বেনাপোল কাস্টস হাউসের নিরাপদ গোপনীয় ভোল্ট ভেঙে ২০ কেজি স্বর্ণ চুরি

ই- বার্তা।।   বেনাপোল কাস্টস হাউসের নিরাপদ গোপনীয় ভোল্ট ভেঙে ১৯ কেজি ৩শ ৮৫গ্রাম সোনা চুরি করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে ডলার ও টাকা পয়সা খোয়া যায়নি বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাত ১১ টায় বেনাপোল পোর্ট থানায় এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে কাস্টমস হাউস এর পক্ষ থেকে।

দুধর্ষ চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে বেনাপোল পোর্ট থানা সহ র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি এবং পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছে। সোমবার রাত ১০ টার দিকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী স্থানীয় সাংবাদিকদের ১৯ কেজি ৩শ ৮৫ গ্রাম সোনা চুরি যাওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন চুরি যাওয়া সোনার বাজার মূল্য ১০ কোটি টাকার বলে কাস্টমস সুত্র জানায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রুবার , শনিবার ও রোববার ঈদে মিলাদুন্নবীর সরকারি ছুটি থাকায় কেউ অফিসে ছিলেন না। সোমবার সকালে অফিস খুললে চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। সকালে ওই ভোল্টের তালা ভাঙা দেখে চুরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করেন কাস্টম কর্তৃপ¶। খবর পেয়ে কাস্টমের কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। তারপর ওই স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বাইরের কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ডিবি, সিআইডি, পিবিআই, র‌্যাব ও বেনাপোল পোর্ট থানার কর্মকর্তারা ওই ভোল্ট রুমে প্রবেশ করেন। সেখানে হাত-পায়ের ছাপ সহ আলামত সংগ্রহ করা হয়। আলামত সংগ্রহের সময় উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম, ডিএসবির এএসপি তৌহিদুল ইসলাম, ইনসপেক্টর সৈয়দ মামুন হোসেন, রেব জেলা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, আতিকুর রহমান, এআরও জিএম আশরাফ, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান প্রমুখ।

কাস্টমস হাউসের বেশ কিছু বহিরাগতরা (এনজিও)বিভিন্ন শাখায় অবৈধভাবে কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের মধ্যে ক্যাশ শাখার দায়িত্বে থাকা এনজিও টিপু এ ঘটনায় জড়িত বলে পুলিশ জানায়। টিপু বর্তমানে পুলিশী হেফাজতে রয়েছে বলে জানানো হয়। কাস্টম হাউসে সিসি ক্যামেরা দ্বারা সুরক্ষিত একটি সংরক্ষিত এলাকায় কীভাবে এধরনের দুধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সব মহলে।

কাস্টমস’র এর ডেপুটি কমিশনার এস এম শামীমুর রহমান জানান, পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় গোপনীয় একটি  তালা ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। সেই লোহার ভোল্ট ভেঙে ১৯ কেজি ৩শ ৮৫গ্রাম সোনা লুট করে নিয়ে যায় দূর্বৃওরা। ভোল্টে মূল্যবান আরো বিপুল পরিমাণ সোনা, ডলার ও টাকা থাকলেও শুধু মাত্র ১৯ কেজি ৩শ ৮৫ গ্রাম সোনা নিয়ে যায় তারা। ভোল্ট ভাঙ্গার আগেই দুর্বৃওরা সিসি ক্যামেরার সবগুলো সংযোগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ভোল্টে কাস্টম, কাস্টম শুল্ক গোয়েন্দা, বিজিবি ও পুলিশের উদ্ধার করা সোনা, ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, সহ মূল্যবান দলিলাদি ছিল।

বেনাপোল কাস্টমসে দুর্ধষ চুররি ঘটনায় উদ্বিগ্ন বেনাপোল কাস্টস হাউজের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী । তিনি জানান, কাস্টমসের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি, ভায়াগ্রা চক্রের অপতৎপরতা ও কাস্টমস কমিশনারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য একটি চক্র এ কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে। এ ঘটনায় যুগ্ম-কমিশনার শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। 

যশোর ডিএসবির (এএসপি) তৌহিদুর রহমান আনুষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিকদের জানান, শুক্র শনি অথবা রবিবার অফিস বন্ধ থাকায় এ তিন দিনের মধ্যে চোর চক্র এ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। এ চুরির ঘটনায় কাস্টমস হাউজের একজন ইন্সপেক্টর, একজন সিপাহীসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন ইন্সপেক্টর সাইফুল, সিপাহী পারভেজ, এনজিও কর্মি আজিবর, মহব্বত ও সুরত আলী,টিপু সুলতান,ও আলাউদ্দীন। কাস্টমস হাউজের উক্ত ভোল্টে জব্দকৃত ২৯ থেকে ৩০ কেজি  ও বৈদেশিক মুদ্রা, কষ্টিপাথরসহ মূল্যবান দলিলপত্র ছিল। কিন্তু চুরি হওয়ার পর আমরা প্রাথমিক তদন্তে সেখান থেকে শুধু মাত্র ১৯ কেজি ৩ শ” ৮৫ গ্রাম সোনা মিসিং পেয়েছি। অন্য কোন মালামাল চুরি হয়েছে কিনা সেটা অধিকতর তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের জানানো হবে। তিনদিন উক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। যে কারণে সিসি ফুটেজ দিয়ে চোর চক্রকে সনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে তদন্ত করে চোর চক্রকে ধরা হবে।

মোঃ জসীম উদ্দীন,বেনাপোল প্রতিনিধি: