ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ শাস্তি ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ড!

ঢাকার অলিগলিতে এখন হরহামেশাই  মিলছে অবৈধ ক্যাসিনোর সন্ধান। এই ক্যাসিনোকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে পড়েছে মাদক, অস্ত্র ও অর্থ পাচারের মতো ভয়াবহ সব অপরাধ।

এই ক্যাসিনো বন্ধ করা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও জুয়ার আধুনিকতম এই সংস্করণের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের প্রচলিত জুয়া আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার সুযোগ একেবারেই নেই। কারণ, দেশে ক্যাসিনো চালালে কি ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনও আইন নেই।

দেহসে মানি লন্ডারিংসহ অন্য অপরাধ গণ্য না করা হলে এবং নতুন আইন করা না হলে ‘ক্যাসিনো কাণ্ডে’ জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে ১৮৬৭ সালের ‘প্রকাশ্যে জুয়া আইনে’।

ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুতে জারি করা ১৫২ বছরের বৃদ্ধ এই আইনটি এখনও অপরিবর্তিত থাকায় এর শাস্তি এখন হাসির খোরাকের কাছাকাছি। এ আইনে জুয়া খেলার অপরাধ সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ড!

তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রবিশেষে উভয় দণ্ড একত্রে কার্যকর করার বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে। যাদের কোটি কোটি টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে বা পরের অভিযানে অর্থসহ শত শত ভরি সোনা পাওয়া গেছে আইনটিতে তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে এই সাধারণ শাস্তি! পাড়ার নাইন কার্ড খেলা বখাটে আর ক্যাসিনো পরিচালনাকারীদের তফাৎ করারও সুযোগ নাই এই আইনে।

এর ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, হাউজিসহ বিভিন্ন জুয়া খেলা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে একেক নামে রয়ে গেছে। এ কারণে ব্রিটিশ আমলে জুয়াড়িদের ভয় দেখাতে এবং স্বাভাবিক জীবনে সহজে ফেরাতে ১৮৬৭ সালে প্রকাশ্যে জুয়া আইন করা হয়েছিল। এরপর ভারত-পাকিস্তান বিভাগ এবং আরও পরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ হয়ে ৪৮ বছর পার হলেও এই আইনটি আর সংশোধন হয়নি। ফলে ব্রিটিশ আমলের ২০০ রুপিতে যেখানে ৫০ মণের বেশি ধান কেনা যেত, সেই ব্রিটিশ রুপিই দেশভাগের কারণে পাকিস্তানি রুপিয়া হয়ে বাংলাদেশি টাকা হিসেবে পরিবর্তনের পথ পাড়ি দিলেও এই আইনে শাস্তির অঙ্কের পরিমাণটা ওই ২০০ই রয়ে গেছে। এখনও সেই শাস্তি ২০০ টাকা মাত্র।

সরকারের পর সরকার বদলালেও আইনটিতে আসেনি কোনও সংস্কার। ওই আইনটিই এখনও দেশে জুয়া বন্ধের একমাত্র আইন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ক্যাসিনো খেলার গুটি১৮৬৭ সালের জুয়া আইন দিয়ে ২০১৯ সালের ক্যাসিনো অপরাধের বিচার তাহলে কতটা যৌক্তিক?

এমন প্রশ্ন করা হলে আইনজীবীসহ সমাজবিজ্ঞানীরা আইনটি পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রযোজ্য অন্য আইনগুলোর সহায়তা নিয়ে এসব জুয়াড়ির ও জুয়া সংশ্লিষ্টদের বিচারের প্রস্তাব দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ১৮৬৭ সালের জুয়া আইন দিয়ে ২০১৯ সালের ক্যাসিনোসংশ্লিষ্ট অপরাধের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা অনুচিত বলে মনে করেন তিনি। এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘জুয়া খেলা শুধু একটি মাত্র অপরাধ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও অনেক অপরাধ। যেমনটা, ক্যাসিনো নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক ওঠায়, সেখানে প্রচুর অর্থের লেনদেন দেখা যাচ্ছে। তাই অন্যান্য অপরাধ রোধের চিন্তা থেকেই জুয়া খেলা নজরদারিতে আনা ও বন্ধ করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সরকারকেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দেখা উচিত।’

বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্রকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।
আর ১৮৬৭ সালের প্রকাশ্য জুয়া আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় (বাংলাদেশের মধ্যে) যে কোনও ব্যক্তি যে কোনও ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ বা প্রাচীরবেষ্টিত স্থানের মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসাবে অনুরূপ স্থানকে সাধারণ জুয়ার স্থান হিসাবে ব্যবহার করতে দিলে এবং যে কেউ এসব স্থানকে ব্যবহারের দায়িত্বে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন অথবা যে কোনও সাহায্য করলে এবং ওইসব স্থানে যে কেউ জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে অর্থ প্রদান করলে সে অভিযুক্ত হিসেবে অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা এবং অনূর্ধ্ব ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে ক্যাসিনোর সন্ধান মিলছে দেশের বিভিন্ন ক্লাবে। যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চলছে গ্রেফতার কার্যক্রম। আর ক্যাসিনো চালানোর পেছনে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, ঠিকাদার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বিদেশি কিছু নাগরিকের সম্পৃক্ততার তথ্যও উঠে এসেছে।