ঙ্গবন্ধুর খুনিদের জন্য দোয়া প্রার্থনা মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেফতার

ই-বার্তা ।। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে শহীদদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল কাদের তালুকদার বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আজ রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতার ড. ফায়জুল আমীর সরকার গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকাল ৮টার দিকে গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের আগে একাত্তরে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়। উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ দোয়া অনুষ্ঠানে মোনাজাতে নেতৃত্ব দেন গোপালপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. ফায়জুল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা শারমীন, ওসি হাসান আল মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম আক্তার মুক্তা, পৌরমেয়র রকিবুল হক ছানা, জেলা পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের তালুকদার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির টাঙ্গাইল জেলা শাখার আহবায়ক অ্যাডভোকেট কেএম আবদুস সালাম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুস সোবহান তুলাসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, সব সরকারি কর্মকর্তা এবং মিডিয়া কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দোয়া অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ ফায়জুল বলেন, হে আল্লাহ তুমি পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী, যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদের বেহেশত নসিব করো। হে আল্লাহ তুমি বিচারের পর তাদের বেহেশত নসিব করো। দোয়া অনুষ্ঠানে তার এ ধরনের বক্তব্যে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যান। উত্তেজনা দেখা দিলে উপস্থিত নেতারা সবাইকে শান্ত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা শারমীন জানান, দোয়া অনুষ্ঠানে এ ধরনের দুর্ভাগ্যজনক বক্তব্য শুনে তিনি নিজের কানকে প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি। একই কথা আবার রিপিট করলে তিনি মনোযোগ দিয়ে তা শোনেন। আশপাশে যারা ছিলেন তাদের কাছ থেকে তিনি শতভাগ নিশ্চিত হন। ওসি হাসান আল মামুন বলেন, এমন ঘটনা সত্যিই হতবাক হওয়ার মতো। ঘটনার পরপরই তাকে আটক করা হয়। মামলার পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার জানান, একুশে গ্রেনেড হামলা মামলার প্রধান তিন আসামির বাড়ি গোপালপুরে। গোপালপুরের দুই জঙ্গি সম্প্রতি ক্রসফায়ারে মারা গেছে। অধ্যক্ষ ড. ফায়জুলের মতো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মানুষ, যারা জামায়াত শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের মুখ থেকে এমন কথা বের হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমরা তার কঠিন শাস্তি চাই। সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গোপালপুর কামিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুস সোবহান তুলা জানান, মুখ ফসকে হয়তো তিনি এ কথা বলেছেন। তবে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আহাদুজ্জামান জানান, শনিবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে মহান বিজয় দিবসে একাত্তরের বীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বেহেশত নসিব কামনা করেন ফায়জুল।
জানা গেছে, ফায়জুল কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের আবদুল মান্নান সরকারের ছেলে। গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসায় ২০০৯ সালে তিনি যোগদান করেন। এর আগে তিনি কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসায় এক বছর ও জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেন।