বিশ্বের ভাসমান সর্বোচ্চ মসজিদ

ই-বার্তা।। বিশ্বের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু। মসজিদের একমাত্র মিনারটির উচ্চতা ২১০ মিটার, যা প্রায় ৬০ তলা ভবনের সমান! মিনারটির চূড়ায় যে লেজার বিমটি আছে, সেটি থেকে সমুদ্র বরাবর কাবা ঘরের দিকে বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায়। বলা হচ্ছিলো মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত দ্বিতীয় হাসান মসজিদ (মাসজেদ আল-হাসান আল-থানি) হচ্ছে বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনার বিশিষ্ট মসজিদ।

১৯৯৩ সালে নির্মিত এই মসজিদটির মুসল্লি ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার। এর মিনারের চূড়ায় একটি লেজার বিম অবস্থিত, যা থেকে কাবা ঘরের দিক বরাবর সর্বদা একগুচ্ছ আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হতে থাকে।

এর অবস্থান মুসলিম বিশ্বের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে, ঠিক আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। মসজিদটির অংশবিশেষ সমুদ্রের পানিতে ভাসমান। পানির উপরে ভাসমান অংশের মেঝের কিছু স্থান কাঁচের তৈরি, যেখান থেকে মসজিদের নিচে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ার দৃশ্য সরাসরি উপভোগ করা যায়। তবে এই সুবিধাটি জনসাধারণের জন্ম উন্মুক্ত নয়, এটি শুধু রাজপরিবারের সদস্যরা এবং নির্বাচিত বিশেষ অতিথিরাই পেয়ে থাকেন।

হাসান আল-থানী মসজিদ কমপ্লেক্সটি ক্যাসাব্ল্যাঙ্কার সমুদ্রতীরে প্রায় ৯ হেক্টর জমির উপর অবস্থিত। মসজিদটির ভেতরে ২৫,০০০ এবং বাইরের চত্বরে আরও ৮০,০০০ মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। এতে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য পৃথক একটি বারান্দা আছে, যার ধারণ ক্ষমতা ৫,০০০।

মসজিদটির আয়তাকার কেন্দ্রীয় হল, যেখানে নামাজ পড়া হয়, সেটি একটি বিশালাকৃতির ভবন। এর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার, প্রস্থ ১০০ মিটার এবং ভূমি থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৬০ মিটার, যা প্রায় ১৭ তলার সমান। আয়তাকার হলের ছাদটি ৭৮টি বিশালাকৃতির স্তম্ভের উপর স্থাপিত। মসজিদের কেন্দ্রীয় হলের ছাদটি দুই পাশে সরে গিয়ে উন্মুক্ত হয়ে যেতে সক্ষম। ৩,৪০০ বর্গ মিটার আকারের এই ছাদটির ১,৭৫০ বর্গ মিটারই উন্মুক্ত হতে পারে। ১,১০০ টন ওজনের এই ছাদটি একটি মোটরের সহায়তায় খুলে যেতে সময় নেয় মাত্র পাঁচ মিনিট।

মসজিদ ছাড়াও এই বিশাল কমপ্লেক্সের মধ্যে আছে একটি মাদ্রাসা, হাম্মাম তথা গোসলখানা, মরক্কোর ইতিহাস সম্বলিত একটি জাদুঘর, একটি কনফারেন্স হল এবং একটি সুবিশাল লাইব্রেরি। শুধুমাত্র মাদ্রাসাটিই ৪,৮৪০ বর্গ মিটারের বিশাল ভূমির উপর অবস্থিত। ভূগর্ভস্থ এক তলা ছাড়াও আরও দুই তলা জুড়ে নির্মিত এই মাদ্রাসাটির আকার অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির। মাদ্রাসা, কনফারেন্স হল এবং লাইব্রেরির কক্ষগুলোতে অত্যাধুনিক অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রযুক্তির ব্যবস্থা আছে।

হাসান আল-থানি মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন মরোক্কার রাজা দ্বিতীয় হাসান। তার নামানুসারেই মসজিদটির এই নামকরণ করা হয়। ফরাসি স্থপতি মাইকেল পিনসিও -র নকশায় মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। প্রাথমিকভাবে ১৯৮৯ সালে রাজার ৬০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মসজিদটির উদ্বোধন করার লক্ষ্য থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে রাসূল (সা) এর জন্ম/মৃত্যু বার্ষিকীর দিন আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হয়।