হস্তশিল্পের ব্যবসায় সামিমের পরিবারের সবাই কারুশিল্পী

ই-বার্তা ।।  তারিকুল হাসান ।। সামিমের পরিবারে স্ত্রী, মা, বাবা, ভাই, ভাবী সবাই কারুশিল্পী। ঘরের কাজের পাশাপাশি হস্ত শিল্পের কাজ করে তারা প্রতি মাসে আয় করছেন ৬ থেকে সাড়ে৭ হাজার টাকা। হাণ্ডি ক্রাফটের ব্যবসায় কাঁচামাল এবং কারিগরদের মজুরী চুকিয়ে মাসে ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আয় করছেন সামিম মোহাম্মাদ।

রাজধানির বকশীবাজার, উমেষ দত্তরোডে অবস্থিত মেহেক হস্তশিল্পের পরিচালক সামিম মোহাম্মাদ ২০১৩ সালে থেকে শুরু করেন হাণ্ডিক্রাফটের ব্যবসা। চারুকলা থেকে হস্তশিল্পের কাজ শিখে বিভিন্ন জায়গায় কারু শিল্পের কাজ করে জমানো ২০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করেন সামিম। ব্যবসায় প্রতিদিন ভাল লাভ হলেও নিজেদের পারিবারিক খরচ মিটিয়ে ৪ বছর শেষে ২লাখ টাকার বেশী জমাতে না পারলেও সুখে-শান্তিতে দিনাতিপাত করছেন তিনি।

বর্তমানে প্রচুর অর্ডার থাকলেও পূঁজির অভাবে বেশী কাঁচামাল কিনতে পারেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ব্যবসায় ১০ হাজার টাকার মাল বানালে, ৫ হাজার টাকার কাঁচামাল এবং ২ হাজার টাকার শিল্পীদের মজুরী দিয়ে ৩ হাজার টাকা লাভ থাকে। কিন্তু মূলধনের অভাবে ভালভাবে ব্যবসা করতে পারছিনা।”

মেহেক হস্তশিল্পের কারিগরেরা একদিন পরপর গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ পিস হস্তপন্য ডেলিভারি দিতে পারে। বারমাস ব্যবসা এক রকম থাকলেও বৈশাখে বেড়ে যায় এসব পন্যের চাহিদা।

সামিমের ভাবি কারুশিল্পী মোছাঃমুনমুন বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন,  “পরিবারের দেখাশুনা ও রান্নাবান্না করার পর ১৫ থেকে ১৬ টা হস্তপণ্যের কাজ করতে পারি। সব পণ্যের কাজের রেট একনা, কোনটা ১০ আবার কোনটা ১৫-২০ । সামিম ভাই কাজ শিখানোর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয়করি।”

মেহেক হস্তশিল্প থেকে গহনা, নকশী ও গ্লিটার ফুলদানি, থাইকলা গাছ, ঝুড়ি, আয়না, বাঁশের মোমবাতি, টেবিল ল্যাম্প, টিস্যু বক্স সহ বিভিন্ন হস্ত শিল্প সিলেট, চিটাগাং, যশোর এবং ঢাকার ব্যবসায়ীরা অর্ডারে, খুচরাও পাইকারি কিনে নিয়ে যান।

ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিমনা সামিম পারদর্শী হয়ে ওঠেন বাঁশি, দোতারা এবং তবলা বাজাতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে সাপ্তাহিক বাঁশি ও তবলা শেখান তিনি। সুযোগ পেলে বাইরের অনুষ্ঠানেও খেপমারেন জানিয়ে তিনি বলেন, “শখের জিনিস দিয়ে টাকা আসছে কিন্ত টাকা না থাকায় টাকার জিনিসে টাকা আসছেনা।”

বাংলদেশ মৃৎ শিল্প সমিতি, বিসিক, এবং বিভিন্ন জাওগায় ঘুরেও নিজের কারখানার ট্রেডলাইসেন্স করতে পারেননি সামিম।আর লাইসেন্স না থাকায় কোন ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাননি।স্থানীয় মহাজনদের কাছে ২০% সুদে  ৪০ হাজার টাকা ঋণ করেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে ১১০০ টাকা করে দিয়ে ১১ মাসে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করেছেন সামিম।