রেজাউলের বেডরুম বাংলাদেশে আর রান্নাঘরটি ভারতে

ই-বার্তা ডেস্ক ।।  ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বহুপরিবার। বদলে যায় সেসব পরিবারের ঠিকানা। তবে রেজাউল মণ্ডলের জীবন কাহিনী একেবারেই আলাদা।  

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরেখা ভাগ করেছে তার বাড়ি। রেজাউল মণ্ডলের জন্ম ভারতে। ভারতের ভূমিতেই জন্ম হয়েছিল তার দাদা-পিতার। রেজাউল মণ্ডলের মতে, গ্রামের পরিবারদের মধ্যে তারা ছিলেন উচ্চবিত্ত। কিন্তু দেশ ভাগের কারণে বেশির ভাগ সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। মাত্র ১৬ বিঘা জমির মালিক তিনি।

এর অর্ধেক পড়েছে ভারতে। আর অর্ধেক বাংলাদেশে। দুই দেশেই খাজনা দিয়ে থাকেন তিনি। বাংলাদেশের জমি চাষাবাদ করে শস্য নিয়ে যান ভারতে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চেকআপের মুখোমুখি হতে হয় তাকে।

এখন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আচরণ রূঢ় হওয়ার কারণে নিজের জমির ফসল প্রায়ই দেশে ফেরত নিতে পারেন না রেজাউল। নিজের জমিতে মুক্তভাবে চলাচলেরও অধিকার নেই তার। সীমান্ত বেড়া অতিক্রম করতে তাকে নানা ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়। বাংলাদেশে প্রবেশের আগে তার ভোটার আইডি কার্ড জমা দিতে হয় বিএসএফ চেকপোস্টে।

উত্তর বয়রা গ্রামের অপর পাশে বাংলাদেশের গাঁদাদহারপুর গ্রাম। বাংলাদেশের যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার এ গ্রামের নথিপত্রেও বাসিন্দা হিসেবে রেজাউল মণ্ডলের নাম উল্লেখ রয়েছে।

খাজনা দেয়ার কারণেই বাসিন্দা হিসেবে তার ঠিকানা রয়েছে। রেজাউল মণ্ডল বাড়ির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, প্রতিটি জরিপেই তার বাড়ি বিভক্ত হয়েছে দু’টি দেশে। এ কারণে বর্তমানে তার বেডরুম বাংলাদেশে আর রান্নাঘরটি ভারতে।

আর ধান শুকানোর আঙিনা এবং গোয়ালঘর পড়েছে ভারতে। তাকে তার বাড়ির পুনর্নিমার্ণের অনুমতিও দেয়া হয় না। উত্তর বয়রা গ্রামে ৬০ পরিবারের বাস। কেবল মাত্র রেজাউল মণ্ডলের বাড়িটিই পড়েছে সীমান্তরেখার অধিকারে।

ভারত ও পাকিস্তানের অর্ধেক নাগরিক হিসেবে বসবাসের স্মৃতিও স্মরণ করেন রেজাউল মণ্ডল। রেজাউল মণ্ডল অর্ধেক বাংলাদেশি আর অর্ধেক ভারতীয়।

নিজের জীবন নিয়ে সুখী, জানান রেজাউল মণ্ডল। তার চার ছেলে ইয়ারুল, আমিরুল, হাবিবুর এবং হাফিজুর। দুই কন্যা মার্জিনা ও সেলিনা। ছোট ছেলে হাফিজুর পশ্চিমবঙ্গে পুলিশে যোগ দিয়েছেন। রেজাউল মণ্ডলের স্ত্রী আলেয়া মণ্ডল বলেন, আমরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবেই আছি। বাংলাদেশে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

ই-বার্তা /  তামান্না আলী প্রিয়া