মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় নিরাপত্তাহীনতায় গণকটুলি কলোনির পরিচ্ছন্নতাকর্মী

ই-বার্তা  ।।  মাদক ব্যবসায়ীর পরিবারের হামলার শিকার হয়ে গুরুতর অসুস্থ এক দলিত ব্যক্তির মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এখন ওই ব্যক্তি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছেন। হামলার শিকার পরিবারটি বলছে, থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তাকেই মাদক ব্যবসায়ী বলে পাল্টা দোষারোপ করেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।ভুক্তভোগী এই ব্যক্তির নাম নিখিল প্রসাদ। তিনি রাজধানীর হাজারীবাগের গণকটুলি সিটি কলোনির বাসিন্দা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তিনি হাজারীবাগ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন।

নিখিল প্রসাদের ছেলে ঋত্বিক প্রসাদ জানান, গত মঙ্গলবার বিকালে গণকটুলি সিটি কলোনির বাসিন্দা শাহজাহান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে। মাদক মামলায় তার এক বোন জেলেও রয়েছেন। পুলিশ শাহজাহানকে নিয়ে যাওয়ার পর নিখিল প্রসাদের ওপর হামলা করে বসে ২০-২৫ জনের একটি দল। এসময় নিখিল চাকরির দায়িত্ব পালনের জন্য পুরান ঢাকার ইসলামবাগে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন। শাহজাহানের পরিবারের ধারণা পুলিশকে তথ্য দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। এই পরিবারটি এর আগেও আমার বাবার ওপর হামলার চেষ্টা করেছে। তারা খুবই ডেঞ্জারাস পরিবার। একবার পুলিশকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। ওরা সবাই মাদক ব্যবসা করে সেই টাকার ভাগ অনেকেই পায়।ঘটনার খোঁজ নিতে গতকাল বুধবার বিকেলে গণকটুলি সিটি কলোনিতে যান এই প্রতিবেদক। এসময় প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের সঙ্গেই কথা হয়। তবে তারা আতঙ্কে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। কারণ এখানকার বাসিন্দা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ধারনা প্রবল। এমনকি হিন্দুদের বিভিন্ন গোত্র একে অপরকে ছোট করে দেখে। আমিরুদ্দিন নামে এক যুবকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মুসলমান হিন্দুদের ওসব বিষয়ে মাথা ঘামাই না। ওদের সমস্যা ওরা দেখে। আবার ডোমদের এক যুবক বলেন, নিখিল আমাদের জাতের না, তার ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেন, নিখিলের ওপর হামলায় অংশ নিয়েছিলেন, শাহজাহানের বোন নার্গিস, রুজি, ভাগ্নি শম্পা, শান্তা, ভাগ্নে শুভ, ছেলে বিপ্লব, বোনের জামাই শাহীন, আমিরসহ অনেকে। তাদের অনেকের নামে আলাদা আলাদা মাদক মামলা রয়েছে। এসময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন, নিখিলের বড় ভাই উকিল প্রসাদ, বড় বোন গীতা রাণী, স্ত্রী রমা রাণী প্রসাদ ও ভাগ্নে। হামলাকারীরা তাদের সবাইকে বেদম পিটিয়ে আহত করে। মাথায় গুরুতর আঘাত পান নিখিল প্রসাদ। পরে নিখিলের ছেলে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশ ডাকলে হাজারীবাগ থানার এএসআই সাজ্জাদুর রহমান গিয়ে তাদের উর্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে সাজ্জাদের উপস্থিতিতেও নিখিলের ওপর হামলা করেন শাহজাহানের বোন নার্মক । এ বিষয়ে এএসআই সাজ্জাদুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শাহজাহান ও নিখিল দুজনই মাদক বিক্রেতা। এখন শাহজাহানকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ায় তার পরিবারের সন্দেহ নিখিল এই তথ্য দিয়েছে। নিখিলের নামে কোনো মামলা বা অভিযোগ আছে কি-না এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি সাজ্জাদুর রহমান। তবে তিনি বলেন, গণকটুলির অনেকেই নিখিলের নামে কানাঘুষা করে, সে মদ বিক্রি করে।

নিখিল প্রসাদ অভিযোগ করেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি রাত দশটার দিকে হাজারীবাগ থানায় যান মামলা করতে। এসময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মোক্তারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে চান। ওসি তাকে বলেন, ‘আমার কাছে তথ্য আছে তুমিও একজন মাদক ব্যবসায়ী। মামলা নেওয়া যাবে না। তুমি যাও। তোমার নামেও মামলা হবে। নিখিল বলেন, আমি স্যারকে বললাম, একটা অন্তত অভিযোগ নেন। কিন্তু তিনি বললেন, কম্পিউটার নষ্ট এখন হবে না। পরে একটা লিখিত অভিযোগ নিয়েছে। তাতে হাজারীবাগ থানার কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর বা সিল নেই। মাদকে জড়িত থাকা প্রসঙ্গে নিখিল বলেন, র‍্যাব-পুলিশ প্রায়ই গণকটুলিতে রেড দেয়। তখন সবার ঘরে ঘরে সার্চ করে। আমার ঘরও করে। সবার ধারনা গণকটুলিতে মেথর থাকে তার মানে মাদক এখানেই থাকে। যদি আমি মাদক ব্যবসায়ী হতাম আমার নামে একটাও মামলা নেই কেন? শাহজাহানের লোকজন হুমকি দিচ্ছে সে বেরিয়ে এলে আমাকে মেরে ওরা জেল খাটবে। এখন আমাকে নিরাপত্তা দেবে কে? নিখিলের বিষয়ে সমাজকল্যাণ যুব সংঘ গণকটুলি সিটি কলোনির সভাপতি সুবল কুমার বলেন, যারা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করে তারা সবাই কমবেশি মাদকের সঙ্গে যুক্ত। নিখিলও হতে পারে। যদি সে অপরাধী হয় তাহলে পুলিশ তাকে ধরছে না কেন?

নিখিলের অভিযোগ অস্বীকার করে হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সে যা বলেছে সম্পুর্ণ মিথ্যা। সে ব্যান্ডেজ করা মাথা নিয়ে থানায় এসেছে, আমি বলেছি আগে বিশ্রাম নিতে, তারপর যেন আসে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে নিখিল নিজেও মাদক ব্যবসায়ী। তবে তার নামে থানায় কোনো অভিযোগ নেই বলে স্বীকার করেন ওসি মোক্তারুজ্জামান।

ই-বার্তা / এস.এম জাকারিয়া হোসেন