ফুটবলের  কিংবদন্তিদের  চোখে লিও মেসি

লিওনেল মেসি! অসাধারণ, অপ্রতিরোধ্য, অবিসংবাদিত। অভিধানে যত রকম  প্রশংসাসূচক শব্দ আছে তার সবগুলো ব্যবহারের পরেও মনে হয় সঠিকভাবে বর্ণনা করা যাবে না এই ক্ষুদে জাদুকরকে। এই তো মাত্র ১ মাস আগে বর্তমান বার্সেলোনার কোচ ভালভার্দে তো বলেই বসলেন “মেসিকে বর্ণনা করার মতো যথেষ্ট পরিমাণে প্রশংসাসূচক শব্দ পৃথিবীতে এখনো আবিষ্কারই হয়নি।”

তাহলে সমাধান? হ্যাঁ, সমাধান আছে। “মেসি” নামটিকেই একটি প্রশংসাসূচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করলে কেমন হয়? আর এমনটাই হয়েছে স্পেনে। গত বছর স্প্যানিশ অভিধানে  লিওনেল মেসির নাম থেকে উদ্ভব হয়েছে ‘ইনমেসিওনান্তে’ নামের প্রশংসাসূচক শব্দটি। যার অর্থ করলে দাঁড়ায়, “The perfect way to play soccer” বা ফুটবল খেলার সবচেয়ে সঠিক উপায়।

শুধু ভালভার্দেই নয়, পৃথিবীর বড় বড় ফুটবলার, কোচ, ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মেসিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চমকপ্রদ উক্তি  করেছেন। কেউ তাকে সর্বকালের সেরা বলেছেন  কেউ বা তাকে রেখেছেন পেলে-ম্যারাডোনার সাথে একই কাতারে, কখনোবা পেয়েছেন বর্তমান পৃথিবীর সেরা ফুটবলারের খেতাব।

সর্বকালের সেরা

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফুটবলার, বিশেষজ্ঞই মেসিকে সর্বকালের সেরা হিসেবে অভিহিত করেছেন। মেসির ভক্ত সমর্থকদের মাঝেও অনেকেই তাকে সর্বকালের সেরা হিসেবে মনে করে থাকেন। যদিও অনেকেই আবার এই মতটির সাথে একমত হবেন না। চলুন দেখে নেয়া যাক মেসিকে সর্বকালের সেরা হিসেবে দেখা কয়েকজন ফুটবলার এবং বিশেষজ্ঞদের উক্তি।

  • আদ্রিয়ানো গ্যালিয়ানি। এসি মিলান ফুটবল ক্লাবের প্রধান  তিনি বলে”আমি পেলে এবং ম্যারাডোনা দুজনকেই খেলতে দেখেছি। তবে মেসি তাদের চেয়ে সেরা। মেসি সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়।”
  • ব্রাজিলিয়ান সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ডেভিড লুইজ বলেন,”খেলার মাঠে দক্ষতায় পার্থক্য গড়ে দেয়। আর মেসি অসাধারণ দক্ষ। সে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়।”
  • ক্যামেরুনের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার অ্যালেক্স সং এর মতে,”লিওনেল মেসি? ওহ! আমি মনে করে সে অসাধারণ। সে আমার জীবনকালে দেখা সেরা খেলোয়াড়।”

গ্যারি আর্মস্ট্রং। সাবেক এই ইংলিশ ফুটবলার বিভিন্ন সময়ে মিশেল প্লাতিনি, ম্যারাডোনা, ক্রুয়েফ, জর্জ বেস্টদের মতো মহানায়কদের সাথে খেলেছেন। স্বয়ং তিনি মেসিকে তাদের চেয়ে এগিয়ে রাখলেন। তিনি বলেন,

“আমি প্লাতিনি, ম্যারাডোনা, ক্রুয়েফদের মতো ফুটবলারদের বিপক্ষে খেলেছি। আমি জর্জ বেস্টের সাথে একই দলে ফুটবল খেলেছি। অনেক বড় বড় নাম এগুলো। কিন্তু তারা কেউই সেটা করতে সমর্থ হননি যা মেসি করে দেখিয়েছে। ২ বছর আগেও আমি বলেছিলাম, সেরা খেলোয়াড় যার বিপক্ষে আমি খেলেছি তিনি হলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আর সেরা খেলোয়াড় যার সাথে একই দলে আমি খেলেছি তিনি হলেন জর্জ বেস্ট। কিন্তু আমি এখন এ কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, আমি কখনোই মেসির মতো সেরা খেলোয়াড় দেখিনি। সে নিজের মাত্রায় নিজেই অনন্য।”

