আমাদের বন্ধু সাহেদ অথবা শাহেদ!

সাহেদ যে আমাদের জাতীয় বন্ধু তা এতক্ষণে আমার মতো সাধারণ মানুষ নিশ্চিত হয়ে গেছে। সেটা যতই এখন তার (সাহেদ) বন্ধুরা বন্ধুত্ব অস্বীকার করুক। আমাদের প্রত্যেকের ই এমন কিছু বন্ধু অবশ্যই আছে যে, বিপদ দেখলেই পালিয়ে যায়। এদেরকে বলে সুসময়ের বন্ধু। সাহেদ সাহেবের জন্য সেদিক থেকে তো আমার খারাপই লাগছে। তার আশেপাশে সারাজীবন সব ‘সুসময়ের বন্ধু’ ছিল যারা এখন কেউ তাকে স্বীকার করছে না।

তবে সাহেদ সাহেবের কষ্ট কিন্তু হালকা কম হবার কথা। সুসময়ের বন্ধুরা স্বীকার না করলেও তাকে কিন্তু আটকেও দিচ্ছে না। তিনি হয়তো সুখে কোনো সুন্দর এসি রুমে বসে কোমল পানীয় পান করতে করতে রাতের টক শো’তে তাকে নিয়ে করা বিষোদাগার করা দেখছেন আর মনে মনে ভাবছেন, আজ রাতের খাবারে কাচ্চি হলে হয়তো ভাল হতো। মোরগ-পোলাওটা জমলো না।

তবে সাহেদ কিন্তু আমাদের জন্য বন্ধু হিসেবে এখনও আবির্ভূত হয়েছে। দেখুন, যখন করোনা নিয়ে আমরা খুব হতাশায়। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। তিন হাজারের উপরে আক্রান্ত হচ্ছে। করোনা টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। তারই মধ্যে করোনা টেস্টের ফি নেওয়া শুরু হলো, তখন আমাদের এই জাতীয় বন্ধু কিন্তু বেশ তার বন্ধুদের সাহায্য করছেন। কারণ আমরা আমজনতা ‘ঝুলানো মূলো’তে চোখ রেখে ব্যস্ত সময় পার করছি এটা ভেবে ‘সাহেদ অথবা শাহেদ’ কীভাবে এত দুর্নীতি করলো? কোথা থেকে করলো? কার আস্কারায়? যেন দেশের সকল মানুষ একসাথে গত কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে টপাটপ মঙ্গল গ্রহ থেকে বাংলাদেশে পড়েছেন, কিছু জানেন না। কারা করেন দুর্নীতি আর কীভাবে করেন? কাদের ছত্রছায়ায়। যেন সবই একবারে বোকা ছেলে/মেয়ে, পুচুপুচু।

তবে এই যে দুর্নীতি করার অপরাধে যে তাকে আটকের কথা বলা হচ্ছে, সেটা ভালো। মানুষ বলছে! কি বলছে বা কীভাবে বলছে সেটা আলাদা হিসাব। অনেকে বলার আগে পরীক্ষার খাতার চেয়েও বেশি সময় নিয়ে রিভাইস দেয় যাতে লেখার একদিনের মধ্যে না আবার তাকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট’ বিষয় নিয়ে আলোচনায় ডাকা হয়।

ভালো কথা, এই যে দুর্নীতির দায়ে ‘ক্যাসিনোকাণ্ডে’ কতজনকে আটক করা হলো তাদের কি অবস্থা? কোনো সাজা কি হয়েছে? অবশ্য এই ইস্যু অনেক পুরনো। এরপর কত ইস্যু এলো আর গেলো। অতকিছু মনে কীভাবে রাখি। আজ দেখলাম বছরখানেক আগে ভিআইপির জন্য ফেরী দেরি হওয়াতে তিতাস নামে এক কিশোর মারা গিয়েছিল, সেই ভিআইপি এখন আরও বড় ভিআইপি হয়েছে। মানে আরও একজন বন্ধু পেয়েছি আমরা।

সেদিক থেকে আমার মনে হয়, এসব বিচার/ফিচার, আটক, গ্রেফতার নিয়ে কথা বলে লাভ কি? বন্ধুকে যতই আমরা অস্বীকার করি, তলে তলে বন্ধুর জন্য আমরা ঠিকই কিছু না কিছু করি। বন্ধু মুখে হয়তো বলছে, চিনি না, জানি না, মানি না। আর মনে মনে হয়তো বলছে, আমার মন জানে আমি যে আসলে কি করতে চাই! ফলে আমাদের এখন আসল আলোচনা হওয়া দরকার ‘আমাদের বন্ধু সাহেদ নাকি শাহেদ?’

মুনওয়ার আলম নির্ঝর
সাংবাদিক