‘খালেদার সিঙ্গেল খাট, ওয়াশরুমে ইঁদুর-তেলাপোকা’!

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে একটি সিঙ্গেল খাটে শুতে দেয়া হয়। আর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত ওয়াশরুম থেকে বের হয় ইঁদুর, তেলাপোকা। আর যে কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে সেখানে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যায়। এ কারণে অনেক সময় ভাপা গরমে অন্ধকারের মধ্যে থাকতে হয় দেশনেত্রীকে।

 

মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি শোয়ার জন্য তাকে ছোট্ট একটি খাট দেয়া হয়েছে। তিনি অসুস্থ আর পায়ে ব্যাথা থাকার কারণে চেয়ারপারসনকে কাঁত হয়ে শুতে হয়। এরকম একজন অসুস্থ মানুষের জন্য সিঙ্গেল খাটে পর্যাপ্ত জায়গা হয় না। আর তিনি যে ওয়াশরুম ব্যবহার করেন তা নোংরা, সেখান থেকে তেলাপোকা ও ইঁদুর বের হয়। বিদ্যুৎ থাকে না, যার ফলে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারেও থাকতে হয়।’

 

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও অভিযোগ করেন, ‘খালেদা জিয়ার অসুস্থতা পর্যালোচনা করার জন্য সরকার একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঠিকই কিন্তু ওই বোর্ডে পিজি হাসপাতালের যে চারজন চিকিৎসক রয়েছেন তারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘যেসব চিকিৎসক দীর্ঘদিন থেকে দেশনেত্রীর চিকিৎসা করছেন তাদের পরামর্শ নিলে কি এমন ক্ষতি হত?’

 

‘আইন অনুযায়ী একজনের জেলে থাকার অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে’ এমন দাবিও জানান তিনি। বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেলে ছিলেন। তখন তিনি ইচ্ছামতো চিকিৎসা নিতে পেরেছেন। তৎকালিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল জেলে থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু এ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপির চেয়ারপারসনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

 

‘আমরা জানতে পেরেছি, খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি বিভিন্ন জটিল রোগে শয্যাশায়ী। তার পরিবার এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন।’

 

‘আমরা মনে করি, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়াকে এখানে রেখে অসুস্থ বানিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। আমরা তার আইন অনুযায়ী অধিকার সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।’

 

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনও অভিযোগ করেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাবন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।’ কালবিলম্ব না করে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ইউনাইটেডে ভর্তি করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেয়ার জন্যও সরকাররের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায়ের পরপরই খালেদা জিয়াকে আদালতের পাশে নাজিমউদ্দিন রোডের লালদালানখ্যাত ২২৮ বছরের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।

 

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।

 

২০১৬ সালের ২৯ জুন থেকে ছয় হাজার ৪০০ বন্দিকে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ার রাজেন্দ্রপুরের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করে পুরনো কারাগার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দুই বছর চার মাস ১০ দিন পর দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে এই পরিত্যক্ত কারাগারেই দিন পার করছেন খালেদা জিয়া।

 

 

 

ই-বার্তা/ডেস্ক