বর্তমান ক্রোয়েশিয়ান এবং বার্সেলোনা মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ তো স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন,

“বার বার এ কথাটি বলার প্রয়োজন নেই যে, মেসি পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়। সে তো সর্বকালের সেরা। আমি তার সাথে ট্রেনিং করতে খুবই উপভোগ করি। সে সবকিছুকে অনেক সহজ করে দেয়।”

  • স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ডেভিড সিলভা বলেন, “যদিও আমি আগের অনেক সেরা ফুটবলারদের খেলা দেখিনি, তারপরও আমার কাছে মেসিই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়।”
  • আর্জেন্টাইন সেন্টার ব্যাক ফ্যাব্রিসিও কলোচিনির মতে,”মেসি এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়। তার মতো আর কেউই নেই।”

সাবেক ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার ও কোচ জোসেপ সিমুনিক মেসির খেলা দেখে বলেন,

“মেসি পরিষ্কারভাবেই শেষ ৫ থেকে ৬ বছরের সেরা খেলোয়াড়। আসলে সে তো সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। সে যদি সুস্থ থাকে তাহলে সে আরও ৫ থেকে ৬ বছর খেলবে। সে এ মুহূর্তে যা করছে তা অবিশ্বাস্য! এটা ঠিক যে সে দলে শুধু একা খেলে না, কিন্তু তারপরও সে অসাধারণ। সে খেলার মাঝে সবসময় একটি রাস্তা বের করে আর সবার চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে থাকে। তোমার দলে যদি মেসির মতো খেলোয়াড় থাকে, তাহলে তোমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই”

  • ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার ওয়েইন রুনি মেসির সম্বন্ধে বলেন,”মেসি একটি কৌতুক। আর আমার কাছে সর্বকালের সেরা।”

আর্সেনালের কিংবদন্তী কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, এ বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় কে? তখন তিনি অকপটে উত্তর দেন, লিওনেল মেসি। এর পরের প্রশ্নেই তাকে যখন আবার জিজ্ঞাসা করা হয় সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় কে? তখন তিনি মুচকি হেসে আবার বলেন, মেসি।

  • সাবেক স্পেন, রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা খেলোয়াড় লুইস এনরিকে বলেন, “নিঃসন্দেহে মেসি এ পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড় আর আমার কাছে সর্বকালের সেরা।”

সাবেক ইংল্যান্ড এবং বর্তমান চেলসি খেলোয়াড় জন টেরি বলেন,

“মেসিকে খেলতে দেখা অনেকটা জাদু দেখার মতো। লিওনেল মেসি মোটামুটি পরিষ্কারভাবেই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। আনন্দদায়ক ব্যাপার হলো, আমি তার বিপক্ষে খেলেছি এবং আমি যখন আমার ক্যারিয়ার শেষ করবো আমি পিছনে ফিরে তাকাবো এবং এটা ভেবে আনন্দ পাবো যে আমি সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলেছি।”

সাবেক ইংল্যান্ড ফুটবল তারকা এবং ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্যারি লিনেকারের মতে,

“মেসি একজন জিনিয়াস। সে খুব স্পষ্টভাবেই আমার জীবনকালে দেখা খেলোয়াড়দের মাঝে সর্বকালের সেরা। আসলে পেলেকে সত্যিকার অর্থে দেখিনি। সউনেস, গুলিট, ভেনাবলস আর এখন রুনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, মেসি তাদের দেখা সেরা খেলোয়াড়। সে এমনভাবে খেলে যার সাথে আমরা মোটেও পরিচিত নয়।”

  • বর্তমান স্পেন এবং বার্সেলোনা তারকা জেরার্ড পিকে বলেন, “মেসির সাথে একই সময়ে জন্ম নেয়াটা খুবই ভাল লাগার একটি বিষয়। আমি বিশ্বাস করি, সে খেলাধুলার ইতিহাসে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়।”
  • জার্মান ফুটবলার ম্যারিও গোমেজ লিওনেল মেসি সম্বন্ধে বলেন, “আমি এতটা পাগল নই যে, নিজেকে মেসির সাথে তুলনা করবো। কারণ সে সর্বকালের সেরা ছিল এবং ভবিষ্যতেও সর্বকালের সেরা থাকবে।”
  • সাবেক ইংল্যান্ড, রিয়াল মাদ্রিদ, লিভারপুল এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা মাইকেল ওয়েন বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না মেসির পূর্বের কোনো খেলোয়াড় মেসির মতো ফুটবল খেলতে পারতো।”
  • সাবেক বার্সেলোনা এবং চেলসি ফুটবলার আলবার্ট ফেরেরের মত প্রকাশ করে বলেন, “আমি রোমারিও, রিভালদো, রোনালদো (ফেনোমেনন), লড্রাপ, স্টইকোভের সাথে খেলেছি, কিন্তু আমার দেখা সেরা খেলোয়াড় মেসি।”
  • এমনকি অবিসংবাদিতভাবে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়, ৩ বারের বিশ্বকাপজয়ী শতাব্দীর সেরা ফুটবলার পেলে নিজেও মেসিকে তারসম পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি মেসিকে অনেক পছন্দ করি। সে একজন অসাধারণ খেলোয়াড়। সত্যি বলতে, আমরা দুজন একই স্তরের খেলোয়াড়।”
  • সাবেক ইতালী এবং জুভেন্টাস তারকা আন্দ্রে পিরলো বলেন, “মেসি অনেক কিছুই অর্জন করেছে। এবং আমি নিশ্চিত যে, সে আরো অনেক কিছুই অর্জন করবে। সবাই জানে, সে ইতোমধ্যেই সর্বকালের সেরাদের একজন।”

·         মেসি-ম্যারাডোনা তুলনা

  • ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী, ফিফার শতাব্দীর সেরা এবং মেসিরই স্বদেশী ম্যারাডোনাকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় বলা হয়ে থাকে। তবে স্বদেশী হওয়ায় মেসি আর ম্যারাডোনার তুলনা প্রায়শই চলে আসে। কখনও বা কেউ মেসিকে ম্যারাডোনার সমকক্ষ ধরেন, কেউবা তার চেয়েও সেরা মনে করেন।
  • বায়ার্ন মিউনিখ, সাবেক বার্সেলোনা এবং স্পেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় থিয়াগো আলকানাতারার বলেন,
  • “আমরা তাকে বল দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি আর দেখি। মানুষজন প্রায় আমাকে বলে তারা পেলে আর ম্যারাডোনাকে খেলতে দেখেছে। ভবিষ্যতে আমিও বলবো আমি মেসিকে খেলতে দেখেছি।”
  • ম্যারাডোনার সাথে একসাথে খেলা সাবেক আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় এবং বর্তমান অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ কোচ ডিয়েগো সিমিওনে বলেন, “ডিয়েগো ম্যারাডোনা আমাদের আবেগে ভাসিয়েছেন সত্যি। কিন্তু কোনো রকম সন্দেহ ছাড়াই মেসি ম্যারাডোনার চেয়ে সেরা খেলোয়াড়।”
  • ডিয়েগো ম্যারাডোনা তো নিজেই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে তার আসনটি মেসিকে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
  • “আমি সেই খেলোয়াড়কে দেখে ফেলেছি যে আর্জেন্টিনা ফুটবলে আমার আসনটি নেবে এবং সেই খেলোয়াড়ের নাম মেসি। মেসি অসাধারণ এক প্রতিভা।”
  • ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী ফরোওয়ার্ড টোস্টটাও এর মতে,
  • “মেসি ম্যারাডোনার চেয়ে সেরা খেলোয়াড়। সে আরো স্বয়ংসম্পূর্ণ, আরো ধারাবাহিক এবং আরো দর্শনীয়। সে খেলাটিকে নতুন করে আবিষ্কার করেছে, সত্যিকার এবং কল্পনার জগতের এক অদ্ভুত মিশ্রণে।”
  • এসি মিলান এবং ইতালী জাতীয় দলের খেলোয়াড়, সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার পাওলো মালদিনি বলেন,
  • “আমি মনে করি মেসি ম্যারাডোনার স্তরে শুধু পৌঁছায়নি, তাকে অতিক্রম করে চলে গেছে। সে খুব দ্রুতগতিতে অসাধারণ কিছু করতে পারে, যা পাগলামী বাদে আর কিছুই নয়।”
  • সাবেক বায়ার্ন এবং জার্মান বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড় ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার বলেছিলেন,
  • “মেসি অত্যন্ত মেধাবী। সে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমি যখন তাকে দেখি তখন এমন একজন খেলোয়াড়কে দেখি যে অত্যন্ত দক্ষ, অত্যন্ত বুদ্ধিমান। মেসির বাম পা’টা ঠিক যেন ডিয়েগো ম্যারাডোনার মতো”
  • বর্তমান স্পেন এবং বার্সেলোনা তারকা জেরার্ড পিকের মতে,
  • “লিও অন্য গ্রহ থেকে এসেছে। অন্য খেলোয়াড়দের জীবনে উত্থান পতন আছে, যেমনঃ ম্যারাডোনা। মেসি বার্সেলোনায় যা, ম্যারাডোনা এখানে তার অর্ধেকও ছিলেন না। এসবই তাকে সেরা বানিয়েছে। মেসির ক্যারিয়ারে এতগুলো ভালো বছর আছে যে, সর্বকালের সেরা বিবেচিত হওয়াটা তার প্রাপ্যের মাঝে পড়ে।”
  • সাবেক আর্জেন্টাইন তারকা পাবলো আইমার তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন,
  • “বছরের পর বছর ধরে আমি চিন্তা করেছি যে, ম্যারাডোনার মতো আর কোনো খেলোয়াড় কখনোই আসবে না। কিন্তু এখন মেসি ম্যারাডোনার স্তরে।”
  • সাবেক স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মার্শাল পিনা বলেন,
  • “মেসি আমার জীবনকালে দেখা সেরা খেলোয়াড়। ম্যারাডোনা এবং ইয়োহান ক্রুয়েফের সমন্বয় করলে যেমন খেলোয়াড় হবে মেসি তার চেয়েও সেরা।”

