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। আর লিভারের কার্যক্ষমতা পিত্তথলিকে প্রভাবিত করে।
৮. প্রতিদিন একটি করে কাঁচা টক ফল খান। এতে আপনার দেহের চর্বির পরিমাণ হ্রাস পাবে।
পিত্তথলির অসংখ্য নালী রয়েছে, লিভার আর লিভারের সঙ্গে রয়েছে দেহের সব গঠনতন্ত্রের যোগাযোগ। সামান্য কিছু সতর্কতা আপনার পিত্তথলিকে পাথর বা জীবাণুমুক্ত করবে।

ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