বিশ্বকাপ নিয়ে সকল উন্মাদনার সমাপ্তি আজ রাত ৯ টায়

স্পোর্টস ডেস্ক।। আজ   (রোববার) রাতে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে এক মাসের উন্মাদনার ইতি ঘটতে যাচ্ছে । বিশ্বকাপ ফাইনালে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় মুখোমুখি হবে দুই ইউরোপিয়ান দেশ ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্স এর আগে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে শিরোপে জিতেছে, ২০০৬ সালে হয়েছে রানার্সআপ। আর ক্রোয়েশিয়ার সোনালি প্রজন্ম প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলছে, শেষবার সেমিফাইনাল খেলেছিলো এই ফ্রান্সের সাথেই ১৯৯৮ সালে।

 

এক মাস আনন্দে ভাসিয়ে আজ পর্দা নামছে বিশ্বকাপ ফুটবলের। বাংলাদেশ ফুটবলে কোনোদিন বিশ্বকাপ খেলেনি। তাই বলে এদেশের মানুষের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনের শেষ নেই। বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই এদেশের আকাশে উড়তে থাকে  পছন্দের দলগুলোর পতাকা।এদেশের সমর্থকদের বড় অংশ প্রধানত আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে সমর্থন করে। সমর্থনের দিক থেকে এরপর আসে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, পর্তুগালের নাম। আমাদের দেশে সমর্থকরা শুধু যে নিজের পছন্দের দলের সমর্থনে গলা ফাটান তা নয়। ব্রাজিল সমর্থকরা নিজ দলের সমথর্ন করার পাশাপাশি, প্রধানত আর্জেন্টিনার বিরোধিতা করে থাকেন। আর্জেন্টিনার সমর্থকরাও একইভাবে ব্রাজিল বিরোধিতায় কম যান না। সেসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করার ক্ষেত্রেও সক্রিয় তারা।

 

 

এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা । বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব থেকে বাদ পড়েছে ইউরোপের দুই ফুটবল পরাশক্তি ইতালি ও নেদারল্যান্ড। প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়েছে গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। অনেক শঙ্কার পর প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকাতে পারলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় নিয়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। তাদের সঙ্গী হয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল।রাশিয়াও কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত চমক দেখিয়েছে। আর কোয়ার্টার ফাইনালে লুকাকু-হ্যাজার্ডের বেলজিয়ামের কাছে হেরেছে নেইমার-কোতিনহোর ব্রাজিল। তা্দের পথ ধরেছে সুয়ারেজ-কাভানির উরুগুয়ে। আবার প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া।ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বিদায় নিলেও ভক্ত-দর্শক-মিডিয়ার চোখ মেসি, নেইমারের দিকেও রয়েছে।

 

 

আগামী বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসিকে দেখা যাবে কিনা, নেইমার মাঠে সত্যিই কি বেশি ট্যাকেলের শিকার হয়েছেন, নাকি খেলার চেয়ে অভিনয় করে ফাউল আদায়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন, সাম্পাওলি ছাঁটাই হলে আর্জেন্টিনার পরবর্তী কোচ হচ্ছেন কে- এসব নিয়ে পত্রপত্রিকা, অফিস, চায়ের দোকান, আড্ডায় চলছে আলোচনা। তবে প্রিয় দলের বিদায়ে সমর্থকরা মনখারাপ করলেও রাশিয়া থেকে চোখ ফিরিয়ে নেননি। যাদের পছন্দের দল এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে তারাও যেমন ভালো খেলা দলকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন, তেমন আফসোস করছেন পছন্দের খেলোয়ারের দলের হেরে যাওয়া। আর যাদের কাছে দল নয় নান্দনিক ফুটবলই শেষ কথা তারা তো মুখিয়ে থাকছেন পছন্দের খেলোয়ারের ঝলসে ওঠা পায়ের জাদুর অপেক্ষায়।

 

যেমন সেমিফাইনাল থেকে বেলজিয়ামের বিদায়ে হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইনের খেলা দেখে কেউ কেউ আফসোসে বলে উঠেছেন, ইস! আবার গ্রিজম্যান, এমবাপ্পে, পগবার ফ্রান্সের জমাট রক্ষণ ও গতিময় কাউন্টার অ্যাটাক, অন্যদিকে রেবিচ, র‌্যাকিটিচ, মডরিচ, জোকোভিচদের গোছানো ফুটবল চোখে লেগে আছে কারও কারও। আজ ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে ভাগ হয়ে যাবেন বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকরা। ফাইনালে ম্যাচে পছন্দের দলের জয়ের আনন্দে হয়তো একটু আক্ষেপ মিশে থাকবে প্রিয় দলের বাদ পড়ার কথা মনে করে। তবে খেলায় একদল জিতবে একদল হারবে- এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু এই উল্লাস, আনন্দ, দুঃখ-আক্ষেপ মিলেমিশে জয় হবে ফুটবলের। এসবের মধ্যেই এদেশের ফুটবল দর্শকরা হয়তো একটা প্রশ্ন রেখে দেবেন মনে, ফুটবল বিশ্বকাপে এভাবে কবে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে উন্মাতাল হতে পারবে বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় ১৬ কোটি ব বাঙালী।

 

 

ই-বার্তা/সাইফ মুক্তাদির সোহেল