·         তাদের দেখা সেরা খেলোয়াড়

  • আবার ফুটবলবোদ্ধাদের অনেকেই হয়ত মেসিকে সরাসরি সর্বকালের সেরা বলেননি আগের খেলোয়াড়দের খেলা না দেখার কারণে। তবে ঠিকই এটা মেনে নিয়েছেন যে, মেসিই তার দেখা খেলোয়াড়দের মাঝে সবচেয়ে সেরা।
  • যেমন, সাবেক আইরিশ এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবলার রয় কেনের ভাষ্যমতে,
  • “আমি ম্যারাডোনার অনেক বড় ভক্ত হিসেবে বড় হয়েছি। বর্তমানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও ভালো খেলে। কিন্তু মেসিই আমার দেখা সেরা খেলোয়াড়। আমি সহজে কারো প্রশংসা করি না। কিন্তু মেসি এই প্রশংসা আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। আমি তার খেলার মাঝে তার দুর্বলতাগুলোকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি তার কোনো দুর্বলতাই খুঁজে পাইনি।”
  • সাবেক বার্সেলোনা গোলকিপার ভিক্টোর ভালদেস বলেন, “আমার কাছে মেসিই সেরা। সে সেরা, আর সবসময় সেরাই থাকবে।”
  • আমেরিকার জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সিধারী বাস্কেটবল খেলোয়াড় কোব ব্রায়ান্ট জানান,
  • “আমি আমার আমেরিকা জাতীয় দলে ১০ নম্বর জার্সি পরিধান করি আমার দেখা সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় মেসির প্রতি সম্মান দেখিয়ে।”

সাবেক বার্সেলোনা অধিনায়ক এবং স্পেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় কার্লোস পুয়োল বলেন,

“এই বার্সা মেসির বার্সা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি আমার জীবনে যা দেখেছি তার চেয়ে সে অনেক, অনেক উপরে। সে প্রকৃতপক্ষেই একজন এলিয়েন।”

বার্সেলোনা এবং তুরস্কের ফুটবলার আর্দা তুরানের মতে,

“আমি ফুটবল মাঠে লিও মেসির মতো আর কাউকে কখনোই দেখিনি। সে ঈশ্বর প্রদত্ত এক বিস্ময়। সে যখন মাঠে নিজের কাজ করে সেটা আমি খুব পছন্দ করি। আমি ঈর্ষা অনুভব করি না, বরং ভালো অনুভব করি। বিশেষ করে যখন সে কাউকে নাটমেগ (দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে বল নিয়ে যাওয়া) করে।”

বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়াড়

প্রতিটি যুগেরই কয়েকজন সেরা খেলোয়াড় থাকে। পুসকাস, পেলে, গ্যারিঞ্চা, ম্যারাডোনা, ইউসেবিও, ক্রুয়েফ, প্লাতিনি ছিলেন তাদের সময়ের সেরা খেলোয়াড়। আবার বর্তমানে যেমন মেসি, রোনালদো এ সময়ের সেরা খেলোয়াড়। এবার চলুন দেখে নেয়া যাক কোন ফুটবলার, কোচ বা বিশেষজ্ঞরা মেসিকে এ সময়ের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনে করে থাকেন।

  • মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা একমাত্র খেলোয়াড় ম্যারিও গোটজে বলেন, “মেসি অন্য স্তরের খেলোয়াড়। সে তার স্তর অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছে। অন্য কারো পক্ষে সেই স্তরে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব।”
  • ইতালীর বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপার বুফনের মতে, “মেসির মতো খেলোয়াড়রা এক প্রজন্মে একবারই আসে। এটা প্রায় অসম্ভব যে, মেসি যা করছে তা ভবিষ্যতে কোনো মানুষ পুনরাবৃত্তি করতে পারবে”

