কাতারের জেলখানায় বন্দী হাজারো বাংলাদেশী, খোঁজ নিচ্ছে না দূতাবাসের কেউ

ই-বার্তা ডেস্ক ।।   সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি তার কাতারে যাওয়া এবং সেখানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ২৯ দিন জেল খেটে চার মাস আগে দেশে ফেরার বর্ণনা দেন।

এ সময় তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন, তিনি বর্তমানে বিমানবন্দর এলাকায়ই আছেন। বিদেশ যাওয়ার আগে তার ফার্মেসির প্যাডেই তার কাছ থেকে পুরো টাকা নেয়ার অঙ্গীকারনামা করে যান। অঙ্গীকারনামাটি এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।

এতে দখা যায়, নর্দাপাড়া তালতলা মোড়ের হিমা ফার্মেসির (চেম্বার) জেনারেল প্রাকটিশনার (এলএমএফ) মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জনির প্যাডে ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর হওয়া চুক্তিতে উল্লেখ আছে ‘আমি প্রথম পক্ষ মো: ইকবাল হোসেন রনি এবং দ্বিতীয় পক্ষ মো: জনিকে কাতার যাওয়ার ভিসা বাবদ পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করিয়া কাতার যাওয়ার জন্য সম্মতি প্রদান করিলাম।

শর্ত হচ্ছে দুই বছরের জন্য আইডির ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে তিনবার পর্যন্ত পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিবেন। দুই মাসের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ও সকল প্রকার সমস্যার দায়ভার নিবেন।’

সাক্ষী হিসেবে এ এস এম মজিবুর রহমান ও মো: বজলুর রহমানের নাম ছাড়াও হিমা ফার্মেসির প্যাডের নিচে দ্বিতীয় পক্ষ মো: জনির স্বাক্ষর রয়েছে। হিমা ফার্মেসির ওই প্যাডে থাকা একটি মোবাইল নম্বর রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে কেউ রিসিভ করেননি।

কাতারে ‘সফর’ জেলে ২৯ দিন থাকার সময় সেখানে কেমন ছিলেন জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন রনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কারাগারে তো কখনো যাইনি। জেলখানা তো জেলখানাই। তবে সেখানকার জেল খুব উন্নত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

খাবারের মানও ভালো। তারা কাউকে নির্যাতন করে না। সময়মতো তিন বেলা খাবার দিচ্ছে। কোনো মারধর করে না। উঁচা জাজিম, কম্বল আর প্লেট দেয়। এটা আমাগো ঘরের থেইক্যা ভালা।’

কতজন বাংলাদেশী সফর জেলে আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার। আমি যখন ছিলাম তখন আমার সিরিয়াল আছিল ২৯ হাজার ৬৩৩ নম্বর। বেশির ভাগ ধরা পড়েছে জাল ভিসার কারণে।

এর জন্য কারো এক মাস, আবার কারো ১৫ দিনের জেল হয়েছে। সাজা শেষ হলে তখন সেখান থেকেই এয়ারপোর্টে দিয়ে যাচ্ছে জেলের লোকজন। আমাকে বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায়। ২৯ দিন জেল খেটে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেশে আসি।’

তিনি আরো বলেন, কাতারে যাওয়ার পর ছয় মাস কাজই পাইনি। তাই দেশে এসে আমাকে যে ফার্মেসির মালিক পাঠিয়েছিল, তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পাত্তাই দেননি। পরে আমি থানায় যাই। দারোগা (সাব ইন্সপেক্টর) আমাকে বলেন, তুমি তো দুই বছরের চুক্তিতে গিয়েছিলা। ১৮ মাস কাতারে ছিলা। তাই এ নিয়ে আর জিডি করার দরকার নেই বলে ফিরিয়ে দেন।

তবে তিনি ওই দারোগার নাম জানাতে পারেননি। কারাগারে থাকা অবস্থায় দূতাবাসের কর্মকর্তা কি আপনাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি যে ২৯ দিন ছিলাম, ওই সময় কোনো কর্মকর্তাই আসেননি।

তবে অন্যান্য দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দেখেছি তাদের দেশের নাগরিকদের খোঁজখবর প্রতিনিয়ত নিতে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদেশে আমাদের দেশের দূতাবাসের কাজ হচ্ছে নাগরিকদের সমস্যা দেখা। কিন্তু এটা যেন আমাদের দূতাবাসের লোকজন ভুলেই গেছেন। আপনারা ভালোভাবে খোঁজ নেন, তাহলে জানতে পারবেন আমি ঠিক বলেছি কি না?

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে বর্তমানে তিন লাখের মতো বাংলাদেশী অবস্থান করছেন। এর মধ্যে নারী কর্মীও আছেন। আর প্রতি মাসে দেশটিতে যাচ্ছেন গড়ে ৮-১০ হাজার শ্রমিক। তবে কাতার সরকার ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে মেডিক্যাল ও ভিসা প্রসেসিং চালু করলেও এখনো জনশক্তি ব্যুরোর ১০ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট অসত্যায়িত ভিসায় বাংলাদেশীদের পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ই-বার্তা /  তামান্না আলী প্রিয়া