মা ভক্ত সজল
ডেস্ক রিপোর্ট।। আমি খুবই মা ভক্ত ছেলে। এখনো আমার সব কলকাঠি নাড়েন মা। আমার বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ছোট বাচ্চাদের মতো মা আমার যত্ন নেন। শুটিংয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আবার বাসায় ফেরা পর্যন্ত। মায়ের সঙ্গে আমার খুবই সুন্দর একটি সম্পর্ক। তিনি আমার সেরা বন্ধু। সবকিছু তার সঙ্গেই শেয়ার করি। তিনি শ্রোতা হিসেবে খুবই ভালো।
আমার সব কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শোনেন। আমিও সবকিছু শেয়ার করি, আলোচনা করি। তবে কখনো কোনো সিদ্ধান্ত আমার উপর তিনি চাপিয়ে দেন না। তবে একাধিক অপশন দেখিয়ে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলেন।মা অনেক বেশি ভালোবাসার একজন মানুষ। এই ভালোবাসার সঙ্গে অন্য কোনো ভালোবাসার তুলনা চলে না। একটি ঘটনা বলি, ছোটবেলায় আমার একবার ডিপথেরিয়া হয়। আমার বয়স তখন ৭/৮ বছর। আমার এখনো মনে আছে তখন আমি প্রায় দশ বারো দিন হাসপাতালে ছিলাম। ওই সময়টাতে আমি কখনো বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম বলে আমার মনে পড়ে না। সারাক্ষণ আমি শুধু মায়ের কোলেই ছিলাম। মায়ের কোলে থেকেই খাবার খাওয়া, ঔষধ খাওয়া সব করেছি।আমরা এক সময় দেশের বাইরে ছিলাম। দেশে আসার পর আমরা তিন ভাই-বোন মায়ের হাত ধরেই বেড়ে উঠেছি। তিনি আমাদের হাঁটাচলা, কথা বলা আচার-ব্যবহার সব শিখিয়েছেন। আবার যেমন আদর করতেন তেমনি আবার শাসনও করতেন। আমি একটু দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম।আরেকটির ঘটনা বলি, আমরা তখন পুরান ঢাকার হাজারিবাগের একটি বাড়িতে থাকতাম। ডেকোরেট করার জন্য মা শোপিস খুব পছন্দ করতেন। একবার আড়ং থেকে একটি শোপিস কিনে আনেন তিনি। এটি টিভির পাশে রাখা ছিল। ছোটবেলায় আমার যেকোনো জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার অভ্যাস ছিল। টিভির ভেতরে কী আছে সেটাও দেখার চেষ্টা করতাম। শোপিসটি দেখার পর আমার মনে প্রশ্ন জাগে- এটা এরকম কেন? কেমন মূর্তির মতো দেখতে। এটার ভেতরে কী আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে শোপিসটা নাড়াচাড়া করতে থাকি। এক পর্যায়ে ওটা ভেঙে যায়। ভেঙে ফেলার পর অনেকটা ভয় পেয়ে কী করব তার উপায় খুঁজতে থাকি। কারণ মাকে ভয়ও পেতাম। তা ছাড়া গতকাল যে শোপিসটা এনেছেন সেটাই ভেঙে ফেলেছি। উপায় না পেয়ে ভাঙা দুই অংশ আলতো করে জোড়া দিয়ে রেখে দিই। তখনো ভাইয়া স্কুল থেকে ফেরেনি।
আমার ধারণা, এটা আমি প্রথম দেখেছি ভাইয়া এখনো দেখেনি। স্কুল থেকে ফিরে এসে ও শোপিসটা দেখলেই ধরবে। এজন্য ভাইয়ার অপেক্ষায় পথ গুনছি। তো ভাইয়া স্কুল থেকে ফিরল ঠিকই কিন্তু ওটাতে আর হাত দেয় না। এমনকি কেউ-ই আর ওটাতে হাত দেয় না। বিষয়টি নিয়ে আমি খুব চিন্তায় পড়ে যাই। কারণ শোপিসটি যদি কেউ না ধরে তবে দোষটা আমার কাঁধেই পড়বে। তারপর ভাইয়াকে উৎসাহ দিয়ে বললাম, এত সুন্দর একটা মূর্তি আর তুই সেটা ধরেও দেখলি না। তুই একটা ছাগল। আমার কথা শুনে ও শোপিসটা ধরে আর ধরা মাত্রই উপরের অংশটা পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি চিৎকার করে বলতে থাকি ভেঙে ফেলছে, ভেঙে ফেলছে..।পুরান ঢাকার হাজারিবাগে আগের বাড়ির পাশে আরেকটি বাড়িতে আমরা থাকতাম। ওটা দোতলা বাড়ি ছিল। পুরো বাড়িটাতে আমরাই থাকতাম। আম্মা যখন বাইরে যেতেন, তখন তিনি চাইতেন আমরা যাতে বাড়িতেই থাকি। ঘর থেকে ছাদ পর্যন্ত ছুটে বেড়াই তাতে সমস্যা নেই। কারণ আম্মা বাসায় না থাকলেই পাশে একটি বস্তি ছিল ওখানে গিয়ে খেলাধুলা শুরু করে দিতাম। ওখানে খেলাধুলা করতাম সেটাতে আম্মার কোনো আপত্তি ছিল না। তবে আপত্তি ছিল ওখানকার ছেলে-মেয়েদের মুখের ভাষা নিয়ে। কারণ ওখানকার ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশে বেশ কিছু শব্দ শিখে ফেলেছিলাম। যেগুলো ভাষায় বলতে শুরু করেছিলাম। আম্মা চাইতেন, আমরা যাতে গালাগালি না শিখি, অশুদ্ধ ভাষাটা না শিখি। একবার আমাদের তিন ভাই-বোনকে বাসায় রেখে গেটে তালা দিয়ে আম্মা বাইরে যান। আমরা ছাদে গিয়ে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাদের ঘুড়িটা সামনের একটি নারিকেল গাছে আটকে যায়। ঘুড়ি আটকে গেছে এটা তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না! বাইরে বের হতে পারলেই ঘুড়িটা নিয়ে আসতে পারি। কিন্তু বাইরে যাওয়ারও উপায় নেই। তা ছাড়া আরেকজন যদি ঘুড়িটা নিয়ে যায় সে চিন্তা তো মাথায় ঘুরছেই।
এরপর আমি আর ভাই সিদ্ধান্ত নিলাম, বিল্ডিংয়ের যে পাইপ আছে সেটে বেয়ে বেয়ে নিচে নেমে যাব। তারপর দুই ভাই দোতলা থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে আসি। এখন ভাবি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ একটা কাজ আমরা করেছিলাম। যাই হোক, ঘুড়িটা উদ্ধার করি কিন্তু যে পাইপ বেয়ে নেমেছি সেটা বেয়ে এখন আর উপরে উঠতে পারি না। এদিকে সন্ধ্যা নেমে গেছে। আমরা দুজনেই তখন গেটের সামনে দাঁড়ানো। এমন সময় আম্মা চলে আসলেন। আমাদের দেখে আম্মা কিচ্ছু বললেন না। সুন্দর করে ভেতরে নিয়ে গেলেন। তারপর কি মাইরটাই না দিলেন…। আসলে সবার মা-ই এরকম। সন্তানদের ভীষণ ভালোবাসেন। তবে আমার মাকে কখনো মুখ ফুটে বলতে হয়নি, তোমাকে ভালোবাসি। আমার চোখ দেখেই সব বুঝে নেন তিনি।
ই-বার্তা।।ডেস্ক