ডেনমার্কের ফুটবলার নিকোলাস বেন্ডটনার বলেন,

“আমার কাছে এই মূহুর্তে মেসিই পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়। সে খেলাটিকে অসাধারণভাবে বোঝে এবং সে যা করতে পারে সত্যিকার অর্থেই পাগলামি। সে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আর অসম্ভব গতিতে যা করতে পারে তা সত্যিই অসাধারণ। আমি তাকে সেরা ভাবি সে কত গোল করল তা দেখে নয়, যদিও তার গোলের সংখ্যাও বিস্ময়কর। কিন্তু সত্য হল সে তার দলের জন্য অনেক কিছু করতে পারে, যা তার অনেক অনেক গুণের একটি। সে খুব সহজ কথায় সেরাদের সেরা।”

  • সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ এবং স্পেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় সিসার সানচেজের মতে, “মেসি সেরা। মেসির সাথে কারোই তুলনা হতে পারে না। কোনো কিছুর সাথেই তার তুলনা করা চলে না।”
  • বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় নেইমার তো সরাসরিই বলেছেন, “আমি সবসময়ই বলেছি, মেসিই এ পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়।”
  • মেসির সাবেক বার্সা সতীর্থ এবং স্প্যানিশ ফুটবলার জাভি হার্নান্দেজ বলেন, “এটি পরিষ্কার যে মেসি অন্য সবার চেয়ে এক স্তর উপরের খেলোয়াড়। যারা এটা দেখতে পায় না তারা আসলেই অন্ধ।”
  • বায়ার্ন মিউনিখ এবং  ফ্রান্সের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ফ্রাঙ্ক রিবেরীর মতে, “মেসি নিজেই একটি ক্লাস। সবার সেরা মেসি, আর বাকিরা তার পরে। সে যেটা করে দেখায় সেটা অসাধারণ। সে আসলেই সম্মানের যোগ্য।”

সুইডিশ এবং বর্তমান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খেলোয়াড় ইব্রাহিমোভিচ সবসময়ই বিভিন্ন মুখরোচক কথাবার্তা বলে আলোচনায় থাকেন। বেশিরভাগ সময় নিজেকে নিয়ে গর্ব করা ইব্রাহিমোভিচও মেনে নিয়েছেন মেসির শ্রেষ্ঠত্ব। তিনি বলেন,

“কে সেরা- মেসি নাকি ইব্রাহিমোভিচ? মেসি শেষ কয়েক বছরে যা করে দেখিয়েছে এরপর এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক নেই।”

আরেকবার তিনি বলেছিলেন,

“মেসির ডান পায়ের কোনো দরকার নেই। সে শুধু তার বাম পা’টি ব্যবহার করলেও সে পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়। কল্পনা করুন, সে যদি তার ডান পা’টিও সেভাবে ব্যবহার করত! তাহলে আমরা বিশাল এক সমস্যায় পড়ে যেতাম।”

ফ্রান্স জাতীয় দল এবং ম্যানচেস্টার সিটি খেলোয়াড় বাকারি সাগনার মতে, “মেসি বিশ্বসেরা। ফুটবল খেলাটা দেখতে অনেক সহজ লাগে যখন মেসি খেলে।”

এলিয়েন মেসি

আবার মেসির খেলা অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞকে এতটাই বিমোহিত করেছে যে, তারা তো তাকে এই গ্রহের প্রাণী হিসেবে মেনে নিতেই নারাজ। কেউ এলিয়েন আবার কেউ রবোট হিসেবে অভিহিত করে থাকেন মেসিকে।

