পারল না বাংলাদেশ!

বীরের মতো খেলে শেষ বলে কার্তিকের ছক্কায় হেরে গেল বাংলাদেশ। আরেকটি স্বপ্নের সমাধি হলো। শেষ দুই ওভারে যখন ভারতে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৪ রান। তখন এক ধরণের বিজয় উল্লাসের প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ সমর্থকরা কিন্তু রুবেলের এক ওভারে ২২ রান নিয়ে নিলে ম্যাচ ভারতের দিকে হেলে পড়ে।

শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ১২ রান। এই রান তাড়া করতে নেমেও নাকানি চুবানি খেতে হয় ভারতকে। অনেক চেষ্টা করেও দলকে জয় উপহার দিতে পারেননি সৌম্য সরকার। শেষ বলে ভারতের দরকার ছিল ৫ রান। সৌম্যকে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে ত্রিদেশীয় ট্রফি নিজেদের করে নেয় ভারত। মাত্র ৮ বলে ৩ ছয় এবং ২ চারে সাহায্যে অপরাজিত ২৯ রান করে দলকে জয় উপহার দেন দিনেশ কার্তিক।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল খেলায় আগে ব্যাট করে সাব্বির রহমান রুম্মনের ৭৭ রানে ভর করে ১৬৬ রান করে বাংলাদেশ। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে ভারত।

টসে জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। রোববার সন্ধ্যায় কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ত্রিদেশীয় সিরিজের খেলায় আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

উদ্বোধনীতে ২৭ রান করেন তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার। এরপর ৬ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। ওয়াশিংটন সুন্দরকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে বল শূন্যে তুলে দেন লিটন। ৯ বলে ১১ রান করে ফেরেন এই ওপেনার। কোনো রান যোগ করার আগেই ফেরেন তামিম ইকবাল। উনাদখতকে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি রোতে শারদুল ঠাকুরের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন তামিম। সাজঘরে ফেরার আগে ১৩ বলে ১ চারের মারে ১৫ রান করেন বাংলাদেশ সেরা এই ওপেনার।

৬৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া দলকে পথ দেখান সাব্বির। প্রথম সারির ৪ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় টাইগাররা। দলের এমন কঠিন বিপদের দিনে বাড়তি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন সাব্বির।

এরপর মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে শেখর ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। চতুর্থ উইকেটে সাব্বিরের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান মুশফিকুর রহিম। ১২ বলে ৯ রান করে ফেরেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ফের ৩৬ রানের জুটি গড়তেই ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটের ফাঁদে পড়েন রিয়াদ। তার আগে ১৬ বলে ২১ রান করে যান মাহমুদউল্লাহ।

রিয়াদের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ফের জুটি বাঁধেন সাব্বির। এই জুটি ২৯ রান তুলতেই বিপদে পড়ে যায়।৭ বলে ৭ রান করে ফেরেন সাকিব। এরপর দ্রুত বিদায় নেন সাব্বির নিজেও। ইনিংসের শুরুর দিকে ব্যাটিংয়ে নামা সাব্বির খেলে যান ১৮.২ ওভার পর্যন্ত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন তারকা এ ব্যাটসম্যান।

টি-টোয়েন্টিতে ২১ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পান সাব্বির রহমান। তার ব্যাটে ভর করে ভারতের বিপক্ষে লড়াই করছে বাংলাদেশ দল। ৭৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাব্বির। রোববার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৫০ বল মোকাবেলা করে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৭ রান করে আউট হন রুম্মন। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ৭ বলের অপরাজিত ১৯ রানের সুবাদে ১৬৬ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশর করা ১৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ভারত। শুরু থেকে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকা ভারতীয় ক্রিকেট দলের লাগাম টেনে ধরেন সাকিব। রোহিত শর্মা এবং শেখর ধাওয়ানের ২.৪ ওভারের ৩২ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব।

ভারতীয় শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন রুবেল হোসেন। বাংলাদেশি এই পেস বোলাররের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন সুরেশ রায়না। এর আগে সাকিব আল হাসানের বলে রুবেল হোসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেয়ার আগে ১০ রান করেন ধাওয়ান।

৩২ রানে দুই উইকেট তুলে নিয়ে বেকায়দায় ফেলে দেন সাকিব-রুবেলরা। কিন্তু উইকেট তুলে নেয়ার এই ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখতে পারেননি তারা। তৃতীয় উইকেটে লোকেশ রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক ধকল সামলিয়ে দলকে খেলায় ফেরান ওপেনার রোহিত শর্মা।

এই জুটির বিচ্ছেদ ঘটান রুবেল হোসেন। তার বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন ২৪ রান করা লোকেশ রাহুল। তার আগে ৫১ রানের জুটি গড়েন তিনি। রোহিত শর্মাকে আউট করে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান নাজমুল ইসলাম অপু। ইনিংসের শুরু থেকে অসাধারণ খেলে যাওয়া ভারতীয় অধিনায়ককে ফেরান অপু। ৪২ বলে ৫৬ রান করে ফিরে যান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত।

পঞ্চম উইকেটে বিজয় শংকরকে সঙ্গে নিয়ে ২৮ বলে ৩৫ রানের জুটি গড়েন মনস পান্ডিয়া। তাদের এই জুটি ভেঙ্গে বাংলাদেশ দলে স্বস্থির পরশ এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৬/৮ রান (সাব্বির ৭৭, মাহমুদউল্লাহ ২১, মিরাজ ১৯; চাহাল ৩/১৮, উনাদখত ২/৩৩)।

ভারত: ২০ ওভারে ১৬৮/৬ রান (রোহিত ৫৬, দিনেশ কার্তিক ২৯*, পান্ডিয়া ২৮)।

ভারত: ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: দিনেশ কার্তিক (ভারত)।