তিন দিন ধরে মৃত মায়ের আঙুল চুষল শিশু নাহিদ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় স্ত্রীকে হত্যা করে লাশের পাশে দেড় বছরের শিশুসন্তান নাহিদকে রেখে পালিয়ে যায় ঘাতক স্বামী আল আমিন। আর নাহিদ মৃত মায়ের আঙুল চুষে কাটিয়ে দেয় তিন দিন।

পরে ক্ষুধার যন্ত্রণা আর দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে অনবরত কান্না করতে থাকে। নাহিদের কান্নার শব্দ শুনে পার্শ্ববর্তী বাড়ির এক গৃহবধূ তালাবদ্ধ ঘরের কাছে গিয়ে দুর্গন্ধ পায়। এরপর আশপাশের লোকজনদের ডেকে এনে দরজা খুলে মায়ের লাশের পাশ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে।

লোমহর্ষক এ ঘটনাটি ঘটে ফতুল্লার কোতালেরবাগ বৌবাজার এলাকায়। ঘাতক আল আমিন ওই এলাকার আছিল্লা সর্দারের ছেলে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে বুধবার বিকেল ৬টায় ওই বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পাশের বাড়ির গৃহবধূ নাছিমা আক্তার জানান, আমি বাসাবাড়িতে গিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াই। বিকালে বাসায় ফিরে আল আমিনের ঘরে তার দেড় বছরের শিশুপুত্র নাহিদের কান্নার শব্দ শুনি। বেশ কিছুক্ষণ কান্নার শব্দ শুনে টিনের একচালা ঘরের কাছে গিয়ে দেখি বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা দেয়া। এরপর টিনের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখি আল আমিনের স্ত্রী রিমা আক্তার (২২) খাটের উপর দুই হাত ছড়িয়ে নিথর হয়ে পড়ে আছে।

তিনি বলেন, আর শিশুটি বুকের কাছে বসে রিমার আঙুল চুষছে। ওই সময় ঘর থেকে মারাত্মক পচা দুর্গন্ধ পেয়ে আশপাশের লোকজনদের ডেকে নিয়ে আসি। এরপর ঘরের তালা ভেঙে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেই।

এলাকাবাসী জানান, আল আমিন এর আগে একটি গার্মেন্টকর্মী মেয়েকে বিয়ে করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এতে ওই মেয়ে কয়েক মাস ঘর-সংসার করে পালিয়ে যায়। তার নাম জানাতে পারেনি কেউ। পরে দুই বছর পূর্বে গার্মেন্টকর্মী রিমাকে (২২) বিয়ে করে আল আমিন। বিয়ের পর থেকে রিমাকেও কারণে অকারণে মারধর করত। এতে রিমার গর্ভে একটি সন্তান নষ্ট হয়। পরে আবারো সন্তান নেয় রিমা।

কয়েক মাস আগে রিমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর এক সপ্তাহ আগে রিমাকে আত্মীয়ের বাসা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে আল আমিন। সোমবার সকালে বাড়ির আশপাশের লোকজন রিমাকে ঘরের সামনে বসে থাকতে দেখেছে।

এলাকাবাসী আরো জানায়, আল আমিন ও তার বড় ভাই বাবু এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। সম্প্রতি বাবুকে মাদকসহ পুলিশ গ্রেফতার করে।

ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহজালাল জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত রিমার স্বামী আল আমিনসহ তাদের পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। সবাই আত্মগোপন করেছে। আল আমিনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।