  • স্পেন এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলা আন্দের হেরেরা বলেন, “মেসি মানুষ কিনা আমি নিশ্চিত নই।”
  • মেসির সাবেক বার্সা সতীর্থ এবং স্প্যানিশ ফুটবলার জাভি হার্নান্দেজ বলেন, “যদিও মেসি মানুষ না-ও হতে পারে, কিন্তু এটা ভাল যে, মেসি নিজে এখনও নিজেকে মানুষই ভাবে।”
  • সাবেক আইরিশ এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবলার রয় কেন বলেন, “সবাই বলে ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান। কিন্তু মেসিকে দেখলে এ কথাগুলোর সত্যতা নিয়ে আপনি সংশয়ে পড়ে যাবেন।”
  • ১৯৮৬ সালের আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ম্যানেজার কার্লোস বিলার্দো বলেন, “মেসির কাছে ডাক্তারিবিদ্যা (অ্যাানাটমি) ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তার গোড়ালিতে নিশ্চয়ই একটি অতিরিক্ত হাড় আছে।”
  • ব্রাজিল এবং বর্তমান পিএসজি খেলোয়াড় দানি আলভেজ এর মতে, “মেসির ঐশ্বরিক উপহার আছে।”
  • সাবেক আর্জেন্টিনা এবং লিভারপুল খেলোয়াড় ম্যাক্সি রদ্রিগেজ বলেন, “কোনো সন্দেহ নেই যে, মেসি অন্য গ্যালাক্সি থেকে এসেছ। ধন্যবাদ লিও।”
  • ইব্রাহিমোভিচ আরো এক কাঠি সরেশ হয়ে বলেছিলেন, “মেসি এমনভাবে খেলে যেন সে প্লে স্টেশন গেমের ভেতরে আছে। এটা অবিশ্বাস্য! মানুষ যারা মেসিকে সেরা ভাবে না তারা হয় ফুটবল সম্বন্ধে কিছুই জানে না অথবা কান্ডজ্ঞানহীন।”
  • সাবেক স্পেন, রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা খেলোয়াড় লুইস এনরিকে জানান, “সত্যিকার অর্থে তাকে আমার মানুষ মনে হয় না।”
  • কলম্বিয়া এবং বর্তমান চেলসি খেলোয়াড় রাদামেল ফ্যালকাও সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, “মেসি কি সত্যিকারের কোনো খেলোয়াড়, নাকি প্লে স্টেশানের কোনো চরিত্র?”
  • বার্সেলোনা এবং তুরস্কের ফুটবলার আর্দা তুরান বলেন, “মেসি আর রোনালদোর মাঝে পৃথিবীর সেরা কে? আপনি যদি পৃথিবীর কথা বলেন, তাহলে আমি রোনালদোর কথা বলবো। কারণ মেসি অন্য গ্রহের খেলোয়াড়।”
  • সাবেক আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় কার্লোস তেভেজ বলেন, “মেসি অন্য গ্রহের খেলোয়াড়। সে মাঠের কেন্দ্রবিন্দু এবং পুরো বার্সা দলের মূল খেলোয়াড়।”

বার্সেলোনার মেসি

মেসির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি যতটা বার্সেলোনার ততটা আর্জেন্টিনার নন। তাই বার্সেলোনার জার্সি পড়ে খেলার জন্য বার্সার ইতিহাসে মেসি স্থায়ী হয়ে গেছেন। তাকে আর বার্সাকে ঘিরেও আছে কিছু উক্তি। চলুন এবার সেগুলো দেখে আসি।

বার্সার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্যান্ড্রো রসেলের মতে, “বার্সা মেসির মতো খেলোয়াড় আর কখনোই পাবে না। মেসির শ্রেষ্ঠত্ব মাঠ এবং মাঠের বাইরে দুই জায়গাতেই বিদ্যমান।”

বার্সেলোনার মেসি; Source: wallpaperswide.com

সাবেক ইতালী জাতীয় দলের খেলোয়াড়, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস, ইংল্যান্ড এবং রাশিয়া জাতীয় দলের সাবেক কোচ ফ্যাবিও ক্যাপেলো তরুণ মেসির খেলা দেখে বলেছিলেন,

“আমি আমার সারাজীবনে এত তরুণ অবস্থায় এত যোগ্যতা সম্পন্ন খেলোয়াড় এবং ব্যক্তিত্ব আগে কখনো দেখিনি । বিশেষ করে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবের জার্সি গায়ে জড়িয়ে।”

উচ্ছ্বসিত প্রশংসা

সাবেক বার্সেলোনা তারকা রিষ্টো স্টোইকোভ মেসির প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন,

“একসময় তারা বলতো মাঠে পিস্তল ছাড়া আমাকে আটকানো সম্ভব না। কিন্তু এখন মেসিকে আটকাতে গেলে আপনাকে মাঠে মেশিন গান নিয়ে নামতে হবে।”

বর্তমান ব্রাজিল এবং পিএসজি খেলোয়াড় ডেভিড সিলভা মেসির বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে জানান,

“যখন তুমি মেসির বিপক্ষে খেলবে, তোমাকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে যখন তোমার দিকে আসবে তোমাকে কপালে আর বুকের দুই পাশে আঙ্গুল ঠেকিয়ে ক্রসের সাইন আঁকতে হবে আর প্রার্থনা করতে হবে যাতে সবকিছু ঠিক থাকে।”

বর্তমান ব্রাজিল এবং পিএসজি উইঙ্গার লুকাস মৌরা বলেন, “মেসিই সবসময় আমার আদর্শ”

