বন্ধ হতে যাচ্ছে মার্লবোরো সিগারেট
ই-বার্তা ডেস্ক ।। এও এক যুগের অবসান। ধূমপায়ীরা এতে একমত হবেনই। বিদায় নিতে চলেছে কিংবদন্তিসম সিগারেট মার্লবোরো। সিগারেটমোদীদের হতাশ করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল বা PMI। দীর্ঘদিন ধরে ধূমপায়ীদের মৌতাতে মজিয়ে এ বার তারা বন্ধ করতে চলেছে সিগারেট উৎপাদন। এটাই সংস্থার নতুন বছরের রেজোলিউশন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির সংবাদপত্রে পৃষ্ঠা জোড়া অ্যাডভার্টাইসমেন্ট দিয়েছে ১১৮ বছরের প্রাচীন সংস্থা ফিলিপ মরিস। জানিয়েছে নতুন বছরে তাদের লক্ষ্য হল‚ বিশ্বকে তামাকের ধোয়াঁমুক্ত করা। কোনও সিগারেট প্রস্তুতকারী সংস্থা আজ অবধি এই কাজ করেনি। বন্ধ করে দেয়নি এত বিখ্যাত ব্র্যান্ডের উৎপাদন।
যদিও ফিলিপ মরিস যখন ১৮৪৭ সালে এই ব্র্যান্ডটি শুরু করে। শুরুতে তাদের প্রধান টার্গেট কাস্টমার ছিল নারী। তারা মার্লবোরো সিগারেটটি নারী ধুমপায়ীদের আকৃষ্ট করতেই উৎপাদন শুরু করেছিল শুরুতে। এবং এটিই পৃথিবীর প্রথম সিগারেট ব্র্যান্ড যা নারী ধুমপায়ীদের জন্যই শুরু করা হয়। এক্ষেত্রে ব্র্যান্ডটি এই কথা প্রচার শুরু করে যে, এই সিগারেট হালকা তাই এটি পান করলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নেই। তাদের স্লোগান ছিল “মাইল্ড এস মে”/মে মাসের মতো শান্ত! ১৯২০ সালে তারা নারীদের সুবিধার্থে ফিল্টারের রঙ লাল করে। নারীদের লিপস্টিকের রঙ যেন বোঝা না যায়, এজন্যে এই ব্যবস্থা।
কিন্তু, মজার ব্যাপার হলো, নারীদের আকৃষ্ট করতে গিয়ে শুরু হওয়া এই ব্র্যান্ডের সিগারেট আসলে সেভাবে শুরুর দিকে বাজিমাত করতে পারেনি। তাই তারা চিন্তা করলো, পুরুষ ধুমপায়ীদের জন্য সিগারেট উৎপাদন শুরু করা যাক। তাহলে যদি কিছু হয়। এই সিদ্ধান্তের পর তাদের সম্পূর্ণ মার্কেটিং স্ট্রাটেজিই পালটে যায়। তারা এমন একটা মার্কেটিং পলিসি সাজায় যে, বুঝানো হয় এই সিগারেটটি দুর্দান্ত, মাচো টাইপ যুবকদের জন্য, যারা স্টাইলিশ, আধুনিক তাদের জন্য। এই কৌশলটি কাজে লেগে যায়। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি মার্লবোরো ব্র্যান্ডকে। এই ব্র্যান্ডটিই এরপর হয়ে গেল, পৃথিবীর বেস্ট সেলিং সিগারেট ব্র্যান্ড! ১৯৫৫ সালে যখন ব্র্যান্ডটি পুরুষদের জন্য ব্র্যান্ডিং শুরু করে তখন তাদের বিক্রি ছিল ৫ বিলিয়ন। কিন্তু নতুন ক্যাম্পেইন শুরুর পর দুইবছরের মধ্যেই তাদের বিক্রি বেড়ে চারগুণ হয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে এসে সেলস বেড়ে দাঁড়ায় ২০ বিলিয়ন!
