চিরনিদ্রায় শায়িত পলান সরকার

ই-বার্তা ডেস্ক।।   নিজের উদ্যেগে গড়ে তোলা  পাঠাগারের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আলোর ফেরিওয়ালা পলান সরকার।শনিবার সকাল ১০টার দিকে বাঘার হারুনুর রশিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তারা জানাজা সম্পন্ন হয়।

তঁনিজের টাকায় বই কিনে পাঠকদের মাঝে সে বই বিনা পয়সায় বিলি করে সারা ফেলে দিয়েছিলেন সারা দেশে।৩০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রাম থেকে বই বিলি করে গেছেন আশপাশের অন্তত ২০ গ্রামজুড়ে। তার বেশির ভাগ পাঠক ছিল গ্রামের গৃহিণীরা। ২০১১ সালে একুশে পদক এবং ২০০৭ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে তার বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেওয়া হয়।

শুরুর দিকে পলান সরকারের কর্মকাণ্ড শুধু তার এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সর্ব প্রথম ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ তাকে তুলে আনে আলোকিত মানুষ হিসেবে। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’তে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তার ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

১৯২১ সালের ১ আগস্ট রাজশাহীর নাটোরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম বাগাতিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন পলান সরকার। আসল হারেজ উদ্দিন সরকার  হলেও তার মা  তাকে ‘পলান’ নামে ডাকতেন। ছেলেবেলায় পলান তার বাবা মাকে হারান। দারিদ্রতার কষাঘাতে ষষ্ঠ শ্রেণির পর ইতি টানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার। কিন্ত  বই পড়া এবং অন্যকে বই পড়িয়ে আলো সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে দিতেই তার বেড়ে ওঠা। নানার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৪০ বিঘা জমি থেকে ১৯৬৫ সালে ৫২ শতাংশ জমি দান করে বাউসা হারুন অর রসিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা জন্য। ১৯৯০ সাল থেকে বাউসার ওই বিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় থাকা প্রথম ১০ জনকে বই উপহার দিতে শুরু করেন। সেই থেকে শুরু এর কখন ও থেমে থাকেন নি পলান সরকার । বাংলার ধুলো মাখা পথ চষে বেড়িয়েছেন বই ভর্তি ঝোলা ঘাড়ে নিয়ে ।

এরপর অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও বইয়ের আবদার করলে সিদ্ধান্ত নেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পায়ে হেটে পাঠকের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বিনা পয়সায় বই বিলি করার মাধ্যমে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাবেন যাতে করে তার মৃত্যুর পর ও জ্বলতে থাকে সেই আলো।

ই-বার্তাঃ আরমান হোসেন পার্থ