সাবেক ক্যামেরুন জাতীয় দলের লেজেন্ডারি খেলোয়াড় স্যামুয়েল ইতো বলেন,

“মেসি ঈশ্বর সমতুল্য। মানুষ হিসেবে তো বটেই, খেলোয়াড় হিসেবে আরো বেশি করে। আমি তাকে ছোট থেকেই চিনি এবং তাকে চোখের সামনে বড় হতে দেখেছি। সে যা অর্জন করেছে তার সবকিছুই তার প্রাপ্য ছিল।”

আরেকবার তিনি বলেন,

“লিও যা করে তা এতই অসাধারণ যে আমাকে মাঠে খুব সতর্ক থাকতে হয় যাতে আমি মাঠে হঠাতই দাঁড়িয়ে পড়ে বল নিয়ে লিওর কারুকাজগুলো দেখতে শুরু না করি।”

সাবেক পর্তুগাল, রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা তারকা লুইস ফিগোর মতে,

“আমার কাছে মেসিকে খেলতে দেখা আনন্দদায়ক। এটা অনেকটা যৌনতার চরম আনন্দের শেষ মুহুর্তের মতো। এটা চরম বা অসম্ভব আনন্দদায়ক।”

  • বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ব্রাজিল এবং বার্সেলোনা তারকা রোমারিওর  বলেন, “আমি আশা করি নিউটন আর আইনস্টাইনের মতোই মেসিও নিজেকে প্রতিদিন ছাড়িয়ে যাবে এবং আমাদেরকে তার সুন্দর ফুটবল উপহার দেয়া চালিয়ে যাবে।”
  • সাবেক বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ কোচ (পৃথিবীর ইতিহাসে এমন গৌরব শুধু একজনেরই আছে) র‍্যাডোমির আন্টিকের মতে, “মেসি হলো ফুটবলের মোজার্ট (সুর সম্রাট)।”

বর্তমান রিয়াল মাদ্রিদ কোচ এবং ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা জিনেদিন জিদানের মতে,

“মেসি সবসময় সামনে এগিয়ে যায়। সে কখনোই আশেপাশে বা পেছনে বল পাস করে না। তার শুধু একটাই লক্ষ্য, শুধু সামনে দৌড়ানো আর গোল দেয়া। সুতরাং, ফুটবলের ভক্ত হিসেবে শুধু তার প্রদর্শনী উপভোগ করুন।”

সাবেক বার্সেলোনা এবং আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ টাটা মার্টিনো বলেন,

“মেসি কোথায় কীভাবে পাস দিতে হবে তা এমনভাবে দেখতে পায় যা আপনি শুধু টিভিতে বসেই ঠিকঠাক কল্পনা করতে পারবেন। স্বাভাবিকভাবে মাঠে আপনি এভাবে কল্পনা করতে পারবেন না।”

ডাচ এবং বার্সা কিংবদন্তী, সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ইয়োহান ক্রুয়েফ মেসির সম্বন্ধে মতামত তুলে ধরে বলেন,

“পৃথিবীর জন্য মেসি একটি সম্পদ। কারণ সে সারা পৃথিবীর শিশুদের কাছে এক আদর্শ। মেসি ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি অর পাওয়া খেলোয়াড় হবে। আর তার সংখ্যা হবে পাঁচ, ছয়, সাত…। তার সাথে কারো তুলনা চলে না। সে অন্য স্তরের খেলোয়াড়।”

বর্তমান ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মেসিকে নিয়ে বলেছিলেন,

“মেসিকে নিয়ে লিখতে যেও না। তাকে বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করারও চেষ্টা করো না। তার খেলা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখ।”

সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ এবং স্পেন তারকা রাউল গঞ্জালেজ বলেন,

“আরেকদিন আমি তার এক ম্যাচ দেখছিলাম। সে বলের সাথে ১০০% গতিতে দৌড়াচ্ছিল। আমি জানি না কয়বার তার পা বল স্পর্শ করেছিল, হয়ত পাঁচ বা ছয়বার। কিন্তু বলটি তার পায়ে আঠার মতো লেগেছিল। এটা বাস্তবে অসম্ভব।”

ডাচ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এডগার ডেভিডসের মতে,

“মেসি ব্যতিক্রম। অন্যদের অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না মেসি কিছুটা খারাপ খেলা শুরু করছে।”

বর্তমান বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট জোসেপ বার্তামিউ বলেন, “মেসির কারণেই জীবনটা অনেক সুন্দর, অন্যরকম রঙ্গিন।”

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং মেসির তুলনা

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর লিওনেল মেসি নিঃসন্দেহে এই সময়ের সবচেয়ে সেরা ২ খেলোয়াড়। ২ জনই ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৫টি করে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের মাঝে তুলনাটাও চলে এসেছে বারবার। সেই তুলনার সময় অনেকেই মেসিকে ক্রিস্টিয়ানোর চেয়ে এগিয়ে রাখেন। চলুন এবার দেখে নেয়া যাক সেই উক্তিগুলো।

