রোগী একই, রোগ একই, চিকিৎসকও একই কিন্তু ব্যবস্থাপত্র ভিন্ন
ই-বার্তা ডেস্ক ।। খুরশিদা বেগম। লক্ষ্মীপুর উপজেলার বাসিন্দা। পেটে ব্যথা, বদহজমসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। স্থানীয় একজনের পরামর্শে যান লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে। তিন ঘণ্টার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের দেখা পান। আর ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্রিপশন) একটি ওষুধ দিয়ে বিদায় করেন।
খুরশিদার মনে সংশয়। চিকিৎসা ঠিকমতো হয়েছে তো? পরে যে চিকিৎসক তাকে ব্যবস্থাপত্র দেন, সেই চিকিৎসকের কাছেই তিনি যান একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। রোগী একই, রোগ একই, চিকিৎসকও একই। কিন্তু অদ্ভুতভাবে পাল্টে গেল ব্যবস্থাপত্র। একই রোগের চিকিৎসায় এবার ছয়টি ওষুধ সেবনের পরামর্শ পেলেন খুরশিদা।
রোগী পড়লেন বিভ্রান্তিতে। কোন ব্যবস্থাপত্র সঠিক? যদি পরেরটা সঠিক হয়, তাহলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক কেন একটি ওষুধ দিয়ে বিদায় করলেন? তিনি কি চিকিৎসা করতে চাননি? আর যদি আগেরটা সঠিক হয়, তাহলে বেসরকারি ক্লিনিকে এতগুলো ওষুধ দেওয়ার কী মানে? কেন তিনি দিয়েছেন।
খুরশিদার এই ব্যবস্থাপত্রটি বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়ার মতো কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটি চিকিৎসা ব্যবস্থার সামগ্রিক চিত্র কি না, তাও নিয়ে কথা তুলেছেন তিনি।
চিকিৎসা প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, এই ঘটনাটি সত্য হলে খুব অন্যায় হয়েছে। একজন চিকিৎসক সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতালে আলাদা ব্যবস্থাপপত্র দিতে পারেন না।
সরকারি চিকিৎসকরা একটি বিশেষ সুবিধা পান যা অন্য পেশাজীবীরা পান না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস বা বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী দেখতে পারেন। কিন্তু অভিযোগ আছে, জনগণের করের টাকায় বেতন নিয়েও সিংহভাগ চিকিৎসক কাজে ফাঁকি দেন।
তাদের একটি বড় অংশই কর্মস্থলে আসেন না। আর যারা আসেন তাদের মধ্যে কয়জন মনোযোগ দিয়ে রোগী দেখেন, সেটি নিয়েও আছে প্রশ্ন। লক্ষ্মীপুরের ঘটনাটি তারই একটি প্রমাণ।
আবার বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবস্থাপত্র লেখার সময় রোগ পরীক্ষার যে পরামর্শ দেওয়া হয় তা থেকে কমিশন আদায়ের অভিযোগও আছে। খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রাণগোপাল দত্ত বলেছেন, এই কমিশন খাওয়া বন্ধ হলে চিকিৎসার ব্যয় কমে যাবে ৩০ শতাংশ।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলাধীন ৬ নং বাংগাখাঁ ইউনিয়নের খুরশিদা বেগম পেট ব্যথা, বদহজমের সমস্যা নিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়েছিলেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ সালাহ্ উদ্দীন শরীফের কাছে। তার রোগের কথা শুনে তাকে ইমেপ ২০ মিগ্রা নামের একটি ওষধ লিখে দেন।
ই-বার্তা / তামান্না আলী প্রিয়া