টেলিভিশন অভিনেতা থেকে বলিউড তারকা

ই-বার্তা ।।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেলিভিশন তারকারা চলচ্চিত্র তারকাদের চাইতে বেশি উপার্জন করে। এমনকি খ্যাতিতেও অনেকে চলচ্চিত্র তারকাদের ছাড়িয়ে গেছেন।

অথচ ভারতীয় উপমহাদেশে ভিন্ন চিত্র টেলিভিশনে অনেক ভালো কাজ করেও হাই প্রোফাইল তারকার তকমা জোটানো কঠিন হয়ে পড়ে। খোদ বলিউডেই রয়েছে এমন অনেক তারকা, যাঁরা টেলিভিশনে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও তারকাখ্যাতি পেয়েছেন চলচ্চিত্রে। চলুন জানা যাক:

আদিত্য রয় কাপুর

একজন ভিডিও জকি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ‘আশিকি ২’ খ্যাত এই তারকা। তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়ও ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তাঁর আকর্ষণীয় শারীরিক ভাষা ও স্নিগ্ধ হাসি তাঁকে বলিউডের দরজা খুলে দেয়। প্রথম ছবি ‘আশিকি ২’ তে মদ্যপ হতাশাগ্রস্থ প্রেমিকের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় তাঁকে রাতারাতি তারকাখ্যাতি এনে দেয়।

প্রাচি দেসাই

২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ছোট পর্দা কাঁপিয়েছেন এই তারকা। ওই সময় তাঁর অভিনীত ‘কসম সে’ ধারাবাহিকটি ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। অসাধারণ অভিনয় করে জিতে নেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। মাঝে ২০০৭ সালে ‘ঝালাক দিখিলা যা’ নামক নাচের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলে হাতছানি দেয় ডাকে বলিউড। ২০০৮ সালে ‘রক অন’ ছবির মধ্য দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয় প্রাচির। ছবিতে তিনি একজন রকস্টারের অন্তর্মুখী স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই’, ‘আযহার’ ও ‘রক অন ২’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করে পৌঁছে যান আলাদা উচ্চতায়।

রাজপাল যাদব

ভারতের ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’ এর সাবেক ছাত্র ছিলেন এই কৌতুক অভিনেতা। প্রতিভা ও পরিশ্রমের সমন্বয় মানুষকে যে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তার জীবন্ত উদাহরণ রাজপাল যাদব। নব্বইয়ের দশকে তিনি ‘মুঙ্গেরি কি ভাই নরাঙ্গিলাল’ নামক একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন। ১৯৯৯ সালের দিকে বলিউডে অভিষেক হলেও নামমাত্র কিছু চরিত্রে তাঁকে দেখা যেত। প্রথম আলোচনায় আসেন রামগোপাল ভার্মা পরিচালিত ‘জঙ্গল’ ছবিতে অভিনয় করে। এ পর্যন্ত ৫টি ভাষার প্রায় ১০০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই তারকা।

আয়ুষ্মান খুরানা

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে টেলিভিশনে ভিডিও জকি হিসেবে কাজ করতেন। এছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। সাবলীল অভিনয় ও সংগীত প্রতিভা তাঁকে সহজেই বলিউডে সুযোগ করে দেয়। প্রথম ছবি ‘ভিকি ডোনার’ এ অভিনয় করে আলোচনায় চলে আসেন আয়ুষ্মান। সেই সাথে ফিল্মফেয়ার জিতে নেন সেরা নবাগত অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার।

সুশান্ত সিং রাজপুত

‘পবিত্র রিস্তা’ নামক একটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করে আকাশচুম্বী সফলতা পেয়েছিলেন এই তারকা। টেলিভিশনে এত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও বলিউডেকে তিনি এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। ২০১৩ সালে তাঁর প্রথম ছবি ‘কোয়ি পো চে’ তে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। এরপর ‘সুধ দেশী রোমান্স’, ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি’ ছবিতেও তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। ২০১৬ সালে ‘এমএস ধনিঃ দ্য আনন্টোল্ড স্টোরি’ ছবিতে অভিনয় করে মানুষের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যান সুশান্ত।

আর মাধবান

শুরুতে বিভিন্ন টেলিভিশন ধারাবাহিকে ছোটছোট চরিত্রে অভিনয় করতেন বলিউডের অন্যতম সফল এই অভিনেতা। ২০০০ সালে তামিল ছবি ‘আলাইপায়ুদে’ তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। সেখানে আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে তারকা খ্যাতি পেয়ে যান। এরপর বলিউডে ‘র‍্যাহনা হ্যায় তেরে দিলমে’, ‘রঙ দে বাসন্তী’, ‘থ্রী ইডিয়টস’ এর মতো ছবিতে অভিনয় করে হয়ে উঠেন মহা তারকা।

বিদ্যা বালান

টেলিভিশনে বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্র ও মিউজিক ভিডিওতে কাজের মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন বিদ্যা। এরপর ১৯৯৫ সালের দিকে ‘হাম পাঁচ’ নামক একটি কমেডি ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করেন। দীর্ঘদিন টেলিভিশনে কাজ করার পর ২০০৩ সালে বাংলা চলচ্চিত্র ‘ভালো থেকো’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। বলিউডে তাঁর প্রথম ছবি ‘পরিণীতা’। ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করে আলোচনায় চলে আসেন বিদ্যা। এরপর কাহানী, লাগে রাহো মুন্না ভাই, ডার্টি পিকচার এর মতো ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যান।

ইরফান খান

ক্যারিয়ারের শুরুতে বেশ সংগ্রাম করেছিলেন এই অভিনেতা। কিন্তু কখনো খ্যাতির পেছনে ছোটেন নি। অসামান্য মেধা, পরিশ্রম ও ধৈর্য তাঁকে বলিউডের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এক সময় ছোট পর্দায় ‘শ্রীকান্ত’, ‘ভারত এক খোঁজ’ নামক টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করতেন। আর এখন আন্তর্জাতিক ছবি এবং ওয়েব সিরিজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

শাহরুখ খান

তাঁর টেলিভিশন ক্যরিয়ার কমবেশি সবারই জানা। মূলত টেলিভিশনে তাঁর অভিনীত ‘ফৌজি’ ও ‘সার্কাস’ ধারাবাহিকগুলো তাঁকে বলিউডের পথ খুলে দেয়। যদিও তিনি নাকি শুরুর দিকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চান নি। ব্যাক্তিগত হতাশা থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য চলচ্চিত্রে টুকিটাকি কিছু কাজ করতে চেয়েছিলেন মাত্র। এরপর বাকিটা ইতিহাস।

ই-বার্তা/এস