আল্লাহর কাছে বলতাম, আমি যেন এখান থেকে মুক্তি পাই

ই-বার্তা ।।  দেশের বাইরে মরুভূমিতে কঠোর শ্রম দিতেন সালাউদ্দিন শাকিল। স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়েই থাকতে হচ্ছিল। এরপরও স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি তিনি। লক্ষ্যে পৌঁছার অদম্য সেই ইচ্ছাই তাকে নির্মাণশ্রমিক থেকে ক্রিকেটার বানিয়েছে।

প্রায় এক যুগ স্বপ্নের পেছনে ছুটেছেন শাকিল। অবশেষে তার জীবনে তৃপ্তি এসেছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার।

কষ্টের জীবনের কথা স্মরণ করে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে শাকিল বলেন ‘সেখানে (দুবাই) আমাদের প্রতিদিন ভোর ৪টায় কাজের জন্য বেরিয়ে যেতে হতো। আমাদের খাবার পলিথিন ব্যাগে করে নিয়ে যেতাম। মরু ঝড়ের কারণে কখনো প্লেটে খাবার খেতে পারতাম না, তাইলে বাতাসে ভাত উড়ে যেত। তাপমাত্রা কখনো ৫০ ডিগ্রিও স্পর্শ করে সেখানে। ফলে তরকারিগুলো নষ্ট হয়ে যেত। খুবই কঠিন সময় পার করেছি সেখানে।

আমাকে সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতে হয়েছিল। কিন্তু একেবারে মরুভূমিতে স্টিলের কাজ করাটা ছিল খুবই কঠিন। আমি সবসময় আল্লাহর কাছে বলতাম, আমি যেন এখান থেকে মুক্তি পাই। এটা ছিল খুবই যন্ত্রণাদায়ক।’

শাকিল বলেন, ‘২০০৬ সালে যখন আমার সব বন্ধু এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তখন আমি বিদেশে চলে যাই। সে সময় আমি আসলে ভালো-খারাপ বুঝতাম না। কিন্তু পরিবারের খারাপ অবস্থার জন্য আমাকে যেতে হয়েছিল।’

সেই কষ্টের জীবন পেরিয়ে শাকিল এখন বাঁহাতি পেসার। গত সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলের বিপক্ষে অভিষেক হয় শাকিলের। প্রথম ইনিংসে দুটি উইকেটও পেয়েছেন, যার একটি ছিল জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসের।

রাজশাহীর কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে মধ্যাঞ্চলের হয়ে খেলছেন শাকিল। ২৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের পঞ্চম রাউন্ডে (বিসিএল) পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে মধ্যাঞ্চল।

জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ও তারকা অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধিনায়কত্বে খেলা স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার থেকে কম কিছু নয় শাকিলের কাছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমার অন্য রকম একটি জীবন। এর আগে আমি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাইকে শুধু টিভিতেই দেখেছি। এখন তিনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি আমার অধিনায়ক। এটা আমার জন্য অসাধারণ একটি ব্যাপার।’

২৮ বছর বয়সী শাকিল শুরুতে নজরে পড়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। এ বছরের শুরুতে ফতুল্লা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নেটে বল করার সময় কোচ মিজানুর রহমান তাকে প্রথম দেখেন। পরে নামী এই কোচের অধীনেই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেলেন শাকিল। এই কোচের পরামর্শেই মধ্যাঞ্চলে সুযোগ পান তিনি।

ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জে বেড়ে উঠা শাকিলের। ছোটবেলা থেকেই টেপ-টেনিস বলে ক্রিকেটের হাতেখড়ি। তবে জীবনের প্রয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাওয়ার পর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন থেকে অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছিলেন।

চার বছর পর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কোম্পানি শাকিলকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। আর দেশে ফিরেই আবারও স্বপ্নের পথে ছুটেন শাকিল।