ছাত্রলীগের দুর্নীতি আড়াল করতেই ছাত্রদলের কাউন্সিল বন্ধঃ রিজভী

ই- বার্তা ডেস্ক।।   বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ছাত্রলীগের হাত থেকে কেউ নিরাপদ নয়। ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দুর্নীতি ও অনিয়ম ঢাকতেই ছাত্রদলের কাউন্সিল বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন । 

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন।

অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিল হলো একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সেই কাউন্সিল আজকে আদালতের মাধ্যমে বন্ধ করা হয়েছে। গণতন্ত্রের হত্যাকারীরা আজকে গণতন্ত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছে। কাউন্সিলে একটি উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছিল। সেই আমেজ সরকার সহ্য করতে পারল না।

তিনি বলেন, হামলা-নির্যাতনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্টের মাধ্যমে একটি কর্তৃত্ববাদী পরিবেশ কায়েম করার জন্য ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে। দুর্নীতি টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজির কারণে তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা বহিষ্কার করেছে চাঁদাবাজ লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে।

খালেদা জিয়া কী দুর্নীতি করেছেন যে তাকে অবরুদ্ধ করেছেন, প্রশ্ন করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। আসলে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি এই দেশে বারবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। সে জন্যই তিনি বন্দি। তিনি বাইরে থাকলে মধ্যরাতের নির্বাচন করতে পারতেন না। ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড ছাত্রলীগের হাতে বইখাতার বদলে অস্ত্র বন্দুক-চাপাতি তুলে দিয়েছেন এবং হলগুলোতে মিনি কনসেনট্রেশান ক্যাম্প তৈরি করে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার যেভাবে ছাত্রদের প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তুলছে, এটি কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয় বলে জানিয়েছেন রিজভী।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে তাদের ৩০-৪০ জন জঙ্গি সন্ত্রাসী নেতাকর্মী লাঠি, রড ও ইট নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। মোবাইল ছিনতাই করেছে।

নারকীয় জঙ্গি হামলায় ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। এ জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপি নেতা বলেন, বিগত একদশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের প্রায় প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়েছে, তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতিও শেখেনি। একটি ভালো পারিবারিক মূল্যবোধও বেড়ে উঠেছে বলে মনে হয় না।

তিনি বলেন, সোমবার তাদের হিংসার আচরণে মনে হয়েছে তারা বদরুল লীগ, ছিনতাই লীগ, চাঁদাবাজ লীগ, জঙ্গি লীগ, চাপাতি লীগ, হাতুড়ি লীগ, দখল লীগ, ইয়াবা লীগ, টেন্ডার লীগ, ধর্ষক লীগের অচলায়তনে পতিত থেকে ছাত্রসমাজের কাছে পূতিগন্ধময় হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের অনুসারী এই সংগঠনটির চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, হত্যা ও দখলের খবর বের হচ্ছে।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস উগ্রতা কখনও রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। মনে রাখতে হবে এই ক্যাম্পাস প্রতিটি শিক্ষার্থীর, কোনো রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন নেই, যারা ছাত্রলীগের বর্বর হামলার শিকার হয়নি।

রুহুল কবির বলেন, একটি সফল কাউন্সিলে নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদল নতুন উদ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা ছাত্রলীগ সহ্য করতে পারছে না। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। যখন ছাত্রদল সারা দেশের কাউন্সিরদের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছে, তখন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ৮৬ কোটি টাকার চাঁদাবাজির খবর সারা দেশকে চমকিয়ে দিয়েছে।

রিজভী বলেন, একদিকে ছাত্রদলের গণতন্ত্র চর্চার প্রশংসা, অন্যদিকে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে দেশবাসীর কাছে যেভাবে হেয় হয়েছে, সেটিকে ঢাকার জন্যই এখন তারা সন্ত্রাসীর পথ অবলম্বন করছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ছাত্রদলকে তারা সহ্য করতে পারছে না।