নুসরাত হত্যায় আসামী ১৬ জনের কার কী ভূমিকা

ই-বার্তা ডেস্ক।। ফেনীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামি ১৬ জন। তাদের মধ্যে ১২ আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৬৪ ধারায় তারা নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

নুসরাতকে হত্যার সাড়ে ছয় মাসের মাথায় এই মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর)। রায়ে ১৬ আসামি সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। নুসরাত হত্যায় কোন আসামির কি ভূমিকা ছিল তা ধরা হলো। সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় নুসরাতকে। ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার ভবনের ছাদে গায়ে আগুন দেওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল হার মানেন শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া এই শিক্ষার্থী। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার দুইদিন পর তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের করা হত্যাচেষ্টার মামলা পরে হত্যামামলায় পরিণত হয়।

তদন্ত শেষে আলোচিত এই মামলার এজহারভুক্ত আটজন এবং এজাহার বহির্ভূত আটজনসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করে গত ৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিআইবি) পরিদর্শক শাহ আলম। নুসরাত হত্যায় আসামিদের কার কী ভূমিকা ছিল তা উঠে এসেছে অভিযোগপত্রে। স্কেচম্যাপ ও ফ্লোচার্টের মাধ্যমে আদালতের কাছে তা তুলে ধরা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, স্থানীয় কাউন্সিলর মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মহিউদ্দিন শাকিল এবং সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন।

মামলার তদন্তে উঠে আসে নুর উদ্দিন, নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে। তার অনুসারী নুর উদ্দিন ১ ও ৩ এপ্রিল কারাগারে সিরাজের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে অধ্যক্ষ সিরাজের পরামর্শে নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নুসরাতকে আগুন দেওয়ার সময় নুর গেটে পাহারার দায়িত্বে ছিলেন। নুর প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে নুসরাতের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। তাই নুসরাতের ওপর তার প্রতিহিংসা ছিল। সিরাজ উদদৌলা নুসরাত হত্যার নির্দেশদাতা ও মূল পরিকল্পনাকারী সিরাজ। কারাগারে আটক সিরাজের সঙ্গে মামলার আসামি শামীম ও নুর উদ্দিন ফেনী কারাগারে দুইবার দেখা করেন। সিরাজ তাদের নির্দেশ দেন নুসরাতকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে। এ প্রস্তাবে নুসরাত রাজি না হলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার নির্দেশ দেন। পুড়িয়ে মারার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালাতে বলেন।

শাহাদাত হোসেন শামীম মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে যখন নুসরাতকে ডেকে নেওয়া ও আগুন দেওয়া হয় তখন উপস্থিত ছিলেন শামীম। শামীম স্বীকারোক্তিতে বলেন, আমি নুসরাতের মুখ চেপে ধরি। দিয়াশলাই কাঠি দিয়ে আগুন ধরানোর জন্য জোবায়েরকে ইশারা করি। হাফেজ আব্দুল কাদের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন কাদের। ২৮ ও ৩০ মার্চ তিনি মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজের সঙ্গে কারাগারে দেখা করেন। তার শয়নকক্ষেই ‘অধ্যক্ষ সাহেব মুক্তি পরিষদের’ সভা ও নুসরাতকে হত্যার চক্রান্ত। উম্মে সুলতানা পপি নুসরাত হত্যার ঘটনায় পপি প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী। সে নুসরাতকে ডেকে সাইক্লোন শেল্টারের তৃতীয় তলার ছাদে নিয়ে যায়। কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার সময় পপি নুসরাতের পা ধরে রাখে। আব্দুর রহিম শরীফ সিরাজের অনুগত ও নুসরাত হত্যার আসামি শরীফ নুসরাত হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিনি ২৮ ও ৩০ মার্চ দুই দফা কারাগারে থাকা সিরাজের সঙ্গে দেখা করেন। সিরাজের মুক্তির দাবিতে গঠিত ‘অধ্যক্ষ সাহেব মুক্তি পরিষদের’ সভা হয় নুসরাত হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে ৪ এপ্রিল। হত্যা পরিকল্পনায় শরীফের দায়িত্ব পড়ে মাদরাসার গেটে।

জাবেদ হোসেন পলিথিন থেকে নুসরাতের সারা শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেন। তিনি ২৮ ও ৩০ মার্চ দুই দফা কারাগারে থাকা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কামরুন নাহার মনি হত্যার সময় মনি নুসরাতের বুকসহ শরীর চেপে ধরেন। সহঘাতক পপি নুসরাতের পা বাঁধার সময় তিনি পপিকে শম্পা বলে ডাকেন। এই কিলিং মিশনে আর কোনো ছদ্ম নাম ব্যবহার করা হয়নি। নুসরাতকে হত্যার সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরবর্তীতে কারাগারে সন্তান প্রসব করেন। আবদুর রহীম শরীফ মাদ্রাসার গেটে পাহারায় ছিলেন।এমরান হোসেন মামুন তিনিও গেটে প্রহরায় ছিলেন যাতে কিলিং মিশনে কেউ প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করতে পারে। ইফতেখার উদ্দিন রানা দায়িত্ব ছিল গেটে থেকে নজরদারি করা।