দুই মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা

ই-বার্তা ।।  মিরপুরের দারুস সালাম থানাধীন সরকারি আবাসন কোয়ার্টারে পাইকপাড়ায় সরকারি আবাসিক কলোনিতে যে দুই শিশু কন্যা এবং মায়ের মরদেহ পাওয়া গেছে, সেই শিশুদের হত্যার পর তাদের মা আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পাইকপাড়ায় সরকারি আবাসিক কলোনির সি টাইপ এর ১৩৪ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় থাকত পরিবারটি। সোমবার রাতে খবর পেয়ে সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠায় পুলিশ।

এরপর রাত নয়টার পর ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদেরকে এ কথা নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আত্মহত্যাকারী মা মাইগ্রেনের রোগী ছিলেন। তিনি মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না। নিজের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। আর মারা গেলে সন্তানদেরকে কে দেখবে এটা নিয়ে ছিলেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এ কারণে এর আগেও সন্তানদেরকে একবার বিষ খাইয়েছিলেন মা।‘আত্মহত্যাকারী’ মা জেসমিন আক্তার সরকারি চাকরি করতেন। তিনি খামার বাড়িতে কৃষি অধিদপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী হাসিবুল ইসলাম সংসদ সচিবলায়ে চাকরি করেন। দুই শিশু কন্যার মধ্যে হাসিবা তাসনিম হিমি নয় বছর বয়সী। সে স্থানীয় মডেল একাডেমিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। আর চার বছর বয়সী আদিলা তাহসিন হানি এখনও স্কুল শুরু করেনি।

পুলিশ জানায়, বিকাল পাঁচটার দিকে স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গেই বাড়ি ফেরেন। এরপর হাসিবুল মাগরিবের নামাজ পড়তে স্থানীয় মসজিদে যান। আর নামাজ শেষে বাসায় ফিরলেও দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় তিনি ঢুকতে পারছিলেন না।

এরপর হাসিবুল থানায় ফোন করলে পুলিশের একটি দল রাত সাড়ে সাতটার দিকে ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় দরজা ভেঙে পুলিশ ঘরে ঢুকে। ঘরের ভেতর আরও একটি কক্ষ ভেতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল। পরে সেটিও ভেঙে ভেতরে ঢুকে পুলিশ।

এরপর বিছানায় দুই শিশু কন্যা এবং মেঝেতে মায়ের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম জানান, দুই শিশু কন্যাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলা কেটে হত্যা করেন মা। পরে নিজে পেটে ও গলায় ছুরিকাঘাত করে নিজেও আত্মহত্যা করেন।

মাসুদ বলেন, ‘এর আগেও দুই শিশুকে বিষ পান করিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন মা। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তারা বেঁচে যান।’

‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ওই নারীর মাইগ্রেনে সমস্যা ছিল। তিনি নানা সময় সব কিছু ভুলে যেতেন। চাকরি নিয়েও তিনি টানাপড়েনে ছিলেন। চিন্তা করতেন চাকরি করবেন নাকি সন্তান মানুষ করবেন।’

এই পরিস্থিতিতে ওই মায়ের মানসিক চিকিৎসাও করা হচ্ছিল। সব শেষ গত সপ্তাহেও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তাকে দেখানো হয়। এরপর থেকে তিনি অনেকটা স্বাভাবিকই ছিলেন।

এই ঘটনায় একেবারে মুষড়ে পড়েছেন গৃহকর্তা হাসিবুল ইসলাম। তিনি একটি কক্ষে চুপচাপ বসেছিলেন আর কেঁদে চলছিলেন। তার স্বজনরাও শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসে তাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

এলাকাবাসীও ওই বাড়িটিকে ঘিরে জড়ো হয়েছেন। ঘটনাটি জানতে পেরে সবাইকে আফসোস করতে দেখা গেছে।