সেরা হয়েই ফাইনালে বাংলাদেশ

ই-বার্তা।।  ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। মাশরাফীর দল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করেছে লিগপর্বে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকাটাও।

ডাবলিনে শুরুতে ভিত গড়ে দেন বোলাররা। মোস্তাফিজের ছন্দে ফেরা ৪ উইকেট, মাশরাফীর ধারাবহিকতা রাখা ৩ উইকেট, মিরাজ-সাকিবের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ক্যারিবীয়দের দেয়া লক্ষ্যটা ২৪৮ রানে আটকে রাখার পর সৌম্যর ৫৪, মুশফিকের ৬৩ ও মিঠুনের ৪৩ রানে সহজেই টপকে যায় টাইগাররা।

ম্যালাহাইডে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৭ রান তুলেছিল উইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে ১৬ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে নোঙর ফেলে লাল-সবুজরা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে প্রথম দেখায় ৮ উইকেটের দাপুটে জয়ের পর দায়িত্বশীলতা আর আত্মবিশ্বাসের মিশেলে এলো আরেকটি জয়। আর তাতেই তাতে মিলল ফাইনালের টিকিট ও শীর্ষস্থান। স্বাগতিক আইরিশদের বিপক্ষে ভেসে যাওয়া ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছিল। তবে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুইয়ে দুই জয়ের পর বাংলাদেশের পয়েন্ট দাঁড়াল ১০। আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা উইন্ডিজের পয়েন্ট ৯, তাদের গ্রুপপর্বে আর ম্যাচ বাকি নেই।

সেখানে ২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থাকা আয়ারল্যান্ডের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে বুধবার নামবে বাংলাদেশ। ফাইনাল শুক্রবার।

রানতাড়ায় নেমে শুরুটা দারুণ করেছিলেন তামিম ও সৌম্য। উদ্বোধনীতেই তুলে ফেলেন ৫৪ রান। প্রথম ম্যাচের দেড়শ ছুঁইছুই জুটি এদিন আসেনি, তামিম বেরিয়ে মারতে যেয়ে বোল্ড হওয়ায়। নার্সের বলে লাইন মিস করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনার, ৪ চারে তাতে ২১ রানেই থামতে হয়।

সৌম্য পরে সাকিবকে সঙ্গী করে ৫২ রানের আরেকটি জুটি গড়েন। সেটিও বাড়েনি সাকিব সেই নার্সের বলেই ক্যাচ দিয়ে ফিরলে। ৩ চারে ২৯ রানের সম্ভাবনা ফেলে আসা ইনিংস এ বাঁহাতির।

আরেক বাঁহাতি সৌম্য ফিফটি তুলে নেন এরইমধ্যে। টানা দুই ফিফটি। পথে যেমন ছিল জায়গামত পাওয়া বলে পেটানো, তেমনি দায়িত্বশীলতার ছাপও। তার ইনিংসও বড় হয়নি। ৫৪ রানে আটকে যায় ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬৭ বলে সাজানো ইনিংস। সেই নার্সের বলেই ক্যাচ দিয়ে।

টপাটপ টপঅর্ডার পড়ে গেলেও বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। মুশফিক পরে হাল ধরেছেন মিঠুনকে সঙ্গী করে। সেটি আবার ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৩ রানের জুটিতে। ২টি করে চার-ছয়ে মিঠুন ৫৩ বলে ৪৩ করে ফিরলে বিচ্ছিন্ন হন দুজনে।

মুশফিকও শেষঅবধি থাকতে পারেননি। তবে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে আরেকটি জয় ছোঁয়া জুটি গড়েছেন, ঠিক ৫০ রানের। মাঠ ছাড়ার সময় তার নামের পাশে ঝলমলে ৬৩, ৫ চার ও এক ছক্কায় ৭৩ বলে খেলা।

মাহমুদউল্লাহ বাকি পথটুকু পার পরে এসেছেন। একটি করে চার-ছয়ে ৩০ রানে অপরাজিত থেকে। সঙ্গী সাব্বির কোনো বলই খেলতে পারেনসি!

এর আগে শুরু থেকে শেষঅবধি দারুণ বোলিংয়ের প্রদর্শনী জারি রাখে বাংলাদেশ। শাই হোপের ৮৭ ও জেসন হোল্ডারের ৬২ রানে লড়াই করার পুঁজি পায় ক্যারিবীয়রা।

আমব্রিসকে (২৩) ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছিলেন মাশরাফী। টাইগার অধিনায়ক পরে নেন আরও দুই উইকেট। শেষপর্যন্ত ১০ ওভারে ৬০ রান খরচায় তার ঝুলিতে ৩ উইকেট। উইন্ডিজের বিপক্ষে আগের ম্যাচেও নিয়েছিলেন তিন উইকেট।

গত ম্যাচের মতো মিরাজ ও সাকিব কম রান দেয়ার প্রদর্শনী জারি রাখেন এদিনও। মিরাজ ১০ ওভারে ৪১ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। সাকিবেরও উইকেট ১টি, ১০ ওভারে এক মেডেনে খরচ ২৭ রান।

এদিন টাইগারদের জন্য সুখকর হয়ে এসেছেন মোস্তাফিজ, চেনাছন্দে ফিরে। কয়েকটি ম্যাচে খরুচে বোলিং করে আলোচনায় ছিলেন, সেটি কাটিয়ে উঠেছেন, নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৯ ওভারে খরচ কেবল ৪৩ রান, আছে একটি মেডেনও।

উইন্ডিজের সেরা ইনিংসটি হোপের, ৬ চার ও এক ছক্কায় ১০৮ বলে ৮৭ রানের। বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা চতুর্থ সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন। মাশরাফী উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী করলে সেটি আর হয়নি।

২০১৮ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ১৪৬ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন শাই হোপ। সেই শুরু। পরের দুই দেখাতেও তুলে নেন শতক। সিলেটে অপরাজিত ১০৮, ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজে ১০৯, সোমবার সেখানেই খেললেন ৮৭ রানের আরেকটি ইনিংস।

হোল্ডার ৬২ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৭৬ বলে, ৩ চার ও এক ছয়ে। বাকিদের মধ্যে ব্রাভো ৬, চেজ ১৯, কার্টার ৩, অ্যালেন ৭ রানে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে দুটি ম্যাচ খেলার পর টাইগারদের বিপক্ষে মলিন সময়ই কাটল হোল্ডারের দলের।