হাত-পা বিহীন আসিফ কনুই দিয়ে লিখে জিপিএ-৫

ই-বার্তা ডেস্ক ।। হাত-পা বিহীন মানুষ কেমন হয় আমরা সবাই জানি।তেমনি একজন হাত-পা বিহীন মানুষ আসিফ। অন্য যে কোনো দশটা ছেলের চেয়ে আলাদা। সবাই যখন মাঠে খেলে তখন ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে আসিফ।সফটওয়্যার প্রকৌশলী হওয়ার অদম্য ইচ্ছা প্রতিক্ষণ তাড়া করে ফেরে আসিফকে। আসিফ শুধু নিজেরই না, পুরো গ্রামের এক জলন্ত প্রতিভা।আসিফ তার অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শত প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে প্রমাণ করেছে, ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য আর পরিশ্রমের মাধ্যমে অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।

 

লক্ষ্যকে সামনে রেখে মেধাবি আসিফ একাগ্রতা আর প্রচেষ্টায় চলতি এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। হুইল চেয়ারে বসে দুই হাতের কনুই দিয়ে লিখেই সে এ ফলাফল অর্জন করে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া শহরের মালতীনগর পাইকাড়পাড়ায় নানা-নানী ও মামাদের কাছে বেড়ে ওঠে আসিফ করিম আলিফ। তার বাবা-মা ঢাকায় চাকরি করেন। আর তাই বগুড়ায় নানা বাড়িতে থাকে আসিফ।

 

প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ থেকে ঘন্টা করে পড়াশোনা করত আসিফ। তার নানা সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত, শহীদুর রহমান তাকে স্কুলে, প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে সহযোগিতা করেন। তার খাবার, গোসল এবং অন্যান্য কাজে নানি এবং মামারা তাকে সহযোগিতা করেন।

 

বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র আসিফ করিম আলিফ  জানান, সে কনুই দিয়ে লিখতে পারে। লিখতে তার কোন সমস্যা হয় না। বাবা-মা চাকরি করেন। নানার কাছে থেকে তিনি লেখাপড়া করে। নানা-নানী এবং মামারা তাকে সহযোগিতা করে। স্কুলের প্রতিটি বন্ধু নিয়মিত তার খোঁজ খবর নেয়। তার কাজে সহযোগিতা করে। সে স্বাভাবিক খাবার খেতে পারে।

 

আসিফ  জানায়, তার সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও তার কেবল দুই হাত ও পা নেই। না থাকার কোন কষ্ট নেই তার। হাত-পা না থাকলেও তার মামার সাথে ক্রিকেট খেলতে পারে সে। তার ইচ্ছে সে একদিন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবে।

 

বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু জানান, আসিফ করিম আলিফ বগুড়া শহরের মালতিনগরে অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ওই শ্রেণিতে মেধা তালিকায় বৃত্তিও পেয়েছে। পিএসসিতে সাফল্য পাওয়া ছেলেটি এই স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিও হয় মেধা তালিকায়। আমরা তার বিষয়ে কোন অতিরিক্ত কিছুই করিনি। কারণ সে নিজে থেকেই অনেক মেধাবী।

 

তিনি আরো জানান, বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আসিফ। তার কাছে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং কম্পিউটার বিষয়ক প্রশ্নগুলোর উত্তর খুব সহজেই পাওয়া যায়। স্কুলের পরিবেশে সে খুব দ্রুত মানিয়ে যায়। তার ক্লাশের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও তাকে খুব সহজে গ্রহণ করে। এছাড়া তাকে সব কাজেই ব্যাপক সহযোগিতা করে। শুধু শিক্ষার্থীরা নয় স্কুলের শিক্ষকবৃন্দও তাকে সহযোগিতা করেছে।

 

সে প্রতিদিন স্কুলে হুইল চেয়ারে করে আসত। পরীক্ষার ফলাফলের দিনেও সে হুইল চেয়ারে করে আসে। সে হুইল চেয়ার ছাড়া চলাচল করতে পারে না। তার হাতের কনুই পর্যন্ত এবং পায়ের উরুর উপরিভাগ রয়েছে। কিন্তু তাকে কেউ কখনই অবহেলা করেনি।

 

 

সুত্র/বিডি২৪লাইভ