বর্তমান অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ কোচ ডিয়েগো সিমিওনে বলেন,

“আপনি ক্রিস্টিয়ানোর সাথে মেসির কোনোভাবেই তুলনা করতে পারেন না। মেসি একাই রোনালদো, বেল এবং বেঞ্জেমা এ জুটির চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর!”জুভেন্টাস এবং সাবেক ইতালীর ডিফেন্ডার জিওর্জিও চিয়েলিনি মেসিকে আটকানোর ফর্মুলা হিসেবে বলেন,

“আপনি কীভাবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে মার্ক করবেন? তাকে একা না ছাড়ার চেষ্টা করুন, তাকে তার ডান পায়ে শট নিতে দেবেন না। আর লিওনেল মেসি? তাকে আটকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। এক্ষেত্রে আমরা শুধু যিশু খিস্টের কাছে প্রার্থনাই করতে পারি।”

সাবেক ভিলারিয়াল কোচ মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল লটিনার মতে,

“সি আর সেভেনের সাথে মেসির তুলনা আসল ফুটবল বিষয়ক অজ্ঞতার এক চর্চা। মেসি মেসিই, অন্যরা শুধুই ফুটবলার।”

সাবেক ভিলারিয়াল কোচ গের্গে হাজি বলেন,

“মেসি নাকি ক্রিস্টিয়ানো? ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খুবই ভালো। কিন্তু আমি মেসিকে এগিয়ে রাখবো। সে অসাধারণ।

ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী কোচ ফেলিপ স্কোলারির ভাষ্যমতে, “রোনালদোর জীবনে সবচেয়ে বাজে বিষয় মেসি। মেসি যদি জন্ম না নিত তাহলে রোনালদো টানা পাঁচ বছর ব্যালন ডি অর জিততো।”

বর্তমান ডাচ এবং সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ স্ট্রাইকার জান হান্টেলার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “মেসি না রোনালদো কে সেরা? মেসি। রোনালদো ভাল, কিন্তু মেসি তার চেয়ে ১০ গুণ ভালো।”

স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ডেভিড সিলভা বলেন, “আমি মেসি এবং রোনালদো দু’জনকেই পছন্দ করি। তারা কিংবদন্তী খেলোয়াড়। তারাই ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর। কিন্তু তারপরও আমি মনে করি মেসি রোনালদোর চেয়ে সেরা।”

ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী তারকা রোনালদো বলেন,

“মেসিকে আমার ক্রিস্টিয়ানোর চেয়ে বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ লাগে। তা না হলেও অন্তত বেশি বিচক্ষণ লাগে। প্রয়োজনের সময় তার উদ্ভব হয় আর সে গোল করে।”

ফুটবলের রাজা পেলে বলেন,

“আমি লিওনেল মেসি এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দু’জনকেই অনেক পছন্দ করি। কিন্তু আমি মনে করি, তাদের মাঝে তুলনা সঠিক হয় না। মেসি শেষ প্রায় ১০ বছর ধরে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে আছে, আর সে খেলার মধ্যে বেশি প্রভাব রাখে। ক্রিস্টিয়ানো আমাকে ব্রাজিলীয়ান রোনালদোর কথা মনে করিয়ে দেয়। সে ভালো গোলস্কোরার। আর শেষ বছর আমি তার হাতে ব্যালন ডি’অর তুলে দিতে পেরে খুশি হয়েছি। কিন্তু তার বল পাসিং মেসির মতো ভালো নয়। আর সে খেলার মাঝে মেসির মতো প্রভাবও রাখতে পারে না।”

ফুটবল বিশেষজ্ঞদের এত এত মন্তব্য থেকে এ বিষয়টা তো নিশ্চিত যে, মেসি হারিয়ে যাওয়ার জন্য আসেননি, আর তিনি হারিয়ে যাবেনও না। তিনি যখন সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠে নিজের জাদুকরী পায়ের স্পর্শ রাখেন তখন তো সেই মাঠটাও ধন্য হয়ে যায়। নিজের বুকে ফুটবল দেবতার পা ধরে রাখার সৌভাগ্য কতজনারই বা হয়? লিওনেল মেসি তার সেই জাদুকরী পায়ের জাদু দিয়ে গোটা বিশ্বকে ইন্দ্রজালের মোহে মোহাবিষ্ট করে রাখুন অনন্তকাল। এমনটাই প্রত্যাশা। ধন্যবাদ লিও।