কাজের মেয়েকে ধর্ষণ, তোলপাড় সিলেট

ই-বার্তা ।।  সিলেটের শেখঘাট, ঘাষিটুলা, কলাপাড়া সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কাজের মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। এদিকে সিলেটে ওই কাজের মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সোহেল মিয়া লাপাত্তা রয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ।

তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেহ আহমদ চৌধুরী, এই ধর্ষণের ঘটনাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন।

সালেহ আহমদ দাবি করেন, আগামী নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে সুবিধা নিতে একটি পক্ষ তার মামা সোহেলকে এ ঘটনায় জড়িয়েছে।

গত শনিবার সিলেট নগরীর কোতোয়ালি থানায় ধর্ষিত কিশোরীর বোন তানজিমা বেগম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার একমাত্র আসামি নগরীর ১০নং ওয়ার্ডে কলাপাড়ার ডহর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সোহেল মিয়া।

এই মামলার বাদী তানজিমা বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়। তারা দীর্ঘ দিন ধরে ঘাষিটুলার কলাপাড়া এলাকার ফজল মিয়ার কলোনিতে বসবাস করে আসছেন।

মামলার এজাহারে থেকে জানা গেছে, তানজিমা বেগম অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি প্রায় ৩ বছর আগে তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে ১২ বছর বয়সী ছোট বোনকে সিলেট নগরীর ১০নং ওয়ার্ডে কলাপাড়ার ডহর এলাকার বাসিন্দা সোহেল মিয়ার বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে দেন। দুই বছর পর তার ছোট বোনকে যৌন হয়রানি করতে থাকেন সোহেল মিয়া। তিনি এই সমস্ত কথা কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেন আমার ছোট বোনকে। চলতি মাসের ১৪ এপ্রিল রাত ১টার দিকে ছোট বোনের রুমে প্রবেশ করে মুখ চেপে ধরে একাধিকবার ধর্ষণ করে সোহেল মিয়া। এরপরদিন নির্যাতিতা ওই কিশোরী তানজিনার বাসায় গিয়ে ধর্ষণের কথা জানায়। তারপর তানজিনা তার স্বামী ও ভাইসহ সোহেল মিয়ার বাসায় গিয়ে এই ঘটনার বিচার চাইলে উল্টো তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ওই দিনই ধর্ষিতা কিশোরীকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন তানজিনা। ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারে চিকিৎসা শেষে ওই কিশোরী সহ কোতোয়ালি থানায় গিয়ে মামলা করেন তানজিমা বেগম।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেন জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ অভিযুক্ত সোহেল মিয়াকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তিনি আরো জানান, মামলা হওয়ার পর আসামি গা-ঢাকা দিয়েছে।

এদিকে মামলার বাদী মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) অভিযোগ করেছেন- মামলা দায়ের করে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে তার পরিবার। কাউন্সিলর ও সোহেল মিয়ার পক্ষের লোকজন মামলাটি তুলে নিতে তাদের প্রায়ই হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। তারা এখন ভিকটিমের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাই তানজিমা বেগম পুলিশের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানান।

তানজিমা বেগম আরো জানান, এর আগেও তার বোনকে ধর্ষণ করেছিল সোহেল মিয়া। ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তার বোনকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই ব্যবস্থাপত্রে প্রমাণ রয়েছে তার বোনের স্বামীর নাম সোহেল। ঠিকানা দেয়া হয়েছে তাহিরপুরের। হাসপাতালে ভর্তি করার আগে তার বোনকে ধর্ষণ করা হয়। ওই সময় তার কিশোরী বোন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে সবার অগোচরে সুনামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ধর্ষক সোহেল আহমদ সিজার করিয়ে একটি মৃত সন্তান প্রসব করান। আমরা এ ঘটনাটি আগে জানতাম না। দ্বিতীয় দফায় যখন তার কিশোরী বোন ধর্ষণের স্বীকার হয় তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এই ঘটনা ধরা পড়ে। এরপর তার বোনই সব ঘটনা খুলে বলে জানান তানজিমা। তানজিমা বেগম বলেন- এবারের ধর্ষণের ঘটনায় যে মামলা করেছি সেটির সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নামলে সব কিছু পরিষ্কার হবে।

তবে সোহেল মিয়ার মামা সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেহ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, তানজিমা বেগমের ওই অভিযোগ সত্য নয়।

তিনি বলেন, ওই ঘটনার সময় সোহেলের কাজের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিল ভিকটিম মেয়েটি। বিষয়টি ভিকটিমের চাচা গৃহকর্তা সোহেলকে অবগত করে চিকিৎসা করান।

তিনি আরো দাবি করেন, ভিকটিমের সঙ্গে অন্য কারো অপকর্মের ঘটনা কৌশলে সোহেলের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানান। এ ঘটনা নিয়ে একটি মহল খেলা করছে বলেও দাবি করেন কাউন্সিলর।