তীরে এসে কেন তরী ডুবায় টাইগাররা?

ই-বার্তা ।। কথায় আছে শেষ ভালো যার সব ভালো তার। ‘এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অথবা নিদাহাস ট্রফি’ প্রতিবারই পুরনো সেই অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে টাইগাররা।

তাই মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে যাওয়ার থেকে নদীর তীরে এসে ডুবে যাওয়াটা যেমন কষ্টকর, ঠিক তেমনি টাইগার সমর্থকদের জন্য বারবার জয়ের খুব দ্বার প্রান্তে এসে পরাজয়ের কারণটাও খুবই কষ্টকর।

এখন আসা যাক মূল কথায়, কেনো বরাবরই পচা শামুকে পা কাটছে টিম-টাইগারদের? সবার কাছেই এ প্রশ্নের জবাব একটাই, সেটি হলো বাংলাদেশ দলে ডেথ ওভারে বোলিং করার মতো বোলারের ঘাটতি, অথবা ঝড়ো ইনিংস খেলে যেকোনো দলকে মুহূর্তের মধ্যে লন্ডভন্ড করে দেয়ার মতো একজন ব্যাটসম্যানের ঘাটতি।

সত্যিই কি এই একটি কারণে টাইগার দলের ভরাডুবি?

প্রথমে আসা যাক ডেথ ওভারে বোলিং এর বিষয়টাতে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা দু’জন পেস বোলারের তালিকায় নির্বিঘ্নে হয়তো রুবেল-মুস্তাফিজের নাম চলে আসবে। আর ডেথ ওভারে তাদের বোলিং যে খুব বেশি খারাপ তাও কিন্তু নয়। তাই তীরে এসে তরী ডুবানোর দায়ভার কখনোই রুবেল-মোস্তাফিজকে দেয়া যায় না। দুর্ভাগ্যবশত যেকোনো একটি ম্যাচ পরাজয়ের মূল কারণ অথবা প্রধান সমস্যা হিসেবে এটাকে আখ্যায়িত করাও যাচ্ছে না।

কিন্তু তারপরও একটা সমস্যা রয়েই যাচ্ছে, একটি দলের মূল হিসেবে পাঁচ জন বোলারের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। এখন মুস্তাফিজ, রুবেল, সাকিব বাদেও বাকি দুই জন মূল বোলারের ঘাটতিতে ভুগছে টাইগাররা। আর সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েই নিজেদের অবস্থান গড়ে নিচ্ছে প্রতিপক্ষ দল। তাই ‘ডেথ বোলিং কিংবা রুবেল’ এ ধরনের কোনো উত্তরই যৌক্তিক নয়, আসল সমস্যাই হচ্ছে টাইগার একাদশে নিয়মিত দুই জন মূল বোলারের ঘাটতি।

এবার আসা যাক ব্যাটিং প্রসঙ্গে। আচ্ছা বিশ্বের ক্রিকেটে রাঘব বোয়ালদের দলের ফিনিশিং কিংবা লোয়ার ওর্ডারের খেলোয়াররা কি টাইগারদের তুলনায় খুব বেশি মারমুখি ক্রিকেট খেলে থাকে? ভারত অথবা অস্ট্রেলিয়া দুই দেশেরই সীমিত ওভারের ক্রিকেট দলের ১১ জন খেলোয়ারদের যদি আপনি দেখে থাকেন, তাহলে দেখবেন তাদের দলের প্রায় প্রতিটি ব্যাটসম্যান দলের প্রয়োজনে যেকোনো সময় একটি ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে প্রতিপক্ষ দলকে মুহূর্তেই লন্ডভন্ড করে দেয়ার ক্ষমতাটুকু রাখে।

সেই তুলনায় শেষ ওভারগুলোতে কিংবা দলের প্রয়োজনে টাইগার একাদশে এই ধরনের ইনিংস খেলার মতো খেলোয়ার একদম নেই বললেই চলে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে লং ভার্সন ক্রিকেটে যেই ব্যাটসম্যানটি চার নম্বরে ব্যাটিং করতে নামছে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও ঠিক একই স্থানে সেই খেলোয়ারদের ভূমিকাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

যার কারণে বাংলাদেশ দলে একটি শব্দের বিরাট বড় ঘাটতি রয়েছে, যার নাম ‘স্পেশালিস্ট খেলোয়ার’। মূলত ক্রিকেট বিশ্বে প্রায় প্রতি দলেই এরকম কিছু খেলোয়ার থাকে যাদেরকে ‘স্পেশালিস্ট খেলোয়ার’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ফরম্যাটে বিভিন্ন পজিশনে এ সকল খেলোয়ারের বিরাট ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু সেই তুলনায় যদি আপনি বাংলাদেশ দলে এ ধরনের খেলোয়ার খুঁজতে চান, তাহলে হয়তো টি-টোয়েন্টিতে উল্লেখযোগ্য সাব্বির আর টেস্টে মুমিনুল বাদে কাউকেই পাবেন না।

সাব্বিরকে মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে বলা হলেও, ইদানিং তার পারফরম্যান্সে হতাশ হচ্ছে টাইগার সমর্থকরা। যার কারণ, নির্দিষ্ট কোনো পজিশনে সাব্বিরের ব্যাট না করতে পারাটা। কখনো নিচের সারিতে ব্যাট করছে তো কখনো তিন নম্বরের মতো মূখ্য পজিশনে।

একজন খেলোয়ার হয়তো বিভিন্ন পজিশনে ছন্নছাড়া ক্রিকেট খেলে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারবেন না?

যার কারণে বরাবরের মত বাংলাদেশ দলে আবারও একজন ভালো ফিনিশার কিংবা মারকুটে ব্যাটসম্যানের ঘাটতি রয়েই গেলো। আর তার সাথে একজন স্পেশালিস্ট অলরাউন্ডার ও দুই জন মূল বোলারের ঘাটতিতো রয়েছেই। সব মিলিয়ে প্রধান এই তিনটি কারণেই টাইগারদের নৌকা তীরে এসে ডুবে যাচ্ছে। তবে পচা শামুকে পা কাঁটা অথবা বারবার হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে শিক্ষা নেয়ার নামই যে ক্রিকেট।

একে একে সবটাই হলো টাইগারদের সাথে। বাকি শুধু এক দৌড়ে সেই লক্ষ্যটা পূরণ করার। হয়তো খুব বেশি দূরে নেই বিজয়ের অমৃত স্বাদ নেয়ার সেই লক্ষ্যটুকু।

ই-বার্তা/এস