আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে বাংলাদেশের দাপুটে জয়

ই-বার্তা।।  ত্রি-দেশীয় সিরিজের ষষ্ঠ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দাপুটে জয় পেল টাইগাররা। সাকিব-তামিমদের এটা হ্যাটট্রিক জয়। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টানা দুই ম্যাচে পরাজিত করে মাশাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন টাইগাররা।

দলের এই জয়ের ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন লিটন দাস। এছাড়া ৫৭ ও ৫০ রান করেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। তার আগে বোলিংয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন আবু জায়েদ রাহী।

আইরিশদের বিপক্ষে টার্গেট তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস। উদ্বোধনীতে ১৬.৪ ওভারে ১১৭ রান করেন তারা। শতরানের জুটি গড়ার পথে দুজনেই জোড়া ফিফটি করেন।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৬তম ফিফটি করে সাজঘরে ফেরেন তামিম। তার আগে ৫৩ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ৫৭ রান করেন বাংলাদেশ সেরা এই ওপেনার। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪৬টি ফিফটি ছাড়াও দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১১টি সেঞ্চুরি রয়েছে তামিমের।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৮তম ম্যাচে দ্বিতীয় ফিফটি করেন লিটন দাস। দেশের হয়ে এর আগে একটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যাওয়া লিনট ৬৭ বলে ৯টি চার ও এক ছক্কায় ৭৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন।

লিটনের বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। তৃতীয় উইকেটে তারা ৬৪ রানের জুটি গড়েন। ৩৩ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৩৫ রান করে আউট হন মুশফিক।

শেষ দিকে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৮৪ বলে মাত্র ৪৬ রান। ইনিংসের ৩৬তম ওভারে আইরিশ পেসার ব্যারি ম্যাককার্থির বলে সজোরে মারতে গিয়ে বাম পাশের পেশিতে টান লাগে সাকিবের।

ব্যথা অনুভব করায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সাকিব। সাইড বেঞ্চে বসে থাকা ফিজিও দ্রুত মাঠে এসে সাকিবকে সাময়িক শুশ্রূষা দেন।

তবে খেলার জন্য নিজেকে ফিট না মনে করায় ৫০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ থেকে প্যাভেলিয়নে ফেরেন সাকিব। তার পরিবর্তে ক্রিজে আসেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তিনি ১৭ বলে ১৪ রান করে ফেরেন।

এরপর সাব্বির রহমান রুম্মনকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৯ বলে দুটি চার ও সমান ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রান করেন রিয়াদ।

এর আগে টাইগারদের বাজে ফিল্ডিং ও পল স্টার্লিংয়ের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৯২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে আয়ারল্যান্ড।

বুধবার ডাবলিনের ক্যাস্টল এভিনিউতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা একাধিক সহজ ক্যাচ মিস করেন। এর সুবাদে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ার সুযোগ পায় স্বাগতিক আইরিশ ক্রিকেট দল।

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩০ রান করেন স্টার্লিং। তার ইনিংসটি ১৪১ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কা সাজানো। এছাড়া ১০৬ বলে সাতটি চার ও ২টি ছক্কায় ৯৪ রান করেন অধিনায়ক পোটরফিল্ড। বাংলাদেশ দলের হয়ে ৯ ওভারে ৫৮ রান খরচ করে ৫ উইকেট শিকার করেন আবু জায়েদ রাহী। এছাড়া দুই উইকেট নেন সাইফউদ্দিন।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ষষ্ঠ ম্যাচে জিততে হলে মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন দলকে ২৯৩ রান করতে হবে। যদিও সিরিজে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগামী পরশু শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরির করে মাঠেই সিজদা দিলেন পল স্টারলিং। তার অনবদ্য ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ার পুঁজি পায় স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের ৪২তম ওভারে সাইফউদ্দিনের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন পল স্টারলিং।

১২৭তম বলে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি করেন আয়ারল্যান্ডের এই ওপেনার। এর আগে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডস, কানাডা ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন পল স্টারলিং।

বুধবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে রুবেল হোসেনের গতির মুখে পড়ে আয়ারল্যান্ড। দলীয় ২৩ রানে ওপেনার জেমস ম্যাককলামকে লিটন দাসের ক্যাচে পরিনত করেন রুবেল।

এরপর তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা অ্যান্ডি বালবিরনিকে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন আবু জায়েদ রাহী। মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ২০ রান করে ফেরেন বালবিরনি। আগের ম্যাচে উইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩৬ রান করেন আইরিশদের এই তারকা ক্রিকেটার।

৫৯ রানে দুই উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ডকে খেলায় ফেরান পল স্টারলিং ও উইলিয়াম পোটরফিল্ড। তৃতীয় উইকেটে দেশের হয়ে রেকর্ড ১৭৪ রানের জুটি গড়েন তারা। আর এই রেকর্ড জুটি গড়তে সহযোগিতা করেন টাইগাররা ফিল্ডাররা।

একাধিক ক্যাচ মিস করার কারণে পল স্টারলিং সেঞ্চুরির সুযোগ পান। তবে সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও হোচট খান আইরিশ অধিনায়ক পোটরফিল্ড। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন আবু জায়েদ রাহী। তার গতির বলে ক্যাচ তুলে দেন আইরিশ অধিনায়ক। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১০৬ বলে সাতটি চার ও দুটি ছক্কায় ৯৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন পোটরফিল্ড।

এরপর সময়ের ব্যবধানে আয়ারল্যান্ডের উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হন টাইগাররা। মাত্র ৩ রান করেই রাহীর তৃতীয় শিকার হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন কেভিন ওব্রায়েন। ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি করা স্টারলিংকে প্যাভেলিয়নে ফেরান সেই রাহী। তার আগে খেলেন ১৪১ বলে আট চার ও চার ছক্কায় ১৩০ রানের ঝকঝকে ইনিংস। শেষ দিকে আর প্রতিরোধ গড়তে না পারায় ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯২ রানে থামে আয়ারল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৯২/৮ (স্টার্লিং ১৩০, পোটরফিল্ড ৯৪; রাহী ৫/৫৮, সাইফউদ্দিন ২/৪৩)।

বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ২৯৪/৪ (লিটন ৭৬, তামিম ৫৭, সাকিব ৫০, মাহমুদউল্লাহ ৩৫*, মুশফিক ৩৫, মোসাদ্দেক ১৪, সাব্বির ৭*)।

ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।

প্রসঙ্গত, আগামী শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।