আওয়ামী লীগের কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের আসন্ন উপ-নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় যোগ দিয়ে এসব নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কাউন্সিল শেষ হলেও ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে যেসব জেলা ইউনিটের এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়নি, আপনাদের সেসব ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে তার দলীয় নেতাদের আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কাজ করারও নির্দেশনা দেন।

তিনি জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের কিছু আসন্ন উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা থাকায় সবখানে আওয়ামী লীগের বিপুল ভোট রয়েছে। তবু, আসন্ন উপনির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ের জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।

করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ ব্যবধানের পরে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার পদক্ষেপের অংশ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রেসিডিয়াম, কার্যনির্বাহী কমিটি এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের সভা করবেন।

তিনি দলের নেতৃবৃন্দ, বিশেষত সম্পাদকদের তাদের নিজ নিজ বিষয় যেসব বিষয়ে সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে তা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাদের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার এবং অর্থনৈতিক নীতির পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকার যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তা ভালোভাবে পাঠ করার এবং বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক সভা-সেমিনারে তা আলোচনা করার আহ্বান জানান।

তিনি তার দলের নেতাদের জনগণ কীভাবে আরো উন্নত জীবন পেতে পারে এবং সরকার ও দল এ ক্ষেত্রে কী করতে পারে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা এবং এ জন্য তারা বার বার ভোট দিয়ে দলকে ক্ষমতা এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব মানুষের সেবা করা এবং আমাদের তা করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে জাতির পিতা আমাদের জন্য একটি আদর্শ এবং আমরা তাকে অনুসরণ করতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার সকলের জন্য জমি ও বাড়ি নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে উল্লেখ বরে প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাদের তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন।

অর্থনীতি ও অন্যান্য খাতে কোভিড-১৯-এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সরকার ঘোষিত উদ্দীপনা প্যাকেজ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এ প্যাকেজের কারণে দেশের বাণিজ্য ও শিল্পের পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মসূচিও যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার মূলত আরও বেশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য এবং এভাবে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার জন্য দেশ জুড়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে।

সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতাসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি ভারতের সদ্যপ্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশের একজন ‘সত্যিকারের বন্ধু’ এবং তার পরিবারের জন্য অভিভাবকতুল্য ব্যক্তিত্ব হিসাবে বর্ণনা করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সোমবার মারা যাওয়া ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতির স্মরণে বাংলাদেশ আজ একদিনের জাতীয় শোক পালন করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (প্রণব মুখার্জি) তাদের যে কোনো খারাপ সময়ে সর্বদা তাদের পাশে ছিলেন।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পরে আমরা যখন শরণার্থী হয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছিলাম তখন তিনি এবং তার পরিবার সব সময় আমাদের পাশে ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া আমাদের সমস্ত খারাপ দিনগুলোতে বিশেষত যখন বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুতে তাদের অর্থায়ন স্থগিত করেছিল এবং ১/১১-র পট পরিবর্তনের সময় যখন আমি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলাম তখন তিনি আমাদের পাশে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে এবং বিশ্বের সকলের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকায় ওই সময়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেন।