জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’

ই-বার্তা ডেস্ক ।।  বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ করা হচ্ছে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এই প্রস্তাব করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে নীতিগত সমর্থন দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বৈঠকের পর মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমি মন্ত্রিসভায় নাম পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরেছি। প্রধানমন্ত্রীও নীতিগতভাবে সমর্থন দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, আমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়ে চিঠি দেব, যাতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং কাজটি দ্রুত শুরু করা হয়।

উল্লেখ্য,বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকায় এই জাদুঘরটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে গড়ে তোলা হয়েছিল। এক সময়কালের সার্কিট হাউস হিসেবে ব্যবহৃত এই ভবনেই রাষ্ট্রপতি জিয়া খুন হয়েছিলেন।

এদিকে মন্ত্রিসভায় নওফেলের প্রস্তাবটিতে সমর্থন জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

নওফেল প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ভবনটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। এটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত। এক সময় সার্কিট হাউস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিও জড়িয়ে আছে। নিরীহ বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে পাকিস্তানি সেনারা ওই ভবনে রেখে নির্যাতন করেছিল। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমান সার্কিট হাউসে এসে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯১ সালে তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর সেটিকে আকস্মিকভাবে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করেন, যা চট্টগ্রামের আপামর মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নেননি। সেখানে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিও নেই। শুধু ১৯৭১ সালে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে যে ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে প্রচার হয়েছিল, সেটি এনে সেখানে রাখা হয়েছে। তাহলে জিয়াউর রহমানের নামে কেন জাদুঘর হবে?

এ সময় নওফেল আরও বলেন, দর্শনীয় স্থান হলেও জিয়ার নামে স্থাপনা হওয়ায় সেখানে চট্টগ্রামের মানুষ যান না। অথচ এটিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করে একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তর করা হলে এটি দেশের সম্পদে পরিণত হবে।

১৯১৩ সালে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ি এলাকায় তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকরা দৃষ্টিনন্দন একটি ভবন নির্মাণ করে। পরে এটি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস হিসেবে রাষ্ট্রীয় অতিথিদের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ই-বার্তা /  তামান্না আলী প্রিয়া