ঋণ ইস্যুতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালকের গ্যারান্টি লাগবেঃ অর্থমন্ত্রী

ই- বার্তা ডেস্ক।।   অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন যে,  ঋণ ইস্যুতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালককে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দিতে হবে। আর ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে জামানত বা মর্টগেজ সঠিকভাবে রেখেই ঋণ দিতে হবে। যাতে ঋণের বিপরীতে নিশ্চয়তা থাকে। এ সব বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে আইনের সংশোধন করা হবে।

আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান ।

তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় এসব উদ্যোগ এতটাই শক্তিশালী করা হবে- যাতে খেলাপি হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। আর এ দু’টি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে কোনোভাবেই খেলাপি ঋণ বাড়বে না।

রাজধানীর আগারগাঁও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়। সেখানে সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিরা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে কিছু আইনি প্রক্রিয়ার দুর্বলতা ছিল। এসব দুর্বল দিকগুলো এখন দূর করা হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। ক্রেতা দায়ী থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর সঙ্গে কোনো ব্যাংক কর্মকর্তা জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্যমান আইনে তাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়। ফলে এর থেকে রক্ষা পাবে না। এ জন্য বলছি খেলাপি ঋণ বাড়বে না।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, যারা ভালো ঋণ গ্রহীতা তাদের আমরা আবার ঋণ দিব। আর যারা ভালো নয় তাদের সম্পর্কে বলা আছে তাদের ঋণ দেয়া হবে না। খারাপ ঋণ গ্রহীতাদের নিয়ে ভাবনার দরকার নেই।

জানা গেছে, ওই বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক থেকে তাদের ভবিষ্যৎ কর্ম-পরিকল্পনা দাখিল করেছে। ব্যাংকগুলো আরও কার্যকর করতে বিভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণ করেই কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এতে ব্যাংকের মুনাফা আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে চেয়ারম্যান ও এমডি নিয়োগের পর তাদের কার্যক্রম নিয়ে আজকে ছিল প্রথম বৈঠক। আগামী তিন মাস পর দ্বিতীয় বৈঠক করা হবে। ওই সময় তাদের অগ্রগতি প্রকাশ্যে তুলে ধরা হবে। ওই সময় খেলাপি ঋণ বাড়ল কিনা। সেটিও প্রকাশ করা হবে। আশা করি, খেলাপি ঋণ বাড়বে না। তবে বাড়লেও এর কারণসহ প্রকাশ করা হবে। এ দেশের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা আছে। সে দায়বদ্ধতা থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাই।

চারটি ব্যাংকের কর্ম-পরিকল্পনা দিয়ে আগামীতে তাদের সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে কিনা- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী তিন মাস পর এর মূল্যায়ন হবে। ওই সময় তাদের অগ্রগতি ও অবনতির সূচকগুলো পর্যালোচনা করলে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত চিত্র।

এর আগেও বলেছেন খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না, আজকে নতুন কী এমন প্রস্তাব দিয়েছে আপনি আশ্বস্ত হয়ে বলছেন খেলাপি আর বাড়বে না- এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়বে না। কারণ এর বৃদ্ধির আর কোনো ব্যবস্থা নেই।

অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে আমরা সব সময় দুঃচিন্তায় আছি। সহজে এখান থেকে মুক্তি পেতে আজকের বৈঠকে সবাই একমত হয়েছেন। এর জন্য সংশ্লিষ্ট আইনি প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনা হবে। পাশাপাশি এখন থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর এসব ব্যাংকের অগ্রগতি রিপোর্ট দাখিল করবে। তাদের সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন করা হবে।

ব্যাংক কমিশন গঠন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে আইনগুলো সংশোধন করতে হবে। এরপর নিজেরা শক্তিশালী হব। নিজেদের ঘর ঘুছিয়ে আইন সশোধন, জনবল ও নিয়ম-নীতি ঠিক করে এরপর ব্যর্থ হলে কমিশন গঠন করা হবে। কমিশন আমাদের ব্যর্থতা খুঁজবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো কাজ শুরু করা হয়নি।

সরকারি ব্যাংকের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি একক গ্রুপকে দেয়া হচ্ছে- এটি কমিয়ে আনার কোনো নির্দেশ আছে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, একজন ঋণ গ্রহীতা কতটা ঋণ নিতে পারবে নতুন আইনে বলা আছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক পরিচালকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে যাদের ব্যাংকিং জ্ঞান আছে। যাদের নেই তাদের নেয়া হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোতে একজন করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক দেয়া হচ্ছে। কারণ প্রতিদিন নানা চুক্তি করতে হয়। বিচারক এসব চুক্তি পর্যালোচনা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভ চুরি তদন্ত নিয়ে অগ্রগতি আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত একটি মামলা চলমান আছে। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কথা বলা যাবে না।