লোভে ‘খুনির হাতে’ বিউটিকে তুলে দিয়েছিল বাবা!

ই-বার্তা ।। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আলোচিত কিশোরী বিউটি আক্তার হত্যার ঘটনায় নাটকীয় তথ্য বের হয়ে এসেছে। এ ঘটনার প্রধান আসামি বাবুল মিয়া নয়, স্কুলছাত্রী বিউটিকে হত্যা করেছেন তার পড়শী চাচা ময়না মিয়া। আর বাবা ছায়েদ আলী নিজেই মেয়েকে ‘খুনি’ ময়না মিয়ার হাতে তুলে দেয়ার কথা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছেন।

শনিবার (৭ এপ্রিল) হবিগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাবা ছায়েদ আলীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে নিজেই মেয়েকে ‘খুনি’ ময়না মিয়ার হাতে তুলে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

গতকাল একই আদালতে বিউটি হত্যায় নিজের দায় স্বীকার করেন ময়না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদালতের একাধিক নির্ভরযোগ্য কর্মকর্তা এই জবানবন্দি দেয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জবানবন্দিতে বিউটির বাবা বলেন, ‘হত্যার রাতে নিজেই নানাবাড়ি থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। ময়না তাকে কথা দিয়েছিলেন, ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রুবেল মিয়ার সঙ্গে তিনি বিয়ে দিয়ে দেবেন মেয়েটির। আবার বাবুলের বিরুদ্ধে যে ধর্ষণ মামলা করা হয়েছিল, সেটা মীসাংসা করতে কিছু টাকাও তিনি আদায় করে দেবেন। কিন্তু ময়না সে কাজ না করে বিউটিকে হত্যা করেন।’

ময়না মিয়ার এই কাজ করার পেছনে অন্য স্বার্থ জড়িত ছিল বলে জানিয়েছেন আদালতের একজন কর্মী। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাবুলের মা পাস করেন ময়নার স্ত্রীকে হারিয়ে। আর বিউটিকে হত্যা করে বাবুল ও তার মায়ের ওপর দায় চাপানো যাবে বলে ভেবেছিলেন ময়না। ময়না ভেবেছিলেন, এতে বাবুলের মা কলম চান বিবির ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যপদ চলে যাবে এবং আবার নির্বাচন হলে তার স্ত্রী পাস করবেন।

বিউটি আক্তারকে গত ২১ জানুয়ারি ধর্ষণের অভিযোগে ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে মামলা করেন কিশোরীটির বাবা ছায়েদ আলী। এতে সাক্ষী করা হয় ময়না মিয়াকে। এ ঘটনার পরই বিউটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় লাখাই উপজেলার গুণিপুর গ্রামে নানার বাড়িতে।

১৬ মার্চ রাতে সেখান থেকেও নিখোঁজ হয় বিউটি। পরদিন গুণিপুর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে হাওরে তার লাশ পাওয়া যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ।

এ ঘটনায় ১৮ মার্চ বিউটির বাবা ছায়েদ আলী, বাবুল মিয়া ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।

এরপর কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ৩০ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বাবুল মিয়াকেও।

হত্যার ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে।

শুক্রবার (৬ এপ্রিল) আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে এই হত্যায় তার দায়ও স্বীকার করেন ময়না মিয়া। আর মামলার প্রধান আসামি রুবেল মিয়া বিউটিকে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করলেও হত্যা করেননি বলে দাবি করেন।

এদিন নিহত বিউটির নানি ফাতেমা বেগম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন।