উপন্যাসের মতোই আমার জীবন
ই-বার্তা ডেস্ক ।। ‘ভাবছিলাম হয়তো ওদের নিয়ে সিঙ্গাপুর যেতে হতে পারে। যেহেতু শুটিং প্যাক আপ করতে বলেছে তার মানে সিরিয়াস কিছু হবে।’
তারপর তিনি যখন শুটিং ইউনিটের কাছে ফিরলেন তখন অন্যরা তাকে দেখেই বুঝলো যে সাংঘাতিক কিছু হয়েছে।
‘সবাই বুঝে গেলো। আর এজন্য বলি সবসময় অভিনয় করা যায়না। তারা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পরিচালককে বললাম শুটিং প্যাক আপ করে দিতে হবে।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন হোটেলে যখন ফিরেন ততক্ষণে অনেকেই জেনে গেছে যে তার র স্ত্রী মারা গেছে কিন্তু তাকে সেটি জানানো হয়নি।
‘আমি আসরের নামাজ পড়লাম। সবাই তাগাদা দিচ্ছিলো যে তাড়াতাড়ি চলেন। রওনা দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় দুর্ঘটনার গাড়িটা দেখলাম। দেখেই মনটা শূন্য হয়ে গেলো। পরে যখন হাসপাতালে গেলাম দেখলাম বাচ্চা দুটো কাঁদতে কাঁদতে কেমন যেনো হয়ে গেছে।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এটিএম ভাইও বসে আছে বিধ্বস্ত হয়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম জাহানারা কোথায়? এটিএম ভাই বললো তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে। তখন আমি চিৎকার করলাম।’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বলেন, ‘উপন্যাসের মতোই আমার জীবন। অনেক উপন্যাস পড়তাম। শরৎচন্দ্রের বই। জীবনকে বিভিন্নভাবে দেখতে চেয়েছিলো সে (স্ত্রী)। মানুষের চাওয়া পূরণ হয়না। শরৎচন্দ্রের গল্পে বিয়োগান্তক বিষয় বেশি থাকে। ঘটনাবহুল আমার জীবন।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন চলচ্চিত্রে এসেছিলেন জীবনকে দেখার জন্য। ‘ভাবছিলাম অভিনেতা হলে চরিত্রগুলোকে উপভোগ করতে পারবো। ডাক্তার বা অন্য কিছু হলে একটাই হতাম। কিন্তু অভিনেতারা সব চরিত্রে থাকতে পারে। এটা চেয়েছিলাম মনে প্রাণে।’
সেই অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের জীবনের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেলো ১৯৯৩ সালের সেই দুর্ঘটনা। অভিনেতা ইলিয়াস হয়ে গেলেন বাংলাদেশের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্বে।
ই-বার্তা / তামান্না আলী প্রিয়া