ছাত্রলীগকে ১ কোটি টাকা ঈদ সালামি হিসেবে দিয়েছেন ভিসি
ই- বার্তা ডেস্ক।। ছাত্রলীগের পদ হারানো সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের ফাঁস হওয়া ফোনালাপে আলোচিত ১ কোটি টাকা শাখা ছাত্রলীগকে ঈদ সালামি হিসেবে দিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।
আজ সোমবার বিকেলে টাকা লেনদেন ও ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ফাঁস হওয়া ফোনালাপে আলোচিত ১ কোটি টাকা শাখা ছাত্রলীগকে ঈদ সালামি হিসেবে দিয়েছেন ভিসি ফারজানা ইসলাম। এটি অস্বীকার করার কিছুই নেই।
এর আগে দুপুরে হঠাৎ করে দেড় শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘণ্টাখানেক শোডাউন দেন সাদ্দাম হোসেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, আসলে এটা শোডাউন নয়। সামনে ভর্তি পরীক্ষা, তাই ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করলাম। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা এবং সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে কিনা তা দেখলাম।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ভিসির বাসায় মিটিংয়ে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়, আমাদের ঈদ সালামি বাবদ টাকা দেবে। সেখানে আমাদের ১ কোটি টাকা ঈদ সালামি দেয়ার কথা হয়। পরদিন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল ও ছাত্রলীগ সম্পাদক চঞ্চলের কাছে ১ কোটি টাকা পৌঁছে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা (সাদ্দাম গ্রুপ) চঞ্চলের কাছ থেকে ভাগের টাকা বুঝি নিই। ভিসি কোথা থেকে এই টাকা আমাদের দিয়েছেন তা আমরা জানি না। ১ কোটি টাকা ঈদ সালামি পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ‘শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে’ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর এমন দাবির পর বিষয়টি প্রথমবারের মতো স্বীকার করে নিলেন সাদ্দাম হোসেন।
উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, যখন শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডার শিডিউল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছিল তখন আমরা (সাদ্দামের গ্রুপ) মাঠে নেমে সবার টেন্ডার ড্রপ নিশ্চিত করেছি। আমরা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না। জাবিতে কমিশন কেলেঙ্কারি টাকা-পয়সা বা দুর্নীতির ব্যাপারে যদি বিস্তারিত জানতে চান তবে শিডিউল বিক্রি থেকে শুরু করে ওপেন হওয়া পর্যন্ত ভিসির ছেলে প্রতীক হোসেনের ফোন রেকর্ড দেখেন। যদি প্রতীকের ফোন রেকর্ড বের করতে পারেন তাহলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, বিশেষ করে ৯ আগস্ট আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ের আগে-পরে ভিসির ছেলের যেসব কথাবার্তা হয়েছে তা বের করতে পারলে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকবে না।
শিডিউল ছিনতাইয়ের যে অভিযোগের কথা বলছেন তার তদন্ত বা বিচার চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম বলেন, অবশ্যই, অবশ্যই চাই। আমরা যেকোনো ধরনের দুর্নীতির বিপক্ষে। শিডিউল ছিনতাইয়ের যে ঘটনা ঘটেছে তার বিচার চাই আমরা।
আজকের শোডাউনে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লা, সহসভাপতি নিয়ামুল হোসেন তাজ, সহসভাপতি মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক হাসান ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, মওলানা ভাসানী হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও সালাম-বরকত হলের দেড় শতাধিক নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।
চারটি হল আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি উল্লেখ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, মওলানা ভাসানী হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও সালাম-বরকত হল ছাড়াও মীর মশাররফ হোসেন হল ও আ ফ ম কামাল উদ্দীন হল আমাদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিনি বলেন, শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক ক্যাম্পাসে নেই। এখানে সাংগঠনিক নিয়ম মানা হয় না। যেসব প্রেস রিলিজ যাচ্ছে শাখা ছাত্রলীগের নাম করে তা সভাপতি একা দেন। এটা একটা অংশের প্রেস রিলিজ। এটা জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগের প্রেস রিলিজ নয়। গ্রুপের সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করি আমরা, আমরা একা নয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, তারা ফোনালাপ করছে, ফোনালাপ বানিয়েছে। আমার ছেলে তাদের সঙ্গে কেনো বিষয়ে আলাপ করেনি। এখানে শিক্ষকদের ইন্ধন থাকতে পারে। তবে কারা সেটা আমি বলব না।
এদিকে, ফাঁসকৃত ফোনালাপ জাবি ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী ‘ষড়যন্ত্র’ দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে ভিসিপন্থী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ।
পাশাপাশি ফোনালাপকে ‘মিথ্যাচার’ দাবি করে সবাইকে মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সমর্থন ও অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনংসযোগ অফিস।
অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দুর্নীতি উন্মোচন ও এর বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।