রাশিয়ার কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক আসলে কত বড়?

ই-বার্তা ।।  ১৪০ জনেরও বেশি রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু এসব পদক্ষেপ রাশিয়ার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থিতিতে কি কোনো পার্থক্য তৈরি করবে? এমন প্রশ্নও উঠছে।

যদিও রাশিয়া তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে তারাও কূটনীতিক বহিষ্কারে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে নার্ভ এজেন্ট ব্যবহার করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্রিটেন রাশিয়াকে দায়ী করার পর অন্তত দুই ডজন দেশ থেকে রাশিয়ার কূটনীতিকদের বরখাস্ত করার ঘোষণা এসেছে।

বিশ্বব্যাপী অন্তত ২৪২টি স্থানে রাশিয়ার কূটনীতিকরা কাজ করেন। এর মধ্যে দূতাবাস রয়েছে ১৪৩টি আর কনস্যুলেট আছে আরও ৮৭টি জায়গায়। এর বাইরেও রয়েছে ১২টি কূটনৈতিক মিশন। সব মিলিয়ে ১৪৫ দেশে রাশিয়ার কূটনৈতিক উপস্থিতি রয়েছে।

আর কৌশলগত বলে বিবেচিত জায়গাগুলোতে রাশিয়া তার নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃতি করছে। এ ধরনের বিস্তৃত কূটনীতিক উপস্থিতি রয়েছে আর মাত্র তিন দেশের- যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ফ্রান্সের। তালিকায় সপ্তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্য।

গ্লোবাল ডিপ্লোম্যাসি ইনডেক্স অনুযায়ী এ তালিকায় রাশিয়ার স্থান চতুর্থ।

তবে যুক্তরাজ্যের ঘটনার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে কূটনৈতিক পদক্ষেপ চলছে, সেটিও সমসাময়িক কালের সবচেয়ে বড় সমন্বিত পদক্ষেপ।

যদিও এর মধ্যে প্রকৃত কূটনীতিকের সংখ্যা কম। কারণ অনেক জায়গায় স্থানীয়রাও মিশনগুলোতে কাজ করেন। যদিও রাশিয়া তাদের মিশনে স্থানীয় লোক কমই নিয়োগ দেয় নিরাপত্তাজনিত কারণেই।

ক্রিমিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ইস্যুকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় রাশিয়া নিজেই যুক্তরাষ্ট্রে থাকা রাশিয়ান মিশনগুলো থেকে ৭৫৫ জনকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ৭৪ হাজার ৪০০ কর্মীর মধ্যে ১৩ হাজার ৭০০ আছেন ফরেন সার্ভিসে এবং এর মধ্যে ৯ হাজার ৪০০ জন বিদেশে কর্মরত। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের বিদেশে কর্মরত কূটনীতিকের পদ আছে এক হাজার ৬০০। অন্যদিকে রাশিয়ার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মিশনেরই আছে তিনটি কনস্যুলেট আর ৫০ জন কর্মকর্তা।

এ ছাড়া আছে সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও তথ্য অফিস। আছে সামরিক প্রতিনিধিও। দেশটির সামরিক বাজেট চীনের অর্ধেক হলেও কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক প্রায় সমান।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেও একজন কেজিবি এজেন্ট ছিলেন। তবে কূটনৈতিক বহিষ্কারের পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা দুপক্ষের জন্যই সমস্যার হতে পারে।

কারণ রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য, বিশ্বের ১২তম বৃহৎ অর্থনীতি, তেল-গ্যাসের অন্যতম বড় উৎপাদনকারী। তাই অনেক দেশই মস্কোতে তাদের দূতদের মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকে।

সের্গেই স্ক্রিপালের ঘটনার যে তদন্ত চলছে তাতে রাশিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে কূটনৈতিক সংকট আরও তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা আছে।

তবে এতে করে বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার যে কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা উপস্থিতি তার ওপর সেটি কতটা প্রভাব ফেলে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

-খবর বিবিসি বাংলার।