রফিকুলের দুর্নীতি-অনিয়ম, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

ই-বার্তা।।   আসছে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ‘দুর্নীতিবাজকে ভোট দিব না, সৎ, যোগ্য ও ভালো মানুষের নেতৃত্ব চাই।’ বরগুনা জেলার পাথরঘাটা এলাকাবাসীর মুখে এখন এমনই স্লোগান। উপজেলাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা পরিষদ আজ দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিশৃঙ্খলায় ও অনিয়মে জর্জরিত। এসব বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রিপনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

গত পাঁচ বছরে উপজেলার তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি বলেও জানান এলাকাবাসী। বর্তমান চেয়ারম্যানের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপকর্মে অতিষ্ট স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মী নিয়োগে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রিপন ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিজলী বালা মিত্রের বিরুদ্ধে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ ইতোমধ্যে বেশ ফলাও প্রকাশ করেছে দেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বয়ং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন সভাপতি ফাইজুর রহমান ফিরোজ, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রিপনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করে লিখিত অভিযোগ করে বলেন, নিয়োগের শর্ত অমান্য করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া, দুই সন্তানের অধিক সন্তান থাকা, ৩০ বছরের বেশি বয়সী ও একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে ঘুষের বিনিময় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ নিয়োগ বোর্ডের সকলে মিলে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন করেছেন।

এই অনিয়মের কারণে চাকরি বঞ্চিত শামসুন্নাহার, শিমু, তানজিলা, পারভিনসহ অসংখ্য ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকে জানান, যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাদের চাকরি হয়নি। অধিক বয়স হওয়া সত্বেও বিধি বহির্ভূতভাবে ঘুষের বিনিময়ে আসমা, শিউলী ও শারমিনসহ আরও কয়েকজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে তৎকালীন সময়ে নিয়োগ বোর্ডের আহ্বায়ক ও পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন গণমাধ্যমকে জানান, পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের থেকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি বা টাকা লেনদেন হয়নি। আমার বিরুদ্ধে অযথা মিথ্যাচার করা হচ্ছে।

এছাড়ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিজলী বালা মিত্র চেয়ারম্যনের সুরেই কথা বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রমাণ করতে পারলে মাথা পেতে নিব।

এদিকে গত পাঁচ বছরে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন ও উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এডিবির বরাদ্ধকৃত এক কোটি ৬৩ লাখ টাকার অনিয়ম অডিট আপত্তি জানিয়ে মাসিক উন্নয়ন ও সমন্নয় সভা বর্জন করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মাসিক উন্নয়ন ও সমন্নয় সভা বর্জন করা চেয়ারম্যানরা হলেন, উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন, পাথরঘাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন, রায়হানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, চরদুয়ানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান, কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আকন মোহাম্মদ সহিদ, কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন ও কাঠালতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম।

সভা বর্জনের বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন গণমাধ্যমকে বলেন, বিগত দিনগুলোতে মাসিক সভায় আমাদের কোন প্রকল্প জানতে দেওয়া হয়নি। এডিবির বরাদ্ধকৃত কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে সব সময় পাশ কাটিয়ে যান এবং অসদাচরণ করে, যার কারণে আমরা বাধ্য হয়ে সবা বর্জন করি।

এসব বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রিপন মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। নির্বাচন আসন্ন এসব বিষেয় নিয়ে এখন আমি খোলামেলা কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। কারণ এখন এসব বিষয়ে কথা বললে আমার নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সমস্যা হতে পারে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে আমি শতভাগ আশাবাদী। দলের মনোনয়ন পেলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে পূর্বের ন্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করব ইনশাল্লাহ।