মার্লবোরো ব্র্যান্ড বিজ্ঞাপনের জন্য কাউবয় জিমিকে পুরুষ মডেলদের দিয়ে বিজ্ঞাপন করাতো। মজার ব্যাপার হলো, সিগারেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়ে মার্লবোরো ম্যান হিসেবে পরিচিত হওয়া তাদের একাধিক মডেল লাংস ক্যান্সারে মারা যায়। ওয়েন ম্যাক্লারান , ডেভিড ম্যাকলিন, ডিক হ্যামার নামক তিনজন মডেলের মৃত্যু হয়। অনেকে তখন মার্লবোরো রেড সিগারেটকে বলতে থাকে কাউবয় কিলার সিগারেট। ২০১৪ সালেও আরেকজন “মার্লবোরো ম্যান” খ্যাত মডেল এরিক লসন মারা যান। মৃত্যুর কারণ অত্যধিক সিগারেট পান!
যাই হোক, মার্লবোরো ব্র্যান্ডকে বাজারজাত করা কোম্পানি ফিলিপ মরিস এই বছরের শুরুতেই আকস্মিক এক ঘোষণা দেয়। তাদের নতুন বছরের রেজুলেশন হলো, মার্লবোরো ব্র্যান্ডের সিগারেট উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া। এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্লবোরো সিগারেটের ব্র্যান্ডকে পছন্দ করা অনেকেরই মধ্যে হতাশা দেখা যায়। বিশেষ করে মার্লবোরোর সর্বশেষ সংস্করণ মার্লবোরো এডভান্স সিগারেটটি বেশ জনপ্রিয় হয় তরুণ ধুমপায়ীদের কাছে। ফলে স্বভাবতই, তাদের মনে প্রশ্ন, মার্লবোরো কেন এই কাজ করছে?
শত বছরের পুরানো সিগারেট ব্র্যান্ড, ফিলিপ মরিসের মতো কোম্পানি যারা নাকি পৃথিবীর বেস্ট সেলিং সিগারেট ব্র্যান্ডের বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত, তাদের ভবিষ্যৎ কী? প্রশ্নের উত্তর হলো, তারাও ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে আছে। তাদের লক্ষ্য পৃথিবীকে ধোঁয়ামুক্ত করা। ফলে, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য, স্মোক ফ্রি পণ্য বাজারে আনা। ফিলিপ মরিস কোম্পানি একটি ডিভাইস উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে ডিভাইস তামাক পোড়াবে না, ধোঁয়ার সৃষ্টি করবে না। এই ডিভাইসের মাধ্যমে নিকোটিনের ফ্লেবার পাওয়া যাবে। ডিভাইসটি তামাককে উত্তপ্ত করে তাপের ফলে উৎপন্ন করবে নিকোটিনের ফ্লেভার। এই প্রযুক্তির ফলে সিগারেটের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর কেমিক্যালের ৯৫ই ভাগ ছাড়াই নিকোটিনের ফ্লেভার উৎপন্ন সম্ভব। এই প্রযুক্তির নাম তারা দিয়েছে IQOS।
ফিলিপ মরিসের সিইও আন্দ্রেই কালান্টজোপোলাস বলেছেন, আমরা সিগারেট বন্ধ করে দিলেও অন্য কেউ না কেউ সিগারেট বিক্রি করবেই। কারণ মানুষ সিগারেট কিনে। তাই আমি মনে করি না, এই সিদ্ধান্ত মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি এনে দেবে। আমাদের শুধু এটাই লক্ষ্য আমরা যতদ্রুত পারি সিগারেটকে রিপ্লেস করবো, যারা সিগারেট খাবে সেসব কাস্টমারদের জন্য সিগারেটের চেয়ে ভাল বিকল্প আনার ব্যবস্থা করবো।”
সর্বাধিক সিগারেট বিক্রি করা কোম্পানি যখন এই সিদ্ধান্তে আসে, তখন ভাবতেই হয় তবে কি ফিলিপ মরিসের ভবিষ্যত এই ডিভাইসটি কি সিগারেটেরও ভবিষ্যত?
ই-বার্তা / তামান্না আলী প্রিয়া