দেশের ৩৪ জেলায় এবং রাজধানীর ৭৫টি এলাকায় সংক্রামিত

ই-বার্তা ডেস্ক ।।  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬২১। একই সময়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে।

এ সময়ে একজন চিকিৎসকসহ তিনজন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট ৩৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যে রোগটি দেশের ৩৪ জেলায় এবং রাজধানীর ৭৫টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এসব তথ্য তুলে ধরেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বুলেটিনে অন্যান্য তথ্য উপস্থাপন করেন।

তিনি জানান, সর্বশেষ যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, একজন নারী। তাদের দু’জনের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। একজনের বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছর মধ্যে, অন্যজন সত্তরোর্ধ্ব। এই চারজনের দু’জন ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা, দু’জন ঢাকার বাইরের।

২৪ ঘণ্টায় যে ১৩৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের ২৫ শতাংশের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আক্রান্তদের ২১ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। নতুন শনাক্ত ১৩৯ জনের মধ্যে ৯৬ জন পুরুষ ও ৪৩ জন নারী।

এ সময় অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, যদিও আমরা বয়সভিত্তিক বিভাজন দেখাচ্ছি, যে কোনো বয়সের যে কোনো ব্যক্তি কিন্তু সংক্রমিত হতে পারেন। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে প্রতিরোধের বিষয়ে কোনো বয়সসীমা নেই। প্রত্যেককেই প্রতিরোধের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

জেলাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকায় নতুন রোগীর সংখ্যা ৬২ জন। বাকি ৭৭ জন বিভিন্ন জেলার। বাংলাদেশে নতুন করে আরও চারটি জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই চার জেলা হল- লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও ঝালকাঠি। এ নিয়ে মোট ৩৪ জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ল। তবে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় এখনও কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।

অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, প্রতিটি জেলার তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, যাদের মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে, তারা গত এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ থেকে ওই সব এলাকায় গিয়েছেন। সেজন্য আমরা বারবার সবাইকে সতর্ক করছি, এ সময়ে কেউ ভ্রমণ করবেন না।

নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত মোট ৬২১ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাদের ৫০ শতাংশই ঢাকা নগরীর বাসিন্দা। রোগীদের ৩৫ শতাংশ ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় থাকেন। চট্টগ্রাম বিভাগের রোগী ৬ শতাংশ।

যে তিনজন সর্বশেষ সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে দুজন নারী, একজন পুরুষ। তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন রোগীকে সেবা দেয়ার সময় তিনি আক্রান্ত হন। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা জানান, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১ হাজার ২৫১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩৪০টি নমুনা। গতকালের কিছু নমুনা যেগুলো পরে এসেছিল, সেগুলো যুক্ত করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাই সংগৃহীত নমুনার চেয়ে পরীক্ষার সংখ্যা বেশি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরে এখন ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৪৪২টি পিপিই মজুদ আছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৯ হাজার ১১১ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১ হাজার ৪১৪ জন। বর্তমানে ঢাকার ৯টি ল্যাবে এবং ঢাকার বাইরে ৮টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে।

২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য বাতায়নে (১৬২৬৩) ফোন এসেছে ৫২ হাজার ৯১৫টি, ৩৩৩ নম্বরে ৩৫ হাজার ৪৬১টি এবং আইইডিসিআরের হট নম্বরে (১০৬৫৫, ০১৯৪৪৩৩৩২২২) ফোন এসেছে ৯১ হাজার ৪৫১টি।

এছাড়া কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ৩ হাজার ৮৫ জন চিকিৎসক এবং এক হাজার ৫৪ জন নার্স প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থল ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে আরও ৩০৯ জন দেশে প্রবেশ করেছেন।

আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৭টি বিভাগের ৩৪ জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলায় ২২ জন, গাজীপুরে ২৩, কিশোরগঞ্জে ১০, মাদারীপুরে ১৯, মানিকগঞ্জে ৫, নারায়ণগঞ্জে ১০৭, মুন্সীগঞ্জে ১৪, নরসিংদীতে ৪, রাজবাড়ীতে ৬, টাঙ্গাইলে ২, শরীয়তপুরে ১ এবং গোপালগঞ্জে ৩ জন। এছাড়া ঢাকা সিটিতে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৩১৩ জন।

চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলায় ১২ জন, কক্সবাজারে ১, কুমিল্লায় ৯, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬, লক্ষ্মীপুরে ১ ও চাঁদপুরে ৬ জন। সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় ১ জন, হবিগঞ্জে ১ এবং মৌলভীবাজারে ১ জন।

রংপুর বিভাগের রংপুর জেলায় ২ জন, গাইবান্ধায় ৬, নীলফামারীতে ৩, লালমনিরহাটে ১ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ জন। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় ১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলায় ৫ জন, জামালপুরে ৬, নেত্রকোনায় ১ ও শেরপুরে ২ জন। বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় ৩ জন, পটুয়াখালী ১ জন এবং ঝালকাঠিতে ৩ জন।

এদিকে ঢাকা শহরের ৭৫টি এলাকায় কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। আদাবরে ১ জন, আগারগাঁওয়ে ২, আশকোনায় ১, আজিমপুরে ২, বাবুবাজারে ৩, বাড্ডায় ৪, বেইলী রোডে ৩, বনানী ও বংশালে ৭ জন করে, বাসাবোতে ১২, বসুন্ধরায় ৪, বেগুনবাড়ী, বেড়িবাঁধ, বসিলা, বুয়েট এরিয়া, সেন্ট্রাল রোড, ঢাকেশ্বরীতে ১ জন করে, ধানমণ্ডিতে ১৪, চকবাজারে ৪, ধোলাইখাল, দয়াগঞ্জ, ইস্কাটন, ফার্মগেটে ১ জন করে, গেণ্ডারিয়ায় ৩, গ্রীন রোডে ৫, গুলিস্তানে ২, গুলশানে ৪, হাতিরঝিলে ১, হাতিরপুলে ২, হাজারীবাগে ৮, ইসলামপুরে ২, জেলগেটে ২, যাত্রাবাড়ীতে ১১, জিগাতলায় ৩, কামরাঙ্গীরচরে ১, কাজীপাড়া ও কদমতলীতে ১ জন করে, কোতোয়ালিতে ২, লক্ষ্মীবাজারে ২, মানিকদীতে ১, মীরহাজিরবাগে ২, মিরপুর-১-এ ৫, মিরপুর-৬-এ ২, মিরপুর-১০ নম্বরে ৫, মিরপুর-১১-তে ১০, মিরপুর-১২-তে ৮, মিরপুর-১৩ নম্বরে ২, মিটফোর্ডে ১, মগবাজারে ৪, মহাখালীতে ৭, মোহাম্মদপুরে ১২, মুগদা, নিকুঞ্জ ও নবাবপুরে ১ জন করে, পীরেরবাগ, পুরানাপল্টন, রাজারবাগে ২ জন করে, রামপুরা, রায়েরবাজার, সায়েদাবাদে ১ জন করে, শাহ আলীবাগ ও শাহবাগে ২ জন করে, শান্তিনগরে ৫, সোয়ারিঘাটে ৩, সিদ্ধেশ্বরী ও শনির আখড়ায় ১ জন করে, সূত্রাপুরে ২, তেজগাঁওয়ে ৩, টোলারবাগে ১৯, উর্দূরোডে ১, উত্তরায় ১৭ এবং ওয়ারীতে ১৬ জন।