বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতো ধানের শীষে ভোট দেবে জনগণঃ রিজভী
ই-বার্তা।। শনিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছে।
রিজভী বলেন, এই তিন সিটিতে প্রচারণা শুরুর পর থেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে আগ্রাসী আক্রমণ চালাচ্ছে। রিজভী বলেন, বিরোধী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের তালিকা ধরে গ্রেফতার অব্যাহত আছে। পুলিশি হয়রানিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নেতাকর্মীদের পরিবার। নেতাকর্মীদের নামে মামলা না থাকলেও পেন্ডিং মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। রিজভী বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ আসছে। আর বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট প্রার্থী এবং সমর্থক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান এখন চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খুলনা-গাজীপুর নির্বাচনের মতোই আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে বিরোধী দলের ভোটার ও পোলিং এজেন্ট শুন্য করার জন্য সরকার এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ করে রিজভী। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে তিন সিটি কর্পোরেশনে একপেশে নির্বাচন করার ডিজাইনারের কাজ করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের হাতের মুঠোয়। তিন সিটিতে তফসিল ঘোষণার পর বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার না করার প্রজ্ঞাপন জারির উদ্যোগ নিয়েছিল ইসি। কিন্তু পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আপত্তির মুখে সেই উদ্যোগ থেকে সরে আসে কমিশন। ‘গ্রেফতারের পর পুলিশ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের অবস্থানও জানানো হয় না।
আর নির্বাচন নিয়ে এত অনাচারের পরও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে নির্বাচন কমিশন।’ রিজভী বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গতকাল (শুক্রবার) সারা রাত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে। বাসায় গিয়ে তারা পরিবারের সদস্যদের বলেছে ২ আগস্টের আগে কাউকে যেন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দেখা না যায়। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে গ্রেফতার না করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলেও সেটিকে অমান্য করে পুলিশ লাগাতার গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। রিজভী আরও বলেন, বরিশালে ধানের শীষের প্রার্থীর উঠোন বৈঠক ও সভাও ভেঙে দিচ্ছে পুলিশ। গত পরশু রাত থেকে বিএনপি নেতা জুলহাস উদ্দিন মাসুদ, আব্দুল মান্নান, নাসির আহমেদ, শ্রমিক দল নেতা নুরু মিয়া ও ৩০ নং ওয়ার্ডের ছাত্রদল যুবদল সভাপতিসহ প্রায় ৩০ জনের মতো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাজশাহী সিটিতে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, রাজশাহীতে নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট কারচুপির আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রায় ৯০ শতাংশ আওয়ামী সমর্থিত লোকদের পোলিং ও প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রিজভী বলেন, ভোটের আগের রাতে নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপার ভোটকেন্দ্রে লুকিয়ে রাখা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ধানের শীষের প্রার্থী। ভোটের আগের দিন প্রিজাইডিং অফিসারদের দিয়ে ভোট কেটে সেটি লুকিয়ে রাখা হবে হেডমাস্টার অথবা অ্যাসিসটেন্ট হেডমাস্টারের রুমে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। নৌকা মার্কার প্রার্থীকে জোর করে বিজয়ী করার জন্য হাজার হাজার লোককে সিটি এলাকায় ভাড়া করে নিয়ে আসার অভিযোগও পাওয়া গেছে বলে জানান রিজভী। তিনি বলেন, রাজশাহীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও অন্যান্য আবাসস্থল দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের লোকেরা।
সিলেট সিটি নির্বাচনেও রাজশাহী ও বরিশালের মতোই চিত্র উল্লেখ করে রিজভী বলেন, এখানে ভোটারদের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই, ভোটারদের মনে একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে। পরশু রাতেও বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে, গ্রেফতারও করেছে কয়েকজনকে। আর মামলা দিয়ে কয়েকশ নেতাকর্মীকে ঘরছাড়া করা হয়েছে। তিনি বলেন, সিলেটেও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বা হয়রানি না করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলেও পুলিশ সেটি অমান্য করে ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। জনগণ প্রশাসন ও ইসির ওপর ভরসা রাখতে পারছে না। তবে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে তাহলে বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতো ভোটাররা ধানের শীষে ভোট দেবে আশা প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা।
ই-বার্তা/ডেস্ক রিপোর্ট