শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সরকারের যত সিদ্ধান্ত

ই-বার্তা ডেস্ক ।।  দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর। আর বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত খোলার সিদ্ধান্ত নিতে চলতি সপ্তাহে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া এখনই বিদ্যালয়ে আসবে না প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিতে ১৯ দফা গাইডলাইন প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দিতে আগেই গাইডলাইন প্রকাশ করেছে।

দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছিল, বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলেও প্রথমেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা হবে না।

রবিবার বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রত্যেক দিন বিদ্যালয়ে যাবে। এছাড়া অন্যান্য ক্লাস সপ্তাহে একদিন চলবে। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস হবে। তবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে যাবে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন বিদ্যালয়ে যাবে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শুরুর দিন (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। স্কুলে প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করাতে হবে। ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা খেলাধুলা চলবে, তবে স্কুলে আপাতত কোনও অ্যাসেম্বলি হবে না।’

দীপু মনি বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া কেউ শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতদের মাস্ক পরতে হবে। একেবারে কম বয়সী যারা, তাদের কোনও সংকট হচ্ছে কিনা, সেটা শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে।’

গত বছরের (২০২০) ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দফায় দফায় বাড়িয়ে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খোলার পর মাস্ক ছাড়া কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারবে না। আর সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে স্কুল-কলেজে প্রাত্যহিক সমাবেশ বা অ্যাসেম্বলি আপাতত করা হবে না।’ তিনি বলেন, সকাল বেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সমাবেশ হয়, সেই সমাবেশটি আপাতত হবে না, যতক্ষণ না স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে না পারি। কিন্তু শরীরচর্চা বা খেলাধুলা স্বল্প পরিসরে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চালু রাখা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন শিক্ষার্থীরা আসবে, যত ধরনের গাইডলাইন, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর যা যা আমরা হালনাগাদ করেছি, সেগুলোর ভিত্তিতে শিক্ষক, ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা সবাই তা নিশ্চিত করবেন। প্রতিদিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর তাপমাত্রা মাপা এবং তাদের অন্যান্য উপসর্গ আছে কিনা সেটি চেক করাতে হবে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্লাসরুমের মধ্যে যে বিষয়গুলো মানা দরকার— সকলের মাস্ক আছে কিনা? মাস্ক পরিধান করা ছাড়া কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকবে না। অভিভাবকদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে, তারা তাদের সন্তানদের মাস্কটি দিয়ে দেবেন। যেন শিক্ষার্থীরা মাস্কটি বাসা থেকেই পরে স্কুলে আসে। শিক্ষার্থীরা বাসায় ফিরে যাওয়া পর্যন্ত যেন মাস্ক পরে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অবশ্যই সকলের মাস্ক পরতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। খুব ছোট বা কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা খেয়াল রাখবেন, যাতে কারও অসুবিধা হয় কিনা। কোনও শিক্ষার্থীর মাস্কের কারণে অসুবিধা হয় কিনা, সেই বিষয়গুলো শিক্ষকরা অবশ্যই দেখবেন।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ভেতরে আসা-যাওয়ার জন্য সবাই যেন সারিবদ্ধভাবে ঢুকে তা নিশ্চিত করা হবে। হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করার জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থা করা আছে। শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে। কারও উপসর্গ থাকলে না আসাও নিশ্চিত করতে হবে।’

অক্টোবরের আগে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলতি সপ্তাহে ভিসিদের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ভিসিদের সঙ্গে কথা হয়েছিল যে, অন্তত পক্ষে সকল শিক্ষার্থী এক ডোজ টিকা নেওয়ার পরে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা। সেটির আলোকে মধ্য অক্টোবর ঠিক করা হয়েছিল। এখন যে পরিস্থিতি তাতে আমি আবারও এই সপ্তাহে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করবো— সেখানে অবস্থা আবারও পর্যবেক্ষণ করে যদি তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, অক্টোবরের আগেই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন।’

শিক্ষামন্ত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিদ্ধান্ত তাদের সিন্ডিকেট এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে, তাই এই সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে আবারও একটি বৈঠক করবো।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে আমরা একটি সভা করেছিলাম গত মাসের শেষে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল— বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ আবাসিক শিক্ষার্থীকে টিকা দিয়ে দিতে পেরেছি। যারা অনাবাসিক তাদেরও টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। যাদের এনআইডি আছে তাদের সমস্যা নেই। যাদের এনআইডি নেই তাদেরকেও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিকা না পাওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেওয়া যখন শুরু হয়েছে, তার মধ্যে যাদের এনআইডি আছে, তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে। তারা পাবলিক, প্রাইভেট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি সাত কলেজের সেটি দেখা হয়নি। কাজেই যে কোনও শিক্ষার্থীর বয়স যদি ১৮ বছরের ওপরে হয়, তার এনআইডি থাকলে এখনই তিনি রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। এখনই তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নিতে পারবেন। যার এনআইডি নেই তার জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

শিক্ষার্থীদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন করারসহ মোট ১৯ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অপরদিকে আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সব স্কুল-কলেজকে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর।