ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

ই-বার্তা ডেস্ক ।।  গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তিসহ ৭ দফা দাবিতে।

 

শনিবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে এতে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বা তাঁর দল বিকল্পধারার কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম সভাপতি ড.কামাল হোসেন বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত কর্মী ছিলাম তাঁর জীবদ্দশার শেষ দিন পর্যন্ত। আমি দেখেছি, তার নেতৃত্বে কিভাবে ঐক্য গঠিত হয়েছিল।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জন্য শুভ সূচনার দিন। আজকে গণমানুষের আন্দোলনের নতুন সূচনা হল। স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আমরা ১০ বছর ধরে আন্দোলন করছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ, হাজার হাজার মানুষ কারারুদ্ধ, হাজারো মানুষ গুম হয়ে গেছে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজকে নতুন একটা লড়াই শুরু হল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, আজকে ইতিহাসের একটি ঐতিহাসিক দিন। গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকবে। 

অভিন্ন দাবির মধ্যে রয়েছে-

১. সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা।

২. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।

৩. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।

৪. শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল।

৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন।

৬. দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা।

৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়া।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে:

১। মুক্তি সংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা।

২। ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।

৩। দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা।

৪। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চয়তার বিধান করা।

৫। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।

৬। রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা নিশ্চিত।

৭। জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

৮। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া।

৯। ‘সব দেশের সাথে বন্ধুত্ব- কারো সাথে শত্রুতা নয়’ এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা।

১০। বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা।

১১। দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনী আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

 

 

 

ই-বার্তা / ডেস্ক