৪০ বছর পর স্বজনদের খুঁজে পেয়েছেন আনোয়ারা ইত্যাদির মাধ্যমে

ডেস্ক রিপোর্ট।। অভাবের তাড়নায় ৪০ বছর আগে হতদরিদ্র বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বজনদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল আনোয়ারাকে। অভাবের তাড়নায় পরিবর্তিত হয়েছে বাবা-মা বদলে গেছে । তবে মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিকিন্তু এতটুকু কমেনি শিকড়ের প্রতিটান, মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা, গত ২৬ বছর ধরে বাবা-মা, স্বজন খুঁজে পাওয়ার আকুতি নিয়ে বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে গেছেন আনোয়ারা। অবশেষে বিচ্ছেদের ৪০ বছর পর ভাই বোনদের সন্ধান পেয়েছেন তিনি।

 

মা-বাবা গত হয়েছে বহু বছর আগেই। হারানো ভাই-বোনকে ফিরে পেয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে বাবা, মা বলে চিৎকার করে কেঁদে ফেলেন আনোয়ারা। অভাবের তাড়নায় উপজেলার খারুয়া মুকুন্দ গ্রামের ইন্তাজ আলী ও সমতা খাতুন দম্পতি ১৯৭৮ সালে গফরগাঁও রেলওয়ে ষ্টেশনে ঢাকাগামী লোকাল ট্রেনে তুলে দেন আড়াই বছরের মেয়ে মল্লিকা ও পাঁচ বছর বয়সী মাজেদাকে।ঐ ঘটনার পর সেই দুই শিশুর আশ্রয় টঙ্গীর দত্তপাড়ার এক মাতৃসদনে। মাতৃসদনে মাজেদার নাম বদলে হয় আনোয়ারা। সেখান থেকে ১৯৭৮ সালে নেদারল্যান্ডসের নিঃসন্তান দম্পতি এভার্ট বেকার ও মেরিয়্যান্ট রেজল্যাগান্ট ৫ বছর বয়সী আনোয়ারাকে দত্তক নেন। আনোয়ারার ছোট বোন মল্লিকাকে (পরিবর্তিত নাম শম্পা ) দত্তক নেয় নেদারল্যান্ডসের অপর একটি নিঃসন্তান দম্পত্তি। এরপর থেকেই দুই বোনও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ১৫ বছর চেষ্টার পর পালক বাবা-মা সহযোগিতায় ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে হারানো বোন শম্পাকে খুজেঁ পান আনোয়ারা।এরপর ১৯৯২ সাল থেকে আনোয়ারা বাংলাদেশে এসে বহুবার বাবা-মা, ভাই-বোনকে খুঁজে ফিরেছেন। আনোয়ারা প্রতিবারই বাংলাদেশে এসে তার শিকড়ের সন্ধানে টঙ্গী ও আশেপাশের এলাকায় পোস্টারিং করেন এবং দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে।এ বছর জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে এসে বাবা-মা, স্বজনদের খুঁজে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে যোগাযোগ করেন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র পরিচালক হানিফ সংকেতের সাথে। গত ৩০ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন ‘ইত্যাদি’তে প্রচারিত হয়।অনুষ্ঠানটি দেখছিলেন খারুয়া মুকুন্দ গ্রামের দলিল লেখক শ্যামল কুমার দত্ত।

 

তিনি ইত্যাদির পরিচালক হানিফ সংকেতের সাথে যোগাযোগ করে আনোয়ারার ভাই ছুতু মিয়া (৫৫) এবং ছুলেমান নেছার (৬০) ডিএনএ রির্পোট নেদারল্যান্ডে পাঠান। আনোয়ারা বেগম নিশ্চিত হন ছুতু মিয়া ও ছুলেমান নেছাই তার ভাই, বোন।খবর পেয়ে নেদারল্যান্ডস থেকে স্বামী থমাস, দত্তক দুই কন্যাসহ বাংলাদেশে আসেন আনোয়ারা। সোমবার হারানো ভাই ছুতু মিয়া ও ছুলেমান নেছারদের খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে হয় তাদের মহামিলন। ভাঙা ভাঙা বাংলায় আনোয়ারা বলছিলেন,‘মা-বাবা নেই খারাপ লাগছে। তবে আমি আমার শিকড়ের সন্ধান পেয়েছি। এতে আমি অনেক খুশি। পরিবার ও শিকড় থাকা সবার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ’।

 

 

ই-বার্তা। ডেস্ক