ঢাকার বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের তীব্র বিক্ষোভ, যানচলাচল বন্ধ

ই-বার্তা।। বাস চাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদের ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো আজও বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভের চেষ্টা করেছে শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশের বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।

 

এ ছাড়া শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে মিরপুর ও ফার্মগেটে প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফলে দুটি এলাকাতেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে শিক্ষার্থী নিহতের জের ধরে টানা তৃতীয় দিন মিরপুর থেকে উত্তরা, গুলশান ও বাড্ডা রুটের যান চলাচল করছে না। ফলে এই পথে চলাচলকারী নাগরিক চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জানা গেছে, সকালে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসংলগ্ন সড়কে কিছু শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পিকআপ, বাস-মিনিবাসে তুলে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

 

এ ছাড়া ইসিবি চত্বরে জড়ো হয়ে মিরপুরের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলেও পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে কালশীর দিকে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে সকালে মিরপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিরপুর-২ ও ১০ নম্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়। এ বিষয়ে মিরপুরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কামরুল যুগান্তরকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় মিরপুর ২-এর সনি সিনেমা হল ও মিরপুর ১০-এ সড়ক অবরোধ করে ছাত্ররা বিক্ষোভ করছে। শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে এ সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানান ওসি।

 

এদিকে সকাল ১০টা থেকে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। পরে তারা কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়েঢ অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী মামুন হোসেন বলে, আমরা ন্যায়বিচার চাই। আমাদের বন্ধুরা এভাবে মারা যাবে, আর আমরা কিছু করব না, তা হতে পারে না। আমরা আমাদের বন্ধুদের এভাবে মরতে দিতে পারি না। আরেক শিক্ষার্থী বলে, নৌমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। বাসচাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর তার প্রতিক্রিয়া অমানবিক। বিক্ষোভের কারণে রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বহু মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।

 

উল্লেখ্য, রোববার দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মীম নিহত হন। বাসচাপায় আহত হন আরও ১৩ জন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হয়ে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা দিনভর বিক্ষোভ করে। এদিন মিরপুর ও ভাটারায়ও বিক্ষোভ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা ব্যাপকহারে যানবাহনে ভাঙচুর চালায়। ফলে গতকাল দুপুর থেকে রাজধানীর পশ্চিম-উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

 

আজ সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সরেজমিন মিরপুর থেকে কুড়িলের বিশ্বরোড পর্যন্ত ঘুরে সড়কে তেমন কোনো গণপরিবহন দেখা যায়নি। দেখা যায়, পল্লবী, কালশী, ইসিবি চত্বর, মাটিকাটা ও শেওড়ায় সড়কের ওপর শত শত মানুষ বাসের জন্য অপক্ষো করছিলেন। হঠাৎ করে কোনো বাস আসলে তাতে ওঠার জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন। কিন্তু এসব বাসও তাদের নিচ্ছিল না। এ ছাড়া রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়েও তাদের হুড়োহুড়ি করতে দেখা যায়। তবে নারী যাত্রীরা পড়েছেন সবচেয়ে বিপাকে। তারা কোনো ধরনের যানবাহনেই উঠতে পারছিলেন না।

 

 

ই-বার্তা/ডেস্ক রিপোর্ট