হত্যার ছাত্ররাজনীতি চায় না কেউ

ই-বার্তা ডেস্ক।।  দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্ররাজনীতির নামে হত্যা–খুন, হানাহানি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, রাহাজানির ধারা চলে আসছে। তার প্রমাণ আবারও মিলেছে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার মধ্য দিয়ে।  

এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যে ধারায় চলছে, এমন অবস্থায় সুষ্ঠু ধারার ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির নামে যে ধ্বংসাত্মক ও রক্তাক্ত কর্মকাণ্ড চলছে, তা মানুষ আর নিতে পারছে না। বিশেষ করে, বুয়েটে আবরার হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে টর্চার সেল, র‍্যাগিং ও নানা অত্যাচার–নির্যাতনের যেসব খবর বেরিয়ে আসছে, তা শিউরে ওঠার মতো।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েট কর্তৃপক্ষ সেখানে ছাত্ররাজনীতি তথা দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুসরণ করুক—ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের অনেকেই তা চাইছেন। ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় রাজনীতি তথা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা যায় কি না, সেই আলোচনাও সামনে চলে এসেছে। 

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন বা অধ্যাদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলা নেই। কিন্তু ছাত্র সংসদ গঠনের কথা আছে। প্রতিটির আইনে শিক্ষকরাজনীতির বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও দলীয় সম্পৃক্ততার কথা বলা নেই। 

এদিকে অপৃতিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজ উদ্যোগে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। 

নিষিদ্ধ থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম চলছে। যদিও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমের সঙ্গে অঙ্গীকারনামায় বলা আছে, ছাত্ররাজনীতি ও ধূমপান করা যাবে না।

এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহিংস ঘটনার পর ২০০৮, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে। এসব নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়নি, তবে ছাত্ররাজনীতি চলছে। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকলেও তা নামে মাত্র। 

দেশে এখন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৯। এগুলোর প্রতিটির জন্য রয়েছে আলাদা আইন। তাতে ছাত্ররাজনীতির কথা নেই। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যেখানে ছাত্ররাজনীতি নেই, সেখানকার পরিবেশ তুলনামূলক শান্ত। এর মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া ও মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সেখানে দলাদলি বা খুনোখুনি নেই, ছাত্ররাজনীতিও নেই।

আইনে কিছু বলা না থাকলেও দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর) ছাত্ররাজনীতি আছে।

ই-বার্তা/সালাউদ্দিন সাজু