‘এই মনে করেন, ভাল্লাগে খুশিতে ঠ্যালায় ঘোরতে’ এলো কীভাবে?

ই-বার্তা ডেস্ক ।।   সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েক দিন ধরে একটি কথা বেশ  ভাইরাল হয়ে উঠেছে।  কথাটি  হলো, এই মনে করেন- ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জুড়ে ইদানিং বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটি কথাকে বিদ্রুপাত্মক অর্থে বা ব্যঙ্গ করে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।

হঠাৎ এই সংলাপটি নিয়ে ইউজারদের মধ্যে কেন এতো মাতামাতি? এই লাইনটি এলো কোথা থেকে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।

ইতিমধ্যে ফেসবুকে ঝড় তুলেছে কথাটি। ফেসবুকের নিউজ ফিডগুলো ছেয়ে গেছে এই একটি কথাকে কেন্দ্র করেই । স্যাটায়ারধর্মী পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে।অনেকেই এর পেছনের গল্পটি না জেনেই স্ট্যাটাস আকারে কথাটি লিখছেন। বিষয়টি নিয়ে মজা করতে বাদ দেননি  ফেসবুক সেলিব্রেটিরাও।

টুইটারেও এটি লেখার ব্যাপকতা দেখা গেছে।  নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে সোলায়মান সুখন লিখেছেন-

ভাই চাকরিবাকরি নিয়ে তো ভালোই আছেন, এর মধ্যে আবার মোটিভেশনাল স্পিচ কেন দেন?

আমি: এই মনে করেন- ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে।

এভাবে যে কোনো বিষয়ের সঙ্গেই মিশে যাচ্ছে কথাটি।
পদ্মা নদীর মাঝি কালজয়ী উপন্যাসের চরিত্র নিয়ে ফারিয়া হোসেইন ফেসবুকে লিখেছেন-

-আমারে নিবা মাঝি লগে? ক্যান?

: এই ধরো থাকতে ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে।
বিয়ে কেন করেছেন যে বিষয়ে মুশফিক লিখেছেন-

মানুষ বিয়ে কেন করে?

:এই মনে করেন ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে
স্কুলের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এসে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন-

নবীনবরণে কেন আসছো?

: এই মনে করেন- ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে!
সানিয়া নামের এক ফেসবুক ইউজার এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না।

তাই বলে তিনিই বা বাদ যাবেন কেন।

তিনি লিখেছেন- সবাই এত খুশিতে ঠ্যালায় ঘোরতে টাইপ স্ট্যাটাস দিতেসে কেন? উত্তর: এই মনে করেন, ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে…

কথাটি এ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এতই জনপ্রিয় যে, এ নিয়ে অনেকেই ভিডিও তৈরি করে ইউটিউব ও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

কয়েকটি স্যাটায়ার পোস্ট:

স্ট্যাটাসগুলো বিবিসি বাংলা থেকে সংগৃহীত

কথাটি নিয়ে রম্য লিখেছেন অনেকে। সেই রম্য থেকে রেহাই পাননি অনেক ঐতিহাসিক বিজ্ঞানী, কবি-সাহিত্যিক ও দার্শনিকরা।

তাদের কীর্তিতেও ফটোশপ করে লেখা হচ্ছে এ কথাটি।

বাদ যাননি কবি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, ইবনে বতুতা, কলম্বাসের মতো কীর্তিমানরাও।

কবি নজরুলের বিখ্যাত সংকল্প কবিতা নিয়ে স্যাটায়ার করা হয়েছে এভাবে-

মানুষ কেন যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে ঘুরে? কবি নজরুল: এই মনে করেন- ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে…

সংসার ফেলে এমন বজরা বজরায় থাকেন কেন?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: এই মনে করেন- ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে…

এত কিছু থাকতে আপনি আমেরিকা আবিষ্কার করলেন কেন?

কলম্বাস: এই মনে করেন- ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে….

ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে কেন? আর্নেস্ট রাদারফোর্ড: এই মনে করেন- ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে…

 

তবে এ কথাটির উৎপত্তির ইতিহাস হয়তো অনেকেরই জানা নেই। মূলত কথাটি গ্রামবাংলার এক সহজ-সরল নারীর মুখে প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল কোনো এক ভোটকেন্দ্রে।

অনলাইনে সেই ভিডিওটি সম্প্রতি অতি দ্রুত  ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা গেছে- একটি নির্বাচনী কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকজন নারী ভোটার।অথচ তারা প্রত্যেকেই ভোট দিয়েছেন। চিহ্ন হিসেবে হাতে কালিও লাগিয়ে দিয়েছেন পোলিং এজেন্ট।তবু এসব নারী ওই কেন্দ্রেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন।

এ সময় টিভি সাংবাদিক ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো দুই নারীর কাছে জানতে চান- একবার ভোট দেয়ার পরও তারা কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

এ ব্যাপারে একজন জানান, তার এখানে থাকতে খুব ভালো লাগছে, তাই শীত উপেক্ষা করেও দাঁড়িয়ে আছেন।

ঠিক তার পরেরজন ওই সাংবাদিককে জবাব দেন- এই মনে করেন ভাল্লাগে, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে…।

এই ভিডিওটি প্রকাশ পাওয়ার পর রশ্মি সিদ্দিকা ও আশনা সিদ্দিকা নামের দুই বোন এ নিয়ে টিকটকে একটি ভিডিও বানায়। এর পর থেকেই বক্তব্যটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ফেসবুকে অনেকে নানান প্রশ্নের উত্তর হিসেবে এই লাইনটি ব্যবহার করে স্ট্যাটাস দিতে থাকেন।

ই-বার্তা / রেজওয়ানুল